সংঘাত নয় সংলাপের মাধ্যমে মিয়ানমারের স্থিতিশীলতা আনতে হবে



ব্রিঃ জেঃ (অবঃ) হাসান মোঃ শামসুদ্দীন
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো মিয়ানমার। চলমান সেনাশাসনের অবসান ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষে বিক্ষোভকারীরা পথে নামে। অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-বিক্ষোভ শুরু করে দেশটির গণতন্ত্রকামী শক্তি ও সাধারণ জনগণ। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) গঠন করার পর তাঁদের সমর্থন করতে সারা দেশের গণতন্ত্রপন্থিদের সংগঠিত করে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) গঠন করা হয়। গণতন্ত্রকামীদের ওপর সামরিক বাহিনী যখন দমন পীড়ন শুরু করে, তখন তাদের অনেকে দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে তারা জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছে সহায়তা ও সামরিক প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করে। পিডিএফ মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং গ্রামগুলোতে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং ২০২১ সালের অক্টোবরের মধ্যে দেশের প্রায় সব শহর এলাকায় নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করে। মিয়ানমারের আরাকান, কাচিন, কারেন, শান এবং ওয়া বাহিনীর মতো ১১টি জাতিগত গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগ দিয়ে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে সামরিক অভিজ্ঞতা লাভ করছে পিডিএফের যোদ্ধারা।

মিয়ানমারের জাতি গোষ্ঠীর সশস্ত্র গ্রুপগুলো এর আগে আলাদাভাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমন পরিচালনা করত। বর্তমানে তাঁরা  পি ডি এফ এর সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমন পরিচালনা করছে। সামরিক সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সাথে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্রবাহিনী এবং পিডিএফ-এর মধ্যে প্রায় ২৮০০ বার সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়েছে। এনইউজি’র অনুগত পিডিএফ ও এথনিক রিভল্যুশনারি অর্গানাইজেশনের (ইআরও) যোদ্ধারা গত এক বছর ধরে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশের অর্ধেকের বেশি অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছে।

মিয়ানমার সামরিক বাহিনী সারাদেশে পি ডি এফ এবং জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলির দ্বারা প্রতিদিন আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছে।  মিয়ানমার সেনাবাহিনী এখন আরাকান আর্মির (এ এ) পাশাপাশি কাচিন, শান, কারেন, চিন এবং কায়া জনগোষ্ঠীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছে।  মিয়ানমারের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কায়াহ রাজ্যে ২০২১ সালের মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত গেল ১৫ মাসে পি ডি এফ যোদ্ধাদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষে দেশটির দেড় হাজার সেনা নিহত হয়েছেন। একই সময়ে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন দেড় শতাধিক পি ডি এফ যোদ্ধা। অভ্যুত্থানের পর সামরিক বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে মিয়ানমারে ২ হাজার ২০০ জনের বেশি নিহত, প্রায় ১৫ হাজার মানুষ গ্রেফতার ও ২৮০০০ বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। জান্তা ও সেনাশাসনবিরোধীদের সংঘর্ষ এবং সামরিক অভিযানের কারণে দেশটিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী এখন  ত্রিমুখী প্রতিরোধের মুখে রয়েছে, আন্তর্জাতিক চাপ, সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধ এবং নিজস্ব ভামার গোত্রের সদস্যদের প্রতিরোধের মুখে তাঁরা দেশটির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের জন্য লড়াই করছে।

ইতিপূর্বে সেনাবাহিনীর নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার ছিল ক্ষুদ্রজাতি গোষ্ঠীর মানুষেরা। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভামার সম্প্রদায় এই সংঘর্ষে যুক্ত ছিল না। ২০২১ সালে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহনের পর সংখ্যাগুরু ভামার জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি সংখ্যালঘু জনগণের বিরুদ্ধে যে সংঘাত চলছে তা মিয়ানমারের ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি। বর্তমানে মিয়ানমারের জনগণ সেনাবাহিনী রচিত সংবিধানে ফিরে যেতে চাচ্ছে না। ফলে তারা সারা দেশ জুড়ে বিক্ষোভ ও আন্দোলন করতে শুরু করে। এই বিক্ষোভে যুক্ত হয়  তরুণ জনগোষ্ঠী এবং গণতান্ত্রিক সরকারের কর্মীরা। সাধারণ জনগণের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁরা সেনাশাসনের বিরুদ্ধে তাঁদের আন্দোলন বেগবান ও সংগঠিত করে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশের ভেতর তিনটি সশস্ত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে। এগুলো হলো- এ এ,  ওয়া আর্মি ও কাচিন ইনডিপেন্ডেন্ট আর্মি। এই তিন সশস্ত্র সংগঠন  'নর্দান অ্যালায়েন্স' নামে পরিচিত ছিল, বর্তমানে নর্দান অ্যালায়েন্স নাম বদলে 'ফ্রেন্ডশিপ অ্যালায়েন্স'  হয়েছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি দমনে নিরাপত্তা বাহিনী প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার শুরুর পর গণতন্ত্রকামী বিভিন্ন শক্তিও নিজেদের মধ্যে সংগঠিত হওয়া শুরু করে। নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষে রাখাইন রাজ্যের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এবং ওয়া রাজ্যের ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মির শীর্ষ নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। বর্তমানে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো।

২০১৭ সালের পর প্রায় দুই বছর এ এ’র সাথে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলে। ২০১৯ সাল থেকে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এ এ’র সাথে অনানুষ্ঠানিক যুদ্ধ বিরতি বজায় রেখেছিল।২০২১ সালে সামরিক সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর রাখাইন প্রদেশে আপাত শান্তি বিরাজ করছিল। যুদ্ধ বিরতি কালে সীমান্ত এলাকায় এ এ শক্তি সঞ্চয় করে এবং রাখাইনে তাঁদের অবস্থান সুসংহত করে। সম্প্রতি এ এ’র সদস্যরা সীমান্তের কাছে মিয়ানমার আর্মির কয়েকটা অবস্থানের ওপর আক্রমণ করে এবং এরপর সামরিক বাহিনীর সাথে তাঁদের লড়াই শুরু হয়। এ এ’র বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আক্রমন শুরু হওয়ার পর চুক্তি অনুযায়ী ওয়া আর্মি ও কাচিন আর্মি এ এ কে সহযোগিতা করে। মিয়ানমার সশস্ত্রবাহিনী এবং এ এ’র মধ্যে মংডু, বুথিডং, রাথিডং, ম্রাউক-উ এবং পালেতোয়া এলাকায় প্রচণ্ড সংঘর্ষ চলছে। দেশটিতে চলমান সহিংসায় বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জনগণের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে ।

সশস্ত্র প্রতিরোধ মোকাবেলায় সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির সামরিক বাহিনীকে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বাধীন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল স্পেশাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল ফর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে জানা যায় যে,  মিয়ানমারের কেবল ১৭ শতাংশ এলাকা সামরিক বাহিনীর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে। বাকি অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হয় প্রতিযোগিতা চলছে, নয়তো তা জান্তাবিরোধীদের দখলে। অভ্যুত্থানের পর থেকে মোট সাতটি অঞ্চলে- কাচিন, কায়াহ, কায়িন, চিন, রাখাইন এবং দেশের মধ্যাঞ্চলের রাজ্য ম্যাগুয়ে এবং সাগাইং অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সাথে সশস্ত্র দলগুলোর ব্যাপক সংঘর্ষ হচ্ছে। চিন প্রদেশ থেকে মিজোরামে প্রায় প্রতিদিন শরণার্থী আসছে এবং এর মধ্যে চিন ও আরাকানের প্রায় ৩০ হাজার শরণার্থী সেখানে আছে বলে অনুমান করা হয়। সাগাইং অঞ্চলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হামলার পর সেখানকার পাঁচটি গ্রামের কয়েক শত বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

এসব রাজ্যের মধ্যে চিন, কায়াহ, ম্যাগুয়ে এবং সাগাইং রাজ্যে কোনো সংঘাত ছিল না।  বর্তমানে এসব অঞ্চলেও সেনাবাহিনী বিরোধীদের দমন করতে ব্যাপক শক্তি ব্যবহার করছে। মিয়ানমারের কোনো কোনো অঞ্চলে একাধিক বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে হচ্ছে সামরিক জান্তাকে। এই মুহূর্তে চারটি রাজ্যে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘাত তীব্র রূপ নিয়েছে। এর মধ্যে রাখাইন অন্যতম, এবং এই সহিংসতার ছোঁয়া এসে লেগেছে বাংলাদেশেও।  বাংলাদেশের ঘুমধুম ও উখিয়া সীমান্ত এলাকায় অব্যাহত গোলাগুলির কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে গোলা পড়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কয়েকবার সতর্ক করেছে।

বর্তমানে উত্তর রাখাইন রাজ্য, চিন রাজ্য, শান ও কাচিন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তারা ভারী অস্ত্র ও ট্যাংকের সহায়তায় অনেকগুলো শহরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তারা সেখানকার একাধিক গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে এবং গ্রামে গ্রামে অভিযান চালাচ্ছে। সম্প্রতি যেসব জায়গাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী আক্রমন চালাচ্ছে সেখানকার বেশির ভাগ মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভামার জাতিগোষ্ঠীর সদস্য। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে এই জাতিগোষ্ঠীর সদস্যের সংখ্যাই বেশি। ভামারদের মধ্যে থেকে বিদ্রোহী তৎপরতা শুরু হওয়ায় এটা বোঝা যাচ্ছে যে সামরিক সরকারের প্রতি তাদের মনোভাব বদলে যাচ্ছে। সহিংসতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের শীর্ষ সাতটি সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠীর নেতারা ওয়া রাজ্যের পাংসাংয়ে বৈঠকে বসার সিধান্ত নিয়েছে। ধারণা করা হয় এসব গোষ্ঠীগুলোর প্রায় ৩০ হাজার সশস্ত্র সদস্য রয়েছে। নিজেদের মধ্যে একতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি তাঁরা একত্রে বসে আরও সংগঠিত ভাবে কিভাবে আক্রমন পরিচালনা এবং নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী সংখ্যাগরিষ্ঠ ভামার গোত্রের সদস্যদের নিয়ে গঠিত ও নিয়ন্ত্রিত। এত দিন সেনাবাহিনীকে ভামার অধ্যুষিত মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে কোন সংঘাতে জড়াতে হয়নি। দূরবর্তী অঞ্চলগুলোর পাশাপাশি এখন মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। ৬ দশক ধরে চলমান এই সংঘাতে এ পর্যন্ত অর্জন প্রায় নেই বললেই চলে। লাভের মধ্যে আছে হত্যা, রক্তপাত, সংঘর্ষ, ঘৃণা, বাস্তুচ্যুতি ও বিভিন্ন দেশে বিপুল সংখ্যক শরণার্থী, যা কখনও কাম্য নয়। এই সহিংসতা বন্ধে সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে। মিয়ানমারের জনগণের মধ্যে বৌদ্ধ সংগঠনগুলোর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এই সংগঠনগুলো সামরিক সরকারে বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তাঁদের একছত্র ক্ষমতা চালেঞ্জের মুখে পড়বে। কট্টর বৌদ্ধ সংগঠনগুলো অনেকবছর ধরে সামরিক শাসকদেরকে সমর্থন দিয়ে আসছিল এবং অন্যান্য ধর্মের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর পাশাপাশি সেনাবাহিনীর দমন পীড়নের বিষয়ে নীরব ছিল। মিয়ানমারের জাতিগুষ্ঠির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান ফিরিয়ে আনতে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে।

আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে এখন দেশের অভ্যন্তরে চলমান সহিংসতা বন্ধ করে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত দেশের আভ্যন্তরীণ সংঘাত বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার এই উদ্যোগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক শক্তিধর দেশগুলোকে ও এগিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ সমস্যা মিটে গেলে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মানবিক সমস্যা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে গতি ফিরবে বলে আশা করা যায়। তাই মিয়ানমারের উচিত বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংঘাত পরিহার করে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর সাথে সংলাপের মাধ্যমে দ্রুত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।

ব্রিঃ জেঃ (অবঃ) হাসান মোঃ শামসুদ্দীন, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এম ফিল, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক।

   

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ভূয়া ভিডিও ছড়ানো ব্যক্তিরা কেন ছাড় পাচ্ছে



আসাদুল হক খোকন
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বেশ কিছুদিন ধরে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কক্ষের কয়েকটি ভিডিও বিশেষ করে- হাঁসের প্যাঁক প্যাঁক, টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ব্যাঙ লাফসহ ছড়ায় ছড়ায় নাচের বেশকিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। নিজেদের পেজে শেয়ার দিয়ে এসব ভিডিও নতুন শিক্ষাক্রমের অংশ বলে জোর প্রচারণা চালানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ কেউ কেউ নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের রীতিমত বিষোদগার করছেন। এমনকি নতুন শিক্ষাক্রমকে দেশ ও জাতি বিরোধী বলে মন্তব্য করে বৃহৎ আন্দোলনের হুমকিও দিচ্ছেন কেউ কেউ।

গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে তোলপাড় হলেও বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অবশেষে গত রোববার বিষয়টি পরিস্কার করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু এসব ভিডিও নতুন শিক্ষাক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ছড়ানো হচ্ছে তাই ভিডিওগুলো ভাইরাল হবার আগে বা সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাক্ট চেকের মাধ্যমে তা নিয়ে দেশের মানুষকে জানানো উচিত ছিল। একই সঙ্গে উচিত ছিল- এসব ভিডিও ছড়ানো ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা। তাহলে পরবর্তীতে এমন ঘটনার পুনারাবৃত্তি ঘটার সম্ভাবনার হার কমে যেত।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন ও ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জনমনে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এনসিটিবির এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বলা হয়, এই শিক্ষাক্রমের কোথাও নবীর ছবি আঁকতে বলা হয়নি। স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী অপচেষ্টার অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে বা জাতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থী কাজকে শিক্ষাক্রমের কাজ বলে প্রচার করছে।

এনটিসি জানিয়েছে, হিন্দি গানের সঙ্গে স্কুলের পোশাক পরা কিছু ছেলেমেয়ে ও ব্যক্তির অশ্লীল নাচ আপলোড করে বলা হচ্ছে শিক্ষক্রমের নির্দেশনা, যা সব মিথ্যা। কিছু লোক ব্যাঙের লাফ বা হাঁসের ডাক দিচ্ছে, এমন ভিডিও আপলোড করে বলা হচ্ছে এটা নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ, যা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। নতুন শিক্ষাক্রমে সব ধর্ম বর্ণের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে।

এনটিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বিকশিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যারা এমন মিথ্যাচার করছেন তাদের এসব কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করা হয়। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানান তারা। একই সঙ্গে এসব মিথ্যাচারে সর্বসাধারণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

এনটিসির এই বিজ্ঞপ্তির পর নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে যে পুনরায় নতুন আঙ্গিকে জল ঘোলা করা হবে না, ষড়যন্ত্র করা হবে না তা হলপ করে বলা যায় না। এর কারণ খুঁজতে হলে ঘটনার একটু গভীরে যেতে হবে। দেশ বিদেশে অসংখ্য আলোচিত, সময়োপযোগি ঘটনা বিশেষ করে দেশে নির্বাচনের মতো গরম খবর থাকলেও হঠাৎ নতুন শিক্ষাক্রমকেই কেন টারগেটে পরিণত করা হলো? কেন খুঁজে খুঁজে শিশুতোষ নাচানাচিসহ হাস্যরসাত্মক ভিডিওকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু করা হলো? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি।

যদিও বিশেষজ্ঞদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে আমি ভিডিওগুলো নিয়ে ফ্যাক্ট চেক শুরু করেছিলাম গত সপ্তাহে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি পরিস্কার করবেন বলে বিশেষ সূত্রে জানতে পেরে ফ্যাক্ট চেক স্থগিত করি। কয়েকদিন অপেক্ষা করে ফ্যাক্ট চেক করি এবং এর মধ্যেই এনটিসির বক্তব্যও পেয়ে যাই।

এর মধ্যে ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই’ ভিডিওটির ফ্যাক্ট চেক করে পাওয়া গেছে- নতুন শিক্ষাক্রম তো দূরের কথা এটি আমাদের দেশের কোনো ভিডিও নয়। ভারতের আসামের রতন লাল সাহা নামের একজন প্রশিক্ষকের পেজে এই ভিডিওটি আপলোড করেন ২০২২ সালে। এ সম্পর্কে রতন লাল তার এক পোস্টে লেখেন- ‘টিলিং টিলিং সাইক্লিং যা 2022 সালে আসামে ভাইরাল হয়ছিল। এবার বাংলাদেশও ভাইরাল।’

একই দিন তিনি আরও একটি পোস্টে লেখেন- আসাম সরকারি স্কুল, ক্লাস-১, লেসন-৪, (হাট বাজার চল)...। অর্থাৎ এটি যে আসামের সরকারি স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষাক্রম তা তার এ পোস্ট থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়। রতন লাল মূলত একজন এফএলএন ট্রেইনার। মজা বা আনন্দের মধ্য দিয়ে, অভিনয়, ছড়া প্রভৃতির মাধ্যমে প্রচলিত শিক্ষাক্রমকে সহজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্য রতন লাল আসামে জনপ্রিয়। এছাড়া অন্য ভিডিওগুলোও আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমের নয় যা ইতিমধ্যে এনটিসি পরিস্কার করেছেন।

এখন প্রশ্ন হলো- ভারতের এই ভিডিও তুলে এনে বাংলাদেশের নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হলো কেন? কেন এসব ভিডিও আপলোড করে দেশের জনসাধারণকে ক্ষেপিয়ে তোলা হলো? এর উদ্দেশ্যই বা কি? এসবের বেশ কয়েকটি উত্তর হতে পারে। এর মধ্যে দুটি উত্তর নিয়ে চিন্তা করা যেতে পারে। প্রথম- নতুন শিক্ষাক্রম নয়, ভেতরে ভেতরে কৌশলে সরকারের বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠীকে দাঁড় করিয়ে দেয়া। দ্বিতীয়ত- নতুন এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরোক্ষভাবে অস্বীকার করা।

ভূয়া ভিডিও ছড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে একটি পক্ষ দাঁড় করানো এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে এর বিরুদ্ধে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরোক্ষভাবে যারা লাভবান হতে চাইছেন তারা নিশ্চয় দেশের মঙ্গল কামনা করছেন না। কারণ যাই হোক, যে বা যারা এই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, পেছনের কলকাঠি নাড়ছেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার বা সংশ্লিষ্ঠ মহল কি যথেষ্ট সচেতন? এমন অভিনব মিথ্যা ভিডিও উপস্থাপন করে যে মিথ্যাকে সত্য হিসেবে তারা দেশের জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন তাদের বিরুদ্ধে কি এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল না?

যেখানে এনটিসি প্রমাণ পেলো যে, ‘স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী অপচেষ্টার অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে বা জাতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থী কাজকে শিক্ষাক্রমের কাজ বলে প্রচার করছে।’সেখানে এই প্রমাণিত মিথ্যা, অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছে এনটিসি?

যে কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হয়, অপরাধ প্রমাণিত হলে তার জন্য যথাপযুক্ত শাস্তি পেতে হয়- এই নজির বা দৃষ্টান্ত স্থাপিত না হলে এমন অপরাধ, মারাত্মক অপপ্রচার বারবার যে ঘটবে তাতে সন্দেহ নেই। উপরন্তু, এসব অপরাধীর অনেকেই ‘বিচার বা শাস্তির আওতায়’ আসেনি বলে এহেন কার্যকলাপে বরং উৎসাহিত বোধ করবে। এসব অপরাধী ব্যক্তিদের ছাড় দেওয়ায় বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে তারা পুনরায় নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের ফাঁদ তৈরি করে পায়ের উপর পা তুলে নিশ্চিন্ত মনে হাওয়ায় দোল খাবে। সুতরাং- সাধু সাবধান!

লেখক: সাংবাদিক ও বিশ্লেষক

;

মাথায় যখন ‘বিরোধীদল  গঠনের’ ভাবনাও!



কবির য়াহমদ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না—এটা পুরনো খবর। নতুন আলোচনা কে বা কারা হচ্ছেন এমপি? এমপি হচ্ছেন কারা, সেটা জানার কথা নির্বাচনের পর। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের পরের দিনগুলো দেখে মনে হচ্ছে এর কিছুটা ইঙ্গিতও মিলেছে। সরকার দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে  আসন ভাগাভাগি নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের দেন-দরবার চলছে। কে কত আসন নিজেদের ভাগে নিয়ে আসতে পারে—এটা নিয়েই মূলত দৌড়ঝাঁপ, দেন-দরবার।

নির্বাচনের মৌলিক ভাষা প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আসছে নির্বাচনে সেটা হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। অংশগ্রহণকারী অন্য দলগুলোর কারোরই জনভিত্তি কিংবা সামর্থ্য নাই নির্বাচনে ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার। আওয়ামী ছাড়া অংশগ্রহণকারী অন্য দলগুলোর মধ্যে বড় দল জাতীয় পার্টি, তবে তাদের সামর্থ্য নাই সরকার গঠনের। নির্বাচনে দলটির প্রার্থীদের কজন জিততে পারেন সেটাই বরং দেখার। এককভাবে নির্বাচনের ঘোষণা জাতীয় পার্টির লোকদেখানো বলেই মনে হয়। তলে তলে তারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে দেন-দরবারে ব্যস্ত। এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে ইতোমধ্যে।

একদিকে, যোগাযোগ আর অন্যদিকে গত রোববার জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু রাজধানীর বনানীতে দলীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা এখন সাবালক হয়েছি। কারও সঙ্গে আলোচনা, দর-কষাকষিতে আমরা এখন নাই। ...আমরা এখন নিজের শক্তিতেই নির্বাচন করতে চাই। কারও সঙ্গে সমঝোতা বা এসব যোগাযোগ আমাদের হয় নাই। আমাদের ইচ্ছাও নাই।’ তার ভাষায়, দেশে আওয়ামী লীগের চাইতে আওয়ামী-বিরোধীদের ভোট বেশি। তার বিশ্বাস এ ভোটগুলো জাতীয় পার্টিই পাবে।

এদিকে, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুখে যতই ‘দর-কষাকষিতে আমরা নাই’ বলুন না কেন, দলটি তাকিয়ে আছে আওয়ামী লীগের দিকে। আগের চাইতে এখন বেশি আসন চাইছে তারা আওয়ামী লীগের কাছে, গণমাধ্যমের খবর এমনই। দলটির জনভিত্তি সরকার গঠনের পর্যায়ে নাই এটা যেমন সবাই জানে, তেমনি ভালোভাবেই জানে তারাও। প্রয়াত স্বৈরশাসক এরশাদের দলটিকে অনেকেই ‘গৃহপালিত বিরোধীদল’ আখ্যা দিয়ে থাকেন; তারা এটাকে এড়িয়ে গেলেও অস্বীকার করতে পারে না। গত দুইবারের সংসদের তারা বিরোধী দলে থেকেও ছিল সরকারের অংশ হয়ে। চলমান সংসদে জাতীয় পার্টির কেই মন্ত্রিসভায় না থাকলেও বিরোধী দলের যথাযথ ভূমিকাও পালন করতে পারেনি। বলা যায়, সরকারের আনুকূল্যে করেছে বিরোধীদলের দায়িত্ব পালন।

জাতীয় পার্টি মাত্র ২২টি আসন নিয়ে বর্তমান সংসদে বিরোধীদলের ভূমিকায়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটভুক্ত না হলেও তাদের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনতে ছাড় দেওয়া হয় ২৬ আসনে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ২৬৬ আসন, জাতীয় পার্টি ২২ আসন, বিএনপি জোট ৭ আসন আর চারটি আসনে জয় পেয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ওই নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা, সমালোচনা আছে। সমালোচনার জবাব জোরগলায় দেওয়ার ভাষাও শোনা যায়নি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। বরং সকল পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, একাদশের চাইতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট সুষ্ঠু হবে। এটা যেমন বলা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে, তেমনি বলা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে।

নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। পাঁচ বছর মেয়াদ থাকে প্রতিটি কমিশনের। আগের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনকে সেখান থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টা আমরা লক্ষ্য করছি বর্তমান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনের। তারা তাদের অবস্থান থেকে চেষ্টা করেছেন-করছেন, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় আনতে পারেননি এখনো। আস্থার এই সংকটে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনেই যায়নি বিএনপি, যদিও তাদের মূল দাবিতে নির্বাচন কমিশন প্রতিপক্ষ ছিল না, তাদের মূল প্রতিপক্ষ সরকার। বিএনপির ‘এক দফা’ দাবি সরকারের পদত্যাগের। এই দাবিতে আন্দোলনে আছে বিএনপি।

মাঠের আন্দোলনে বিএনপির সাফল্য নেই। ‘রুটিন কর্মসূচিতে’ আছে তারা। এই কর্মসূচিগুলো জনজীবনে প্রভাব ফেলতে পারেনি বলে নির্বাচনের পথেই রয়েছে দেশ। তবে এই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে আভাষ মিলছে না। বিএনপির ‘রুটিন কর্মসূচির’ মতো মনে হচ্ছে ৭ জানুয়ারিতে হতে যাচ্ছে ‘রুটিন নির্বাচন’, যার মধ্য দিয়ে ফের সরকার গঠন করবে আওয়ামী লীগ। এবার তাই এমপি হতে দৌড়ঝাঁপ নেতাদের, দেন-দরবারে ব্যস্ত রাজনৈতিকগুলো। এখানে কে এমপি হবে, আর কোন রাজনৈতিক দল কতজন এমপি পাবে সেটা নির্ধারণের কর্তৃপক্ষ যেন আওয়ামী লীগ! নির্বাচক এখানে জনগণ নয়, আওয়ামী লীগ। অথচ নির্বাচনের মৌলিক যে ভাষা, সে ভাষায় সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক জনগণই হওয়ার কথা ছিল। বদলে যাওয়া দৃশ্যপটে জনগণের ক্ষমতা চলে গেছে রাজনৈতিক দলের বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কাছে।

নির্বাচনের আগে সকল আলোচনার কেন্দ্রে থাকে কে যাবে ক্ষমতায়, আর কে বিরোধীদলে। কিন্তু এবার যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা সেখান থেকে কেবল প্রশ্নই করতে পারি—কে হবে বিরোধীদল?

আওয়ামী লীগ ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনে প্রার্থিতা ঘোষণার পর ‘কৌশলগত কারণে’ নিজ দলের মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় উদ্বুদ্ধ করেছে। এবার সর্বাধিক সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এদের অনেকেরই জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংখ্যাটা এমনকি জাতীয় পার্টির চাইতেও বেশি হয়ে যেতে পারে। ফলে বিরোধীদল সংকটে পড়ে যেতে পারে সংসদ। জাতীয় পার্টি যতই নিজেদের ‘সাবালক’ দাবি করুক না কেন, তারাও জানে তাদের সামর্থ্য, তাই তলে তলে চলছে দেন-দরবার। এখনই ‘হ্যাঁ’ না বললেও আওয়ামী লীগও নিশ্চয় সরকার গঠনের ভাবনার পাশাপাশি মাথায় রাখছে ‘বিরোধীদল গঠনের’ ভাবনাও।

;

সরকারের দীর্ঘ পরিকল্পনা ও উদ্যোগের ফল জলবায়ু তহবিল



শরিফুল হাসান সুমন
সরকারের দীর্ঘ পরিকল্পনা ও উদ্যোগের ফল জলবায়ু তহবিল

সরকারের দীর্ঘ পরিকল্পনা ও উদ্যোগের ফল জলবায়ু তহবিল

  • Font increase
  • Font Decrease

 

এশিয়ায় প্রথমবারের মতো উন্নয়ন সহযোগীরা একত্রিত হয়ে বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন ও মানিয়ে নিতে সাহায্য করার জন্য ৮ বিলিয়ন ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে। আর এই সম্মিলিত তহবিল প্রদান করা হবে আইএমএফের নেতৃত্ব ও তত্ত্বাবধানে।

আইএমএফের এমডি ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা এক বিবৃতিতে বলেছেন, "অরক্ষিত দেশগুলোর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের উচ্চতর ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করার পাশাপাশি প্রয়োজনে তাদের সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিল বাংলাদেশ।" দেশটি জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা, অভিযোজন, প্রস্তুতি এবং সংরক্ষণকে শক্তিশালী করার জন্য উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, তিনি দুবাইতে অনুষ্ঠিত কপ২৮ এর সাইডলাইনে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে বলেছেন, "আমরা বাংলাদেশের জলবায়ু এজেন্ডার দৃঢ় বাস্তবায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী সম্মিলিত পদক্ষেপের প্রচারে অক্লান্ত প্রচেষ্টার প্রশংসা করি।"

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা বলেন, "জলবায়ু ঝুঁকি বৃদ্ধি বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করছে। দেশটি দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং অভিযোজনে নেতৃত্ব প্রদর্শন করেছে। আজকের ঘোষণা আবারও জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেখায়। এর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি, এবং আমাদের সকলকে জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার জন্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলিকে অর্থায়ন প্রদানের জন্য একসাথে কাজ করতে হবে।"

এডিবি প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া বলেছেন, "জলবায়ু ঝুঁকি বাড়ছে এবং এটি মোকাবেলায় প্রগতিশীল পদক্ষেপ এবং শক্তিশালী অংশীদারত্ব প্রয়োজন। প্রতিশ্রুতি এবং নেতৃত্বের সাথে বাংলাদেশ তার জলবায়ু এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। এনসিইসিসি জলবায়ু এজেন্ডাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি সম্পূর্ণ-সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে এবং বাংলাদেশ জলবায়ু ও উন্নয়ন অংশীদারত্ব বাংলাদেশকে বর্ধিত ও সমন্বিত সহায়তার সুবিধা দেবে। এডিবি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে সকল উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে কাজ করতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

জলবায়ু খাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীরা

বাংলাদেশ জলবায়ু ও উন্নয়ন প্ল্যাটফর্মের (বিসিডিপি) জন্য যে উন্নয়ন সহযোগীরা একত্রিত হয়েছে তারা হলো— এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি); বিশ্বব্যাংক; ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি); বহুপাক্ষিক বিনিয়োগ গ্যারান্টি এজেন্সি (এমআইজিএ); এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি); এজেন্স ফ্রান্স ডি ডেভেলপমেন্ট (এএফডি); ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি), টিম ইউরোপের অংশ হিসাবে; সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ), দক্ষিণ কোরিয়া সরকার; জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এবং ইউ.কে।

জলবায়ু খাতে বাংলাদেশের হুমকিসমূহ

সাম্প্রতিক দশকগুলিতে বাংলাদেশে চরম জলবায়ু প্রভাব বিস্তারকারী ঘটনাগুলো ঘন ঘন ঘটছে এবং তীব্রতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গড় তাপমাত্রা প্রতি দশকে ০.২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২০-২০২১ বছরে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের ১৫৩ মিমি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, এবং পরবর্তী গবেষণায় শীতকাল বাদে তিনটি ঋতুতে ক্রমবর্ধমান প্রবণতা পাওয়া গেছে, যা শীতল এবং শুষ্ক হয়ে উঠছে, যখন বছরের বাকি সময় উষ্ণ এবং আর্দ্র হচ্ছে।

বাংলাদেশের উপকূলীয় এবং নদী উপকূলীয় সম্প্রদায়গুলো তাদের কম অভিযোজিত ক্ষমতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সরাসরি সংস্পর্শে আসার কারণে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। নদীতীর ক্ষয় এবং অন্যান্য জলবায়ুগত বিপত্তি এই সম্প্রদায়ের জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করেছে।  এই বিপদের কারণে অনেক লোক তাদের পরিবারকে পুনর্বাসিত করেছে, এবং জলবায়ু-প্ররোচিত অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত বেশিরভাগ লোককে চর জমিতে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে- মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এবং পার্শ্ববর্তী নদী দ্বারা বেষ্টিত। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, চরের জমিতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকি প্রদর্শন করে। চরের জমিতে বসবাসকারী লোকেরা একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং আর্থ-সামাজিক দুর্বলতার সম্মুখীন হয় যা তাদের এক চর থেকে অন্য চরে স্থানান্তরিত করতে বাধ্য করে।

সমুদ্র স্তর বৃদ্ধি

তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অনিয়মতান্ত্রিক বৃষ্টিপাত, নদীর নাব্যতা সব কিছু পরেও জলবায়ুগত যে প্রভাবটা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে হুমকি হয়ে দেখা দেবে সেটা হচ্ছে সমুদের স্তর বৃদ্ধি।  স্যাটেলাইট ব্যবহার করে এসএলআর প্রক্ষেপণের উপর পরিবেশ অধিদপ্তর দ্বারা পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণা অলটাইমেট্রি ডেটা দেখায় যে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে গড় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা গত ৩০ বছরে ৩.৮-৫.৮ মিমি/বছর করে বেড়েছে। সমীক্ষাটি আরও দেখায় যে আগামী ১ শতাব্দীতে প্রায় ১২.৩৪%-১৭.৯৫% উপকূলীয় অঞ্চল সমুদ্র স্তর বৃদ্ধি (এসএলআর)-র কারণে তলিয়ে যাবে। অনুসন্ধানগুলি আরও দেখায় যে ৫.৮%-৯.১% ধান উৎপাদন হ্রাসের জন্য এসএলআর দায়ী হবে।

জলবায়ু খাতে বাংলাদেশের গৃহীত জাতীয় নীতিসমূহ হচ্ছে — Bangladesh Climate Change Strategy and Action Plan (BCCSAP), 2009; National Adaptation Programme of Action, 2005, updated in 2009; Bangladesh Climate Change Trust Act, 2010; Nationally Determined Contributions (NDC), 2015, Enhanced & Updated in 2021; NDC Implementation Road Map, 2018; Bangladesh Delta Plan, 2100; Mujib Climate Prosperity Plan 2030 (Draft); National Disaster Management Policy, 2015; Standing Orders on Disaster 2019; Plan of Action to Implement Sendai Framework for Disaster Risk Reduction 2015-2030; National Strategy on Internal Displacement Management 2021; National Plan for Disaster Management 2021-2025; Bangladesh Energy Efficiency and Conservation Master Plan up to 2030; Renewable Energy Policy of Bangladesh, 2008; Bangladesh National Action Plan for Reducing SLCPs, 2012, Updated in 2018

 বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল থেকে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ

বাংলাদেশ সরকার ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো নিজস্ব তহবিল থেকে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ফান্ড গঠন করে। এটা ছিল অনুন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম কোন দেশ যারা জলবায়ু খাতে এমন পদক্ষেপ নিয়েছিল। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ফান্ড ৮০০’র মতো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে, যা সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে রক্ষাকল্পে গৃহীত হয়েছে। এই ১৪ বছরে বাংলাদেশ ৪৮০ মিলিয়ন ইউএস ডলার এই খাতে খরচ করে যার মধ্যে রয়েছে অভিযোজন, প্রশমন এবং জলবায়ু পরিবর্তন গবেষণা।

জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীলতার লক্ষ্যে অভিযোজন প্রকল্প সমূহ

৩৫২.১২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ; ৫৯০.৬০ কিমি খাল খনন/পুনঃখনন; ৮২টি পানি নিয়ন্ত্রণ পরিকাঠামো/বাঁধ স্লুইসগেট নির্মাণ; ১৪টি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ; ১৪ হাজার ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক এবং উপকূলীয় জেলেকে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি প্রশিক্ষণ; ১৯ হাজার ৪২৮ মেট্রিক টন চাপ সহনশীল বীজ উৎপাদন এবং বিতরণ; ৮ হাজার ৫২৯টি জলবায়ু সহনশীল ঘর নির্মাণ; ২ হাজার ৪৫১টি পানি পরিশোধন সৌর প্ল্যান্ট স্থাপন; ২১০ গ্রামে ১২ হাজার ৯০০টি ভাসমান সবজির বিছানা; ৩টি রাবার ড্যাম নির্মিত এবং ২টি স্পার পুনর্গঠিত; ৯০ কিমি নদী-তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ সম্পন্ন; ১৮টি নিয়ন্ত্রক, ১৬টি আউটলেট এবং ১২টি খাঁড়ি নির্মাণ; ২০০.৬৪ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ; ১২৮.৭ কিমি নিষ্কাশন ব্যবস্থা তৈরি; ৪ হাজার ১৮৪টি গভীর নলকূপ স্থাপন।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন প্রকল্পসমূহ

৭১.১৪৬ মিলিয়ন গাছ লাগানো হয়েছে; ৬ হাজার ৯২১.৭ হেক্টর বনভূমি বনায়নের আওতায় আনা হয়েছে; ৬ হাজার উদ্যোক্তার মাঝে ৯ লক্ষ  উন্নত রান্নার চুলা বিতরণ; ১০ হাজার ৯০৮ সোলার হোম সিস্টেম বিতরণ করা হয়েছে; অফ-গ্রিড এলাকায় ২টি সোলার মিনি-গ্রিড প্ল্যান্ট রিমোটে ইন্সটল করা হয়েছে; ১ হাজার ৭৫১টি সোলার স্ট্রিটলাইট স্থাপন করা হয়েছে; ২ হাজার ৪৫১টি সোলার ওয়াটার পিউরিফায়ার স্থাপন করা হয়েছে; ১৩টি সৌর সেচ পাম্প বসানো হয়েছে; ৭ হাজার ৯০১টি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট গৃহস্থালিতে স্থাপন করা হয়েছে, এবং ১৩টি কমিউনিটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গবেষণাসমূহ হচ্ছে—১২ ধরনের চাপ এবং তাপ সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন ও আধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে বন ব্যবস্থাপনা, হার্ডওয়্যার এবং অন্যান্য সরঞ্জাম স্থাপন সম্পন্ন

জলবায়ু পরিবর্তন খাতে এই পর্যন্ত প্রাপ্ত সহায়তাসমূহ

২০০৯-১০ সাল থেকে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন খাতে নীতি প্রণয়ন সহ গবেষণা ও প্রকল্প উন্নয়ন লক্ষ্যে নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে আসছে। এই খাতে কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে অনুদান যেমন পেয়েছে, তেমনি ঋণও নিয়েছে বাংলাদেশ।

গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) থেকে ৫টি প্রকল্পে ১০১.১৪ মিলিয়ন দলা অনুদান এবং ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ; স্বল্পোন্নত দেশ তহবিল (এলডিসিএফ) থেকে ৭টি প্রকল্পে ৩৪.৪১ মিলিয়ন ডলারের অনুদান; অভিযোজন তহবিল (এএফ) থেকে ১টি প্রকল্পে ৯.৯৯ মিলিয়ন ডলারের অনুদান; গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ) থেকে ৮টি প্রকল্পে ২৪.৬৬ মিলিয়ন ডলার অনুদান; এবং ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ড থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান। মোট ২০০.২০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান এবং ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণের সাথে এইসকল আন্তর্জাতিক সংস্থা ৭৪৭.২২ মিলিয়ন ডলারের সহ-অর্থায়ন করেছে।

দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত কপ২৮ সামিটে বাংলাদেশ হঠাৎ করেই জলবায়ু খাতে এই ৮ বিলিয়ন ডলার পায়নি, গত জানুয়ারিতে জলবায়ু পরিবর্তন ও সহনশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে যে প্রকল্পসমূহ এডিবিতে জমা দেওয়া হয়েছে সেটারই ফল প্রকাশিত হলো ৩ ডিসেম্বর এই তহবিল ঘোষণার মাধ্যমে। শেখ হাসিনা সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছে। এই লক্ষ্যে বিজ্ঞ পরিবেশবিদদের সাথে দিয়ে দিনের পর দিন সেমিনার, সভা, কনফারেন্স করার পর সেই পরামর্শ মোতাবেক নীতি প্রণয়ন, সেই নীতির অধীনে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, সেই লক্ষ্যে অর্থের সংস্থান এই সবই হয়েছে পরিকল্পিত উপায়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে।

দীর্ঘদিনের লাগাতার পরিশ্রমের ফসল হচ্ছে এডিবির এই জলবায়ু তহবিল, এবং একইসঙ্গে এটি নতুন এক চ্যালেঞ্জও। আগামীদিনের উপকুল সংশ্লিষ্ট এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো হয়তো এই তহবিলের কল্যাণে বিশাল সফলতা দেখাতে যাচ্ছে।

;

কিসিঞ্জার পাঠ ও মূল্যায়ন যথার্থ হচ্ছে কি?



কাজল রশীদ শাহীন
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

 

হেনরি কিসিঞ্জার, শতায়ু পেরিয়ে ইহলোককে বিদায় জানিয়ে পাড়ি জমালেন অনন্তলোকে। একশ বছরের পার্থিব জীবনের পঞ্চাশ বছরই তিনি আলোচিত-সমালোচিত ও বিতর্কিত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও জেরাল্ড ফোর্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করার বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী তিনি। অধ্যাপক, গবেষকের অভিজ্ঞতা থাকলেও একজন কূটনীতিক হিসেবে তিনি কেবল মার্কিন মূলুকে নয়, বিশ্বব্যাপী রেখেছেন নানামুখী অবদান। যা ক্ষেত্রবিশেষে ভয়ংকর রকমের প্রাণহানি, ক্ষয়ক্ষতি ও সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়য়েছে।

বাংলাদেশের মানুষেরা এই ব্যক্তিটিকে অন্যরকমভাবে চেনেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে উনার ভূমিকার প্রশ্নে এবং ‘বটমলেস বাস্কেট’ উক্তির কারণে। সেই থেকে মৃত্যুাবধি-এমনকি মৃ্ত্যুর পরও উনার প্রতি প্রচ্ছন্ন নয় প্রকাশ্য বিরাগও প্রদর্শিত করেন বহু মানুষ। ব্যাপারটা দুই-দশজনের মধ্যে কিংবা বিশেষ কোন বর্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে-ছাপান্নো হাজার বর্গমাইলের ব্যতিক্রম বাদে সকলেই বিষয়টা সম্পর্কে অবগত।  কারণ সেটা মিথ, কিংবদন্তি বা বাগধারার পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখানে কেউ যদি বেশি চালাকি করে। বুদ্ধি খাটিয়ে কাউকে ধোঁকা দেয়। কৌশলে কোন মুস্কিলের আসান করে তাহলে এদেরকে একবাক্যে ‘কিসিঞ্জার’ বলে। এই এই ধরনের বুদ্ধিকে, ‘কিসিঞ্জারি বুদ্ধি’ বা ‘কিসিঞ্জারি প্যাঁচ’ জ্ঞান করা হয়। ব্যাপারটার মধ্যে ঠাট্টা, বিদ্রুপ বা রসিকতা হয়তো রয়েছে। কিন্তু বিষয়টাকে হালকাভাবে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। নেয়াটা যৌক্তিকও নয়।

এদেশের মানুষেরা কিসিঞ্জারি বুদ্ধিকে দু’রকমভাবে দেখে- এক. বুদ্ধি খাটিয়েও সফল না হওয়া বা, বেশি চালাকি করতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়া। দুই. অনেক চেষ্টা তদবির করে সফল না হওয়ায় হেয় করা বা বাজে ও অযৌক্তিক মন্তব্য করা। এখন আসা যাক, প্রথম প্রসঙ্গ। কেনো কিসিঞ্জারি বুদ্ধিকে এভাবে দেখা হয়। এর কারণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কিসিঞ্জারের হিংসাত্মক মনোভাব ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে যেন জয়ী হতে না পারে তার জন্য কিসিঞ্জার এমন কোন চেষ্টা বা পদক্ষেপ নেই তিনি করেননি।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। এই সহযোগিতায় ভারতকে বিরত রাখতে কিসিঞ্জার আগ্রাসী কূটনীতির আশ্রয় নেয়। উনার কারণেই মার্কিন জনগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে থাকলেও ক্ষমতাসীন প্রশাসন বিপরীত মেরুতে অবস্থান নেয় এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বকেও তাদের পক্ষে নেয়ার কূটনীতি শুরু করে। এই কূটনীতির স্রষ্টা হল হেনরি কিসিঞ্জার। যার অংশ হিসেবে তিনি চীনকেও তাদের পক্ষে নেয়। চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ককে আর বেশি গাঢ় করে তোলেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে নানাভাবে নিজেদের মতে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনভাবেই যখন উনাকে পক্ষে নিয়ে আসা সম্ভব না হওয়ায় কিসিঞ্জার অভ্যাসবশত ইন্দিরাকে নিয়ে বাজে মন্তব্যও করেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন প্রশাসন যে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল, যা বঙ্গোপসাগর অবধি এসেও ছিল। কিসিঞ্জারের কূটনীতির কারণেই এসব হয়েছিল।

যতভাবে ও যতপ্রকারে সম্ভব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের দাবিকে পরাভূত ও পরাজিত করতে যা যা করণীয়, তার সবটাই করেছিল মার্কিন প্রশাসন-যার কূটনৈতিক মন্ত্রদাতা ছিলেন কিসিঞ্জার। কিন্তু কোন চেষ্টায় সফল হয় বাঙালির লড়াকু মনোভাব ও ভারত-রাশিয়ার মতো শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো আমাদের পাশে থাকার জন্য। এতে এটাও প্রমাণিত হয়েছিল যে, যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন এবং ষড়যন্ত্রকারী যতই শক্তিধর হোক না কেন, ন্যায়সঙ্গত ও ন্যায্যতাভিত্তিক কোন দাবিকেই ‘দাবায়ে’ রাখা যায় না। এ কারণেই বাংলাদেশের মানুষ আজও কেউ যখন অন্যায়ভাবে কিছু করে, তাকে কিসিঞ্জার বলে এবং এধরণের বুদ্ধিধরদের কিসিঞ্জারি বুদ্ধি বলে চিহ্নিত করে।

কিসিঞ্জারের মৃত্যুর পর যত লেখা প্রকাশিত হয়েছে দেশে এবং বিদেশে। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পড়ার সুযোগ হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের দেশের গুণীজনরা যেমন রয়েছেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্নরাও উপস্থিত আছেন। গার্ডিয়ান, ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের মতো আন্তর্জাতিক প্রভাবশারী দৈনিকের লেখাও এই বিবেচনার মধ্যে পড়ে। সবগুলো লেখারই মৌল স্বর এক ও অভিন্ন। প্রশ্ন হল, কিসিঞ্জারের সমালোচনা করতে গিয়ে আমরা কি উনার বুদ্ধিমত্তা ও কূটনীতিক ক্ষমতার কথা ভুলে গেছি? কূটনীতি দিয়ে তিনি ক্ষেত্র বিশেষে কিছু জায়গায় কিংবা বেশীরভাগ জায়গায় শঠতার পরিচিয় দিয়েছেন । যা অনেক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে দেশে বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে উনার বিচারের দাবি উঠেছে। কিন্তু কিসিঞ্জারের কুটনীতির পাল্টা পাঠ মেলেনি। কূটনৈতিক কিসিঞ্জারকে কূটনীতি দিয়ে মোকাবেলা করার চেষ্টা দেখা যায়নি।

এ লেখায় আগেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কিসিঞ্জার নামটা শুনলেই বা উচ্চারিত হওয়া মাত্র বহুল উচ্চারিত সেই বাক্যটাই সামনেই আসে, ‘বটমলেস বাস্কেট’। কোন প্রেক্ষাপটে কী বিবেচনায় তিনি এ কথা বলেছিলেন তা নিশ্চয় আমাদের মনে আছে। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেলের বাস্তবতাকে ঘিরে তিনি ওকথা বলেছিলেন। হ্যাঁ, ওই কথার মধ্যে-বিদ্রুপ, শ্লেষ, অবমাননা সবই ছিল। যা মেনে নেয়া বা সহ্য করা কোন দেশপ্রেমিকের পক্ষেই সম্ভব নয়।

কিসিঞ্জার যা সেদিন বলেছিল, আজ তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রমাণ করে দেখিয়েছে সে বটমলেস বাস্কেট নয়। এখন এই প্রসঙ্গ আমরা যদি একটু উদারভাবে দেখার চেষ্টা করি, তাহলে কোন্ সত্যে আমরা হাজির হব। সত্যিই কি সেদিনের বাংলাদেশ বটমলেস বাস্কেট ছিল না? যদি তাই-ই না হবে তাহলে আজকের অবস্থানে আসতে আমাদের এত সময় কেন লাগলো? আবার এই প্রশ্ন ওঠা কি সঙ্গত নয়, পঞ্চাশ বছরে একটা স্বাধীন দেশের যে অবস্থায় যাওয়ার কথা ছিল সেখানে কি পৌঁছানো সম্ভব হল? গণতান্ত্রিক পরিবেশের নিশ্চয়তায়, বাক্ স্বাধীনতার চর্চায়, সমতাভিত্তিক সমাজ নির্মাণের প্রশ্নে, নীতি ও ন্যায্যতাসম্পন্ন রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকারে আমরা কি আদৌ কাঙ্ক্ষিত জায়গায় যেতে পারলাম?

আমরা সকলেই জানি, আমেরিকা-চীনের সম্পর্ক মোটেই বন্ধুত্বপূর্ণ নয়, বৈরিতায় ভরা। তারপরও কিসিঞ্জার নিজস্ব কূটনীতি দিয়ে সেই সম্পর্ক এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছেন যা, দুইদেশের কাছে প্রশংসনীয়। চীনের কাছে সবচেয়ে প্রিয় যে আমেরিকান তিনি হলেন কিসিঞ্জার। উনার শতবর্ষের জয়ন্তী যখন আমেরিকায় উদযাপিত হয়, তখন চীনেও তার ছোঁয়া লাগে। চীনারাও নিজেদের মধ্যে আয়োজন করেন একজন আমেরিকানের জন্মদিন। যখন ‍দুটো দেশ একে অপরের প্রতি উষ্মা প্রকাশে সিদ্ধ ও রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তখন এ ধরনের আয়োজন বিস্ময়ের শুধু নয়, একজন কূটনীতিকের সুদূরপ্রসারী সাফল্যেরও অংশ।

নোবেল কমিটি কিসিঞ্জারকে শান্তিতে নোবেল দিয়েছেন। বলা হয়, নোবেলের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত পুরস্কার ছিল এটি। কমিটির দু’জন সদস্য প্রতিবাদে পদত্যাগও করেন। ভিয়েতনাম-মার্কিন যুদ্ধ অবসানে পদক্ষেপ নেয়ায় তিনি নোবেল পান ১৯৭৩ সালে। এরপর আরও দু’বছর লেগে যায় যুদ্ধ নিরসনে। প্রশ্ন হল, কিসিঞ্জারের ওই উদ্যোগ কি ভুল ছিল। মনে রাখতে হবে, সেই সময়ের কোন মার্কিন রাষ্টপতিকে নোবেল না দিয়ে কেন উনাকে দেয়া হল? উনি কি সত্যিই কোন পদক্ষেপ রাখেননি যুদ্ধ বন্ধে? এসব পশ্নের যৌক্তিক উত্তর খোঁজা প্রয়োজন।

বলা হয়, কিসিঞ্জারের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধ বেধেছে। আবার একথাও সত্য যে, তিনি কোনো কোনো যুদ্ধ বন্ধেও সাহসী ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। কিসিঞ্জারের যত দোষ-ত্রুটি ধরা হয়, একজন আমেরিকানের কাছে কিন্তু তিনি এসবের ঊর্ধ্বে। সকল মার্কিনীদের কাছে তিনি বন্দিত। উনার কূটনীতির তারিফ করেন সবাই, তা তিনি ডেমোক্রেট হোক অথব রিপাবলিক। এখানেই কিসিঞ্জারকে বিবেচনায় নিয়ে সমালোচনা করা উচিৎ। তিনি হয়তো আন্তর্জাতিকতাবাদী হয়ে উঠতে পারেননি, কিন্তু দেশপ্রেমিক হিসেবে, একজন আমেরিকান হিসেবে কি অনন্য নন?

কিসিঞ্জারের সমালোচনা যতটা করা হয়, বিদ্রুপবাণে বিদ্ধ করা হয়, সেভাবে উনার কূটনীতির প্রতিযোগী বা প্রতিদ্বন্দ্বি কিন্তু সেভাবে দেখা যায় না, নেই বললেই চলে। সমালোচনা করা সহজ। প্রতিযোগী বা প্রতিদ্বন্দ্বি হওয়া কঠিন। কিসিঞ্জার প্রশ্নে আমরা কি সহজ পথটাই বেছে নেয়নি? আমেরিকার মোকাবেলা যেমন আমেরিকার মতো হয়েই করতে হবে, তার জন্য নিরন্তর চেষ্টা জারি রাখতে হবে। তেমনি কিসিঞ্জারের যা কিছু অপছন্দ, যা কিছু ঘৃণা ও বিবমিষার তার মোকাবেলা করতে হবে প্রতিযোগী বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিয়ে-তাকে ছাড়িয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে। কেবল বিদ্রুপ, সমালোচনা আর কটুকথা দিয়ে কোন অর্জন হয় না, বরং আরও শক্তিধর করে তোলা হয়। কিসিঞ্জারের মূল্যায়নে-কিসিঞ্জারে পাঠে আমরা কোনটা করছি, সেটা কি একবার ভেবে দেখছি?

লেখক: সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও গবেষক

[email protected]

;