মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু



ড. মতিউর রহমান
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রায় দুইশত বছরের ব্রিটিশ শাসনের পর ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র গঠিত হয় এবং পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। একমাত্র ধর্মীয় পরিচয় ছাড়া পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে আর কোনো বিষয়ে মিল ছিল না। তাই দেশভাগের পর একই ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী প্রথমে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানে। বাঙালির মাতৃভাষা বাংলার পরিবর্তে উর্দুকে বাংলার রাষ্ট্রভাষা করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে।

কিন্তু যোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ঘোষিত আন্দোলনে সাহসী বাঙালির নিরন্তর প্রতিরোধ ও প্রতিকার প্রতিফলিত হয়। একপর্যায়ে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীপূর্ব বাংলার নিরীহ প্রতিবাদকারীদের প্রাণের বিনিময়ে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করা হয়।

বাঙালি জাতীয়তাবাদ সুদৃঢ় হয়েছিল প্রধানত ভাষা আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভের পর, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা এবং ১৯৬৯ এর ১১ দফা দাবি ও গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে সমগ্র বাঙালি জাতি ও অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, নিপীড়ন এবং অবজ্ঞায় তাদেরকে একতাবদ্ধ হতে সহায়তা করেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যাপক বিজয়ে এর প্রতিফলন ঘটে। অবশেষে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভ্যুদয় ঘটে।

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান সফর করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্র সমাবেশে তিনি ঘোষণা করেন উর্দু, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা। শুরু হয় প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ। ১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগ বিভক্ত হয় এবং উদারপন্থী নেতাদের নিয়ে 'আওয়ামী মুসলিম লীগ' নামে একটি নতুন দল গঠিত হয়।

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনের কারণে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পর্ক প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ভাষার জন্য রক্তদানের মধ্য দিয়ে দেশের জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের প্রস্তুতি শুরু হয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদের নতুন ধারা শুরু হয়।

১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল বিজয়ের সাথে সরকার গঠন করে। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী যুক্তফ্রন্ট সরকারকে পতনের ষড়যন্ত্র করে। এভাবেই শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে লড়াই। এই সংগ্রামের শুরুতে তরুণ শেখ মুজিব এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। তাঁরই সুযোগ্য নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশের অনেক ঘটনার মধ্যে ১৯৫৪ সালের নির্বাচন তাৎপর্যপূর্ণ। পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন একজন তরুণ নেতা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। যুক্তফ্রন্টের অন্যান্য নেতাদের সাথে তিনি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান ভ্রমণ করেন। শেখ মুজিব বাংলার জনগণকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-নির্যাতন সম্পর্কে সচেতন করেছিলেন। তার বাগ্মীতা, নেতৃত্ব, জনসম্পৃক্ততা এবং সাংগঠনিক দক্ষতা নির্বাচনের ফলাফলকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ৩০৯ টি আসনের মধ্যে ২২৮ টি আসনে জয়লাভ করে। শুধু নির্বাচনী বিজয়ই নয়, তরুণ শেখ মুজিবের সম্মোহনী নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা বিরাজ করতে থাকে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসকশ্রেণীর শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামলে তাকে প্রায় ১২ বছর বন্দী থাকতে হয়েছিল।

এদেশের মানুষকে শোষণ, নিপীড়ণ ও বৈষম্য থেকে মুক্ত করতে বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই দাবি উত্থাপনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি তার অবস্থান বুঝতে পারে এবং তার অধিকারের বিষয়ে আরও সোচ্চার হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিক ৬ দফা কর্মসূচিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশের যাবতীয় রসদ ছিল। ছয় দফার পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য তিনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটি থানা, মহকুমা (এখন জেলা), বৃহত্তর জেলা এবং বিভাগ পরিদর্শন করেন। ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবী সকলকে তিনি ছয় দফার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করেন।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি ছয় দফার জন্য ম্যান্ডেট চেয়েছিলেন। এই ছয় দফা পরবর্তীতে স্বাধীনতার এক দফায় রূপান্তরিত হয়। ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়। ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তার বিচার শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনে ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমিকসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। গড়ে ওঠে গণআন্দোলন।

১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন 'সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ' গঠন করে। ১৯৬৯ সালের ১৮ জানুয়ারি পরিষদ কর্তৃক ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্ররা একসঙ্গে এই আন্দোলনে অংশ নেয়।

