সাংবিধানিকভাবে মেয়াদ শেষ ডাকসুর, ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা
সাংবিধানিকভাবে গত শনিবার (২০ জুন) শেষ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) বর্তমান কমিটির নির্ধারিত মেয়াদ। তবে ঠিক নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর এ কমিটি থাকবে কি না সেটা স্পষ্ট করেননি পদাধিকার বলে ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
গত বছরের ১১ মার্চ দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ দিনের চাওয়া ডাকসু নির্বাচন। নির্বাচনে ২৫ জন প্রতিনিধির মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত হন ২৩ জন। বাকি ভিপি পদ ও সমাজসেবা পদে নির্বাচিত হয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রের ৬-এর (গ) ধারায় বলা হয়েছে, সংসদে নির্বাচিত কার্যনির্বাহী পদাধিকারীরা ৩৬৫ দিনের জন্য কার্যালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন না করা যায়, তাহলে কার্যনির্বাহী পদাধিকারীরা অতিরিক্ত ৯০ দিন দায়িত্ব পালন করবেন। ওই ৯০ দিনের আগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ব পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া মাত্র পূর্বতন সংসদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেঙে যাবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্ধিত ৯০ দিন সময় পার হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই সংসদ ভেঙে যাবে।
গঠনতন্ত্রের হিসাব মতে, অতিরিক্ত ৯০ দিনসহ ডাকসুর মেয়াদ শেষ হয়েছে শনিবার। তবে দায়িত্ব ছাড়া না ছাড়া নিয়ে ভিপি, জিএস থেকে শুরু করে সবার মধ্যে দেখা গেছে ভিন্ন সুর। কেউ পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত পদে থাকার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। কেউ বা পদে থাকাকে অনৈতিক আখ্যা দিয়ে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আবার দুই পক্ষকেই ভুল বলছেন কেউ কেউ। এদিকে এক্ষেত্রে সাংবিধানিক রীতিনীতি অনুসৃত হবে বলে কৌশলে প্রতিনিধিদের দায়িত্ব ছাড়া-না ছাড়াকে এড়িয়ে গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বার্তা২৪.কমকে বলেন, ডাকসুর মেয়াদ ২৩ মার্চ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ১৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে আমরা আমাদের লিগ্যাল দায়িত্বটুকুও পালন করতে পারিনি। তাই বাকি দায়িত্ব আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর পালন করব।
নুর আরও বলেন, ছাত্র সংসদ থাকুক, এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চায় না। ছাত্র সংসদ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতা ক্ষুণ্ন হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার আদায় করতে পারে। চাপ প্রয়োগ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগামী নির্বাচন না দেয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাব।
জানতে চাইলে ডাকসুর সদ্য জিএস পদ থেকে পদত্যাগ করা গোলাম রাব্বানী বলেন, ডাকসুর বিষয়ে আমার বক্তব্য একদম স্পষ্ট। নির্ধারিত মেয়াদের অতিরিক্ত এক মিনিটও পদে থাকতে চাই না। আমাদের দাবি থাকবে, করোনা দুর্যোগকালীন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে যেহেতু আমাদের ৩৬৫ দিনের বৈধ মেয়াদের আগেই অর্থাৎ ১৮ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ, তাই আমাদের অসমাপ্ত কাজ, বিশেষ করে, মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নে সহায়তা এবং ডাকসুর শিক্ষার্থী সহায়তা ফান্ডে আমার ব্যক্তিগত কন্টিনজেন্সি ফান্ডের অর্থসহ ডাকসুর অব্যবহৃত বাজেটের টাকা হস্তান্তরের মাধ্যমে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীকে মানবিক সহায়তা দিতে চাই।
রাব্বানী আরও বলেন, আর অবশ্যই চাই, ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পরবর্তী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে সচল হওয়া ডাকসুকে আর অচল দেখতে চাই না।
এদিকে 'এজিএসের দায়িত্ব' থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সাদ্দাম হোসেনসহ বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি। তারা তাদের ফেসবুক আইডিতে সেটার জানান দিয়েছেন। জানতে চাইলে সাদ্দাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, সংবিধান যেভাবে বলেছে, আমরা সেটাই করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্বাচিত করেছে। এর বেশি সময় দায়িত্বে থাকা অগণতান্ত্রিক ও অনৈতিক। আমরা অগণতান্ত্রিকভাবে দায়িত্বে থাকতে চাই না। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সাথে সাথেই আমরা নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় নির্বাচনের দাবিতে আমরা মাঠে সোচ্চার হব।
ভিন্ন কথা বলেছেন 'গণরুম বন্ধু' নামে পরিচিত ডাকসু সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। তিনি বলেন, যেহেতু আমরা একটি আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। সেহেতু আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমেই এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে চাই। আগামী ডাকসু নির্বাচনের দায়িত্ব আমাদের। উপাচার্য সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু না বললে আমরা দায়িত্ব ছাড়তে পারি না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, এ ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের রীতিনীতি অনুসৃত হবে। ডাকসুর ওই যে নির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র আছে। গঠনতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট ধারা, সংশ্লিষ্ট রীতিনীতি এখানে অনুসৃত হবে। এটাইতো ডাকসুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
কমিটির মেয়াদ বাড়ানো কিংবা ডিজেবল করার ক্ষেত্রে আপনার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এ কমিটির মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই যে বললাম সংবিধানে যা উল্লেখ আছে সেটাই।
আগামী নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটার সাথে অনেক কিছু সংশ্লিষ্ট। আগাম কোনো কথা বলতে পারব না।