আগরতলা মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহাকে গুলি করে হত্যা করা হলে আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান ঘোষণা দিতে বাধ্য হন যে তিনি পরবর্তী নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন না। প্রবল প্রতিরোধের সামনে সরকার আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য আসামিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সবকটি আসনে (জাতীয় ও প্রাদেশিক) বিপুল বিজয় অর্জন করে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮ টি আসনে জয়লাভ করে। এবং জাতীয় পরিষদে (পূর্ব পাকিস্তান) ১৬৯টির মধ্যে ১৬৭টিতে বিজয় লাভ করে। এই বিজয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।

বঙ্গবন্ধুর ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উদ্ভব ঘটে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফলে তার প্রতিফলন ঘটে। শেখ মুজিব হঠাৎ করে 'বঙ্গবন্ধু' হয়ে যাননি। তিনি প্রতিটি প্রয়োজনে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং আস্থা অর্জন করেছেন।

১৯৭০ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে একটি বিপর্যয়কর ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। এই ধ্বংসযজ্ঞে প্রায় ৫০০,০০০ মানুষ মারা যায়। পাকিস্তানি শাসক শ্রেণী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও তার দল আওয়ামী লীগ জনগণকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছে। এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন গণমানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু তথা বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমসি শুরু করে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান কয়েকবার জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেন। বাঙালিরাও ধীরে ধীরে ক্রোধে ফুঁসে উঠতে থাকে।

এরই প্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সাবেক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তাঁর ভাষণ বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করেছিল। ভাষণে তিনি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। একই সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য কার্যকর প্রেরণা ও সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়। এর গুরুত্ব ও প্রভাব বিবেচনা করে ৪৬ বছর পর ইউনেস্কো ৭ই মার্চের ভাষণকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ডকুমেন্ট’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

৭ই মার্চের পর পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। আলোচনার নামে শাসকগোষ্ঠী যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর বর্বরোচিত গণহত্যা চালায়। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের আগে ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

শুরু হয় বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১০ এপ্রিল 'মুজিবনগর সরকার' গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানে বন্দী থাকা অবস্থায় এই সরকারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। দীর্ঘ নয় মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হয় তার নামে।

দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে তিনি ধাপে ধাপে একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের জন্য বাঙালিকে প্রস্তুত করেন। এবার তারা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় শেখ মুজিব ছিলেন একজন তরুণ ছাত্রনেতা। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব, ছয় দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি জাতীয় নেতা হয়ে ওঠেন। আগরতলা মামলা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়। শেখ মুজিব বাঙালির ‘বঙ্গবন্ধু’ হন।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় বঙ্গবন্ধুকে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা করে তোলে। ৭ই মার্চের ভাষণ, ২৬শে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং পাকিস্তানের কারাগারে থেকেও বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশের প্রতি তাঁর অটল ভালোবাসা ও অঙ্গীকার তাঁকে জাতির পিতার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। বঙ্গবন্ধুর সমগ্র জীবন উৎসর্গ ছিল বাংলা ও বাঙালি, বাংলার মাটি ও মানুষের জন্য। আর এ কারণেই স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু সমার্থক হিসেবে বিবেচিত হয়।

ড. মতিউর রহমান: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী।

   

বিশ্ব শিক্ষক দিবসের ভাবনা: শিক্ষক- আলোর ফেরিওয়ালা



মাহবুবুর রহমান তুহিন
বিশ্ব শিক্ষক দিবসের ভাবনা: শিক্ষক, আলোর ফেরিওয়ালা

বিশ্ব শিক্ষক দিবসের ভাবনা: শিক্ষক, আলোর ফেরিওয়ালা

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে আমরা কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতায় আত্মমর্যাদা ও সম্মান নিয়ে শিক্ষকের উপলদ্ধির কথা পড়েছি। এটি আমাদের বিদ্রোহী কবি নজরুলের ‘চির উন্নত মম শির’ কথাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। কবিতার কয়েকটি পঙক্তি:

শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার

দিল্লীর পতি সে তো কোন্ ছার,

ভয় করি না’ক, ধারি না’ক ধার, মনে আছে মোর বল,

বাদশাহ্ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল।

যায় যাবে প্রাণ তাহে,

প্রাণের চেয়েও মান বড়, আমি বোঝাব শাহানশাহে।

এখনও এ কবিতা আমাদের মানসপটে জাগ্রত। শিক্ষকের মর্যাদার বিষয়ে এত চমৎকার কবিতা বাংলা সাহিত্যকেও সমৃদ্ধ করেছে। বহুল পঠিত এ কবিতা এখনও পাঠকনন্দিত ও প্রাসঙ্গিক।

শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়ার প্রসঙ্গে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘একদিন তরুণ বয়সে, স্বপ্নতাড়িতের মতন এসে যোগ দিয়েছিলাম শিক্ষকতায়। প্রতিটা শিরা-ধমনিকে সেদিন যা কামড়ে ধরেছিলো তা এক উদ্ধাররহিত স্বপ্ন-সমৃদ্ধ মানুষ গড়ে তোলায় অংশ নেবার স্বপ্ন-সেইসব মানুষ যারা একদিন জাতির জীবনে পালাবদল ঘটাব।’

শিক্ষক কী করেন?

একজন শিক্ষক তার স্বপ্ন-সাধ-আকাঙ্ক্ষা তার ছাত্রদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ  তাঁর ‘নিষ্ফলা মাঠের কৃষক’ গ্রন্থে বলেন, ‘আমি সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলাম। সাহিত্যের স্বপ্ন ও সৗন্দর্য আজীবন আমার চেতনা-জগতে যে-হীরের দীপ্তি ছড়িয়েছে আমি সেই উজ্জ্বলতাকে ছাত্রদের ভেতর ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছি। তাদের সেই আনন্দে উজ্জীবিত করতে চেয়েছি। পরীক্ষায় ছাত্রদের বেশি নম্বর পাওয়াবার জন্যে পরিশ্রম করে জীবন নিঃশেষ করাকে আমার কাছে দুর্লভ মানব জন্মের অপচয় বলেই মনে হয়েছে। জীবন কত দীপান্বিত ও জ্যোতির্ময় তা একজন ছাত্র সবচেয়ে ভালো করে জানতে পারে তার জীবনের দীপান্বিত শিক্ষকদের কাছ থেকে। বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন কিংবা চারপাশের বড় বা সাধারণ মানুষ – কেউই এ ব্যাপারে শিক্ষকের সমকক্ষ নন। জীবনের সামনে দীর্ঘদিন অবিচলভাবে দাড়িয়ে শিক্ষক ছাত্রদেরকে জীবনের মহিমান্বিত রূপটি চিনিয়ে যেতে থাকেন

শিক্ষক দিবস উপলক্ষে সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দকে শ্রদ্ধা, আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। শিক্ষকগণ মানুষ গড়ার কারিগর। জাতির চালিকাশক্তি। আলোকবর্তিকা। শিক্ষক শিক্ষার্থীকে জ্ঞান, সমাজকে আলো, দেশকে দেন সমৃদ্ধি। শিক্ষক আমাদের বাতিঘর। শিক্ষক হচ্ছে সেই প্রদীপ যে প্রদীপ অসংখ্য প্রদীপকে প্রজ্জ্বলিত করে, অথচ নিজের ঔজ্জ্বল্য এতটুকু ম্লান হয় না তাতে। বাবা-মায়ের পরে শিক্ষকগণই হচ্ছেন একমাত্র  নিঃস্বার্থ গুনীজন, যারা চান তাদের শিক্ষার্থীগণ তাদের চেয়েও সফলতা অর্জন করুন। আমাদের মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) ছিলেন মানবজাতির শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। 

একজন সফল মানুষের পেছনে শিক্ষকের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। তিনি যে পড়ুয়াকে শেখাবেন, তাই নয়। তিনি তাকে জীবনে চলার পথে পরামর্শ দেবেন, ব্যর্থতায় পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেবেন, সাফল্যের দিনে নতুন লক্ষ্য স্থির করে দেবেন। তিনি তাকে শুধু সফল নয়, একজন ভাল মানুষ হতে শেখাবেন। মানুষ মনে করে  সমাজের একজন দায়িত্বশীল ও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলেন শিক্ষক। কারণ তাঁদের আন্তিরক প্রয়াস পৃথিবীর ভাগ্যকে প্রভাবিত করে। তাই আমার বলতে ইচ্ছে করে।

চোখেতে দিয়েছ স্বপ্ন হাজার

বুকে জাগিয়েছ আশা,

তুমি শিক্ষক, তুমি মহান

আলোর পথের দিশা।

শিক্ষার লক্ষ্য-

শিক্ষা চেতনাকে শাণিত করে, বুদ্ধিকে প্রখর করে, বিবেককে জাগ্রত করে। শিক্ষা আত্মিক মুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটায়। শিক্ষা মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক সৃষ্টির দুয়ার খুলে দেয়। এ দুয়ার আমাদের জ্ঞানের পথ দেখায়। আমরা জানি জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব। তাই মুক্তির বিশাল ভূবনে নিজেকে আবিস্কার করতে হলে একটি জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ নির্মাণের বিকল্প  নেই। শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত হয়েই সেই জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ নির্মাণ সম্ভব।

শিক্ষা ছাড়া জাতির উন্নতি যে সম্ভব নয়, তা অনুধাবন করেছিলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেটা তাঁর শিক্ষাদর্শনে প্রতিফলিত হয়েছে। ১৯৭২ সালে শিক্ষকদের উদ্দেশে এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আগামী প্রজন্মের ভাগ্য শিক্ষকদের ওপর নির্ভর করছে। শিশুদের যথাযথ শিক্ষার ব্যত্যয় ঘটলে কষ্টার্জিত স্বাধীনতা অর্থহীন হবে’।

তাই লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত সদ্য স্বাধীন দেশকে তাঁর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’য় বিনির্মাণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ১৯৭২ সালে সংবিধানে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার অঙ্গীকার সন্নিবেশ করেন।

প্রাথমিক শিক্ষার সোপান

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭২৪ জন শিক্ষককের চাকুরি সরকারিকরণের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির সোপান রচনা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে ২০১৩  সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২৬ হাজার ১৯৩টি রেজিস্টার্ড ও কমিউনিটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণসহ প্রধান শিক্ষকের পদকে দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা প্রদান এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতনস্কেল একধাপ উন্নীকরণসহ ১ লাখ ৫ হাজার ৬১৬জন শিক্ষকের চাকুরি সরকারিকরণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে এটি সর্বজন স্বীকৃত আরেকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

সরকারের পদক্ষেপ-

বর্তমান সরকার শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা ও গুনগত মান বৃদ্ধি এবং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে  যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারি প্রাথিমক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কল্যাণে অতিসম্প্রতি শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট বিল  জাতীয় সংসদে পাশ হয়েছে।  শিক্ষকদের হয়রানি, দুশ্চিন্তা ও ঝামেলা থেকে পরিত্রান দিতে অনলাইনে শিক্ষক বদলি চালু হয়েছে। পরিমার্জিত পাঠ্যক্রমের সাথে শিক্ষকদের খাপ খাইয়ে নিতে প্রশিক্ষণের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। শিক্ষক ঘাটতি দূর করতে চলতি বছরের শুরুতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ৩৭ হাজর ৫ শত ৭৪ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে; যা স্বাধীনতার পর সর্বোচ্চ। আরও নতুন শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষকদের ম্যাথ অলিম্পিয়াডের মাস্টার ট্রেইনারের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বৃটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে ইংরেজী বিষয়ে মাস্টার ট্রেইনার হিসাবে গড়ে তোলার কাজ চলমান আছে। প্রতিটি বিষয়ের মাস্টার ট্রেইনারদের দ্বারা পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষককে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার এবং প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লবের এ সময়ে শিক্ষায় তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সহজে, সুন্দর ও কার্যকরভাবে পাঠদান করতে শিক্ষকদের দ্বারাই বিভিন্ন বিষয়ে কন্টেন্ট ডেভেলপ করা হয়। প্রযুক্তির সাবীল ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ, মাল্টি মিডিয়া সরবরাহ করা হয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগ ও ওয়াই-ফাই সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। যাতে শিক্ষকগণ এসব ল্যাব ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষা প্রদান করতে পারেন।

প্রতিষ্ঠার প্রায় চারদশক পর অতিসম্প্রতি  জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) আইন 2023 অনুমোদিত হয়েছে। এ আইন পাশের ফলে একটি আধুনিক, যুযোপযোগী প্রশিক্ষণ একাডেমি হিসেবে নেপের বিকশিত হবার দুয়ার উন্মুক্ত হবে। এ প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা পদায়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও কারিকুলাম উন্নয়নেও এ প্রতিষ্ঠান কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণা পরিচালনা, গবেষণা জার্নাাল প্রকাশের পাশাপাশি নেপ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মেলন ও কর্মশালার আয়োজন করতে পারবে। এ আইনের আওতায় নেপের আঞ্চলিক কার্যালয়ে স্থাপনের মাধ্যমে নেপ আরও ছড়িয়ে দেবার পথ উন্মুক্ত হবে।

আগামীর পথ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার পুরোনো ধারার শিক্ষার খোলনলচে পাল্টে এমন এক নতুন শিক্ষার বীজ বপনের কাজে হাত দিয়েছে, যা শিক্ষার্থীর মস্তিস্ক ও পিঠ থেকে মুখস্থবিদ্যার বোঝা ঝেড়ে ফলে তাদের কৌতুহল, জিজ্ঞাসা, অনুসন্ধান, গবেষণা ও ভাবনার শক্তিকে জাগাবে ও নেতৃত্বের গুনাবলী তৈরিতে উপযোগী করে তুলবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর  সম্মিলনে শ্রেণিকক্ষেই প্রতিটি জিজ্ঞাসা ও জানার মাধ্যমে শিশুর ভাব-ভাবনার উত্তরণে  সরকার গুরুত্বারোপ করেছে। এর ফলে বয়সোচিত যোগ্যতা এবং সরাসরি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিশু তার জানার পরিধি বাড়াবে, আপন ভূবন সাজাবে। সে নিজেই নানা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবে, তা মোকাবেলা করে অভীষ্ট গন্তব্য পৌঁছাবে। স্কুল শিশুদের ভীতির নয় প্রীতির জায়গা হবে। সমম্বরে শিশুরা বলবে-

আমাদের স্কুল/

আনন্দের এক রঙিন ফুল

সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দের প্রতি নিবেদন

আপনারা শিক্ষকতাকে মহান পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন, এ জন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপণ করছি। আপনারা নীতি ও আদর্শবোধ শেখানোর মাধ্যমে প্রতিটি শিশুকে দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। তাদের মাঝে দেশপ্রেম, কর্তব্যবোধ জাগ্রত করে নিয়মানুবর্তিতা ও সময়ানুবর্তিতার অনুশীলনের মাধ্যমে তাদেরকে আগামী দিনের যোগ্য নাগরিক হিসেব গড়ে উঠবার প্রেরণা আপনারাই যোগাতে পারেন। এ জন্য আপনাদের উদ্যোগী ও নিবেদিত হতে হবে। প্রতিটি শিশুর পাঠ্য বইয়ের যথার্থ অনুশীলনের মাধ্যমে জ্ঞানের অন্বেষণ ও মানবিক মূল্যবোধের উন্মেষ ও বিকাশে আপনারাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। আমরা আপনাদের পাশে আছে সবাই। দেশ ও জাতি আপনাদের অবদান চিরদিন স্মরণ করবে।

শেষের কথা

শিক্ষক দিবসের এ দিনে আমরা শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ ও মূল্যায়ন করবো। এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার জন্য শিক্ষক: শিক্ষক স্বল্পতা পূরণ বৈশ্বিক অপরিহার্যতা’- এটি শুধু চার দেয়ালের মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে অনুধাবন, উপলদ্ধি ও আত্মস্থ করবো। আমাদের জাতিসত্ত্বার জাগরণ ও প্রতিটি অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে শিক্ষকদের বিশাল-বিরাট ও ব্যাপক। এ ভূমিকা পর্যালোচনা করে ২০৪১ এর স্মার্ট বাংলাদেশে শিক্ষকের ভূমিকা কী হতে পারে আসুন সে রূপরেখা নির্নয় করি।

মাহবুবুর রহমান তুহিন, সিনিয়র তথ্য অফিসার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

;

ত্রিদেশীয় সীমান্ত অঞ্চলে সংঘাত নিরসন ও উন্নয়ন ভাবনা



ব্রিঃ জেঃ (অবঃ) হাসান মোঃ শামসুদ্দীন
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারত সীমান্ত সংলগ্ন দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই অঞ্চলের সংঘাত যেন বেড়েই চলছে। এর শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে নির্মম অত্যাচার, নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আগমনের মধ্য দিয়ে। প্রায় রোহিঙ্গা শূন্য রাখাইনে এরপর কিছুদিন শান্তি বিরাজ করলেও এক বছরের মধ্যেই আরকান আর্মির (এ এ) সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড সংঘর্ষ শুরু হয়। এর এক পর্যায়ে মিয়ানমার বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ও প্রতিবেশী দুদেশের মধ্যে অনভিপ্রেত ঘটনার সৃষ্টি হয়। মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ সংঘাত মাঝে মাঝেই সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে হুমকি সৃষ্টি করছে যা এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার অন্তরায়।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে প্রায় তিন বছর ধরে মিয়ানমারে সশস্ত্র বিপ্লব চলমান, মিয়ানমারের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সামরিক শাসনের বিরোধিতা করে চলছে। চলমান পরিস্থিতি যাচাই করতে মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং, স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের (এসএসি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সারা দেশে চলমান শাসন সম্পর্কে জনমত জরিপ করার জন্য প্রেরণ করেছে বলে জানায়। সামরিক শাসনের বিরোধীদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অভিযানের অংশ হিসাবে চলমান গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং প্রাণঘাতী বিমান হামলার পর এই জনমত জরিপটির বিষয় আলোচনায় আসে। মিন অং হ্লাইং এসএসির জাতিগত সদস্যদের কাচিন, কায়াহ, চিন, মোন, রাখাইন এবং শান রাজ্য এবং জাতিগত অঞ্চলে পাঠায়। তারা স্থানীয় ধর্মীয় নেতা, ব্যবসায়ী মালিক, সামাজিক সংগঠনের সদস্য এবং সম্প্রদায়ের প্রবীণদের চলমান শাসনের সাথে সহযোগিতা করার আহ্বান জানায়।

২৮ সেপ্টেম্বর স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের এক বৈঠকে জান্তা প্রধান ১৫ অক্টোবর দেশব্যাপী যুদ্ধবিরতি চুক্তির অষ্টম বার্ষিকীতে বিদেশি সরকার প্রধানদেরকে আমন্ত্রণ জানানোর কথা বলেন। সেই অনুষ্ঠানে কিছু দেশের সরকার প্রধান এবং কিছু দেশ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানা যায়। থেইন সেইনের শাসন আমলে আটটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন দেশব্যাপী এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি (এনসিএ) স্বাক্ষর করেছিল। ক্ষমতাচ্যুত ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি সরকারের সময় আরও দুটি দল এতে যোগ দিয়েছিল। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন, চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট এবং অল বার্মা স্টুডেন্টস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট নামের তিনটি প্রধান স্বাক্ষরকারী কারেন, মন ও চিন রাজ্যের পাশাপাশি বাগো অঞ্চল ও মধ্য মিয়ানমারের জনগণ জান্তার বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়। অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের প্রাচীনতম ও সবচেয়ে শক্তিশালী জাতিগত সংগঠন কেএনইউ এনসিএকে অকার্যকর ঘোষণা করে।উল্লেখ্য যে, সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেমিয়ানমার গৃহযুদ্ধে জর্জরিত।

মিয়ানমারসামরিক বাহিনী সেপ্টেম্বর মাসে কাচিন এবং উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে তাদের আক্রমণ জোরদার করে। দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধের মুখোমুখি হওয়ার প্রেক্ষিতে সামরিক বাহিনী তাদের প্রতিরক্ষামূলক কৌশলে কিছু পরিবর্তন আনে।এই সংঘর্ষের ফলে উভয় রাজ্যেই প্রচুর সৈন্য ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। গত তিন মাস ধরে সেনাবাহিনী দেশটির অন্যতম শক্তিশালী জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ) এবং তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে । অনেক বিশ্লেষকের মতে, সাগাইং ও মাগওয়ে অঞ্চলে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কেআইএকে ক্রমবর্ধমান সশস্ত্র প্রতিরোধে সহায়তা করা থেকে বিরত রাখার জন্য সরকারি বাহিনী তাদের উপর এই হামলা চালায়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের পর থেকে কেআইএ সরকার বিরোধী কয়েক হাজার তরুণ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) কে ম্যাগওয়ে এবং সাগাইং অঞ্চলে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করেছে।

চীন সীমান্তবর্তী টিএনএলএ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত এলাকার নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে জান্তা সৈন্যদের সাথে সামরিকপন্থী মিলিশিয়া গ্রুপ মোতায়েন করেছিল। উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে জান্তার পাল্টা হামলার কারনে রাজ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল। এসব হামলায় বিমানবাহিনীও অংশ নিয়েছিল। সেপ্টেম্বর মাসে সরকারি বাহিনী ও টিএনএলএ’র মধ্যে ৪২টি সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সামরিক সরকার ড্রোন হামলা এবং শহুরে অভিযান সহ প্রতিরোধ গোষ্ঠী এবং ইএওগুলির নিরবচ্ছিন্ন আক্রমণের মুখোমুখি হচ্ছে। এসব ঘটনা সারা দেশে শাসকগোষ্ঠীকে হুমকির মুখে ফেলেছে এবং ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে। টিএনএলএ উত্তর শান রাজ্যের মুসে এবং কুটকাই টাউনশিপ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ায় চীনের সাথে প্রধান বাণিজ্য পথ মান্দালয়-মিউজ হাইওয়ের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণকে হুমকির মুখে ফেলেছে। কেবল মাত্র রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি এবং জান্তা অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বিধায় সেখানে আক্রমণ বন্ধ আছে।

জুলাইয়ের শুরুতে কাচিন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আরও ১০ টি ব্যাটালিয়ন পাঠানোর পরপরই সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়। কেআইএ, কাচিন রাজ্যের রাজধানী মাইটকিনা থেকে ওয়াইংমাও এবং ভামো ও মায়োথিট পর্যন্ত দুই দিকে অগ্রসর হওয়া জান্তা সৈন্য ও সামরিক বহরের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এইসব আক্রমণের ফলে বেসামরিক নাগরিকরা মাইটকিনা-ভামো হাইওয়ে ব্যবহার করতে পারছে না। সরকারি সৈন্যরা কেআইএর সদর দফতর লক্ষ্য করে আক্রমণ পরিচালনা করতে গিয়ে রাজ্যের অন্যান্য অংশ থেকে সৈন্যে সমাবেশ ঘটায়, এর ফলে অন্য এলাকাগুলোতে সৈন্য ঘাটতি দেখা দেয়। কেআইএ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সেনাদের উপস্থিতি না থাকা এলাকাগুলো দখল করে নেয়। সেপ্টেম্বর মাসে কাচিন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক সংঘর্ষে হয়েছে। কেআইএ বেশ কয়েকটি জান্তা ফাঁড়ি দখল করার ফলে সরকারি সৈন্যদের ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তা দক্ষিণ-পূর্ব মিয়ানমারে ৬০টিরও বেশি সামরিক শিবির হারিয়েছে বলে ২৬ সেপ্টেম্বর কারেন পিস সাপোর্ট নেটওয়ার্ক (কেপিএসএন) কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ৮ সেপ্টেম্বরে তাদের হিউম্যানিটারিয়ান আপডেটে জানিয়েছে যে, অভ্যুত্থানের পর থেকে পূর্ব বাগো ও তানিনথারি অঞ্চল এবং কারেন ও মন রাজ্যে মোট ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৬০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট বা এসিএলইডি নামের একটি সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে মিয়ানমারকেবিশ্বের সবচেয়ে সংঘাতপ্রবণ দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এ গবেষণায় বলা হয় যেবিশ্বের সবচেয়ে বেশি সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে মিয়ানমারে। কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গাদের ওপরে নৃশংস নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের দেশ ছাড়া করার পর এখনো সেখানে আঞ্চলিক সন্ত্রাস, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরে নির্যাতনের ঘটনা এবং রাজনৈতিক হানাহানি চলছে।

জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং আগামী বছরের অক্টোবরে দেশব্যাপী আদমশুমারি এবং সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেয়ার পর মিয়ানমারের অভিবাসন মন্ত্রী মিন্ট কিয়াং বেইজিং সফর করে আসন্ন আদমশুমারি পরিচালনা এবং মিয়ানমারে একটি ইলেকট্রনিক-আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম চালু করতে সহায়তা চায়। এর আগের আদমশুমারি পলিচালনায় জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল এবং বেশ কয়েকটি উন্নত দেশ মিয়ানমারকে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল। বর্তমান সামরিক সরকার এই কাজে সাহায্যের জন্য বেইজিংয়ের সহায়তা চাইছে। মিয়ানমার সরকার ২০২৪ সালের অক্টোবরে জাতীয় আদমশুমারি করবেএবং এর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানায়, তাই অনেক বিশ্লেষকের মতে মিয়ানমারেরপ্রস্তাবিত নির্বাচন ২০২৫ সালের আগে হওয়ার সম্ভাবনা কম।

মিয়ানমারের আরেক প্রতিবেশী দেশ ভারতের মণিপুরে ও অশান্তি বিরাজ করছে। গত মে মাসে মণিপুরের জাতিগত সংঘাতের পর থেকে ভারত-মায়ানমার সীমান্তে অস্ত্র চোরাচালান ও যুদ্ধের সরঞ্জামাদির প্রবাহ বেড়েছে বলে জানা যায়। ভারতের দাঙ্গাপীড়িত মণিপুরের সঙ্গে মিয়ানমারের ৯৫ কিলোমিটার এবং মিজোরামের সঙ্গে মিয়ানমারের ৫১০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, এই অঞ্চলের কিছুটা বাংলাদেশেরও সীমান্ত ঘেঁষা। মিয়ানমার থেকে ভারতের মিজোরামে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাচার নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে বলে সেখানকার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে ভারত কত্তৃক পরিচালিত চোরাচালান বিরোধী অভিযানেঅবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাজেয়াপ্ত করা হয়। প্রতিবেশী দেশের সশস্ত্র সংঘাতের প্রভাব এবং সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে আসা মানুষেরা আন্তঃসীমান্ত নেটওয়ার্ক এবং চোরাচালান সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়িয়ে চলছে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশগুলোর আভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা জরুরি। চীন রাজ্যের পালেতোয়া টাউন শিপে মিয়ানমার বাহিনী ও আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে সংঘর্ষের কারণে শত শত মানুষ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে গেছে। বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের অনেকেই ভারতে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা যায়। প্রতিবেশী মণিপুরের চলমান জাতিগত সংঘাতে মিয়ানমারের নাগরিকদের সহায়তার সম্ভাবনা কেবারে অস্বীকার করাও যাবে না। এক কথায় পুরো এই অঞ্চলজুড়ে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির বদলে সংঘাত ও অশান্তি বিরাজ করছে।

এত কিছুর মাঝেও কিছু কিছু আশার আলো দেখা যায়, প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর এই বছর শান রাজ্যে মিয়ানমারের বিখ্যাত হট এয়ার বেলুন উৎসব পুনরায় শুরু হবে বলে নিশ্চিত করেছেন আয়োজকরা। আগামী ২১-২৭ নভেম্বর শান রাজ্যের রাজধানী তাউংগির আওয়ায়ার হট এয়ার বেলুন স্কোয়ারে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এই অনুষ্ঠানটি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে পর্যটন শিল্পকে আকর্ষণীয় করবে ফলে স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসলে এই অঞ্চলে যোগাযোগ, বাণিজ্য ও পর্যটন খাতে ব্যাপক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে দক্ষিন ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে দ্রুত যাতায়াত ও পরিবহনের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে যা এই অঞ্চলে বাণিজ্য প্রসারিত করে সমৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। ভু- কৌশলগত গুরুত্ববহ এবং প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ামারের এই অঞ্চলে পাহাড়, বনাঞ্চল, সমতল, নদী ও সাগর রয়েছে যা একত্রে একটা মনোরম পর্যটন অঞ্চল হতে পারে। এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ দেশগুলোর উন্নয়নেও অবদান রাখতে পারে। একই সাথে এই অঞ্চলে যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক সংযোগ এক অভাবনীয় উন্নয়নের সূচনা করতে পারে যা এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে। একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে জাতিগত সহিংসতা ছেড়ে আমরা কি সহমর্মিতা ও উন্নয়নের কথা চিন্তা করতে পারি না?

 

;

কফি আবিষ্কারের গল্প, পানের ইতিহাস মজার ও গোলমেলে



মারিয়া সালাম
কফি আবিষ্কারের গল্প, পানের ইতিহাস মজার ও গোলমেলে

কফি আবিষ্কারের গল্প, পানের ইতিহাস মজার ও গোলমেলে

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ আন্তর্জাতিক কফি দিবস। কফি আবিষ্কারের গল্প আর কফি পানের ইতিহাস বেশ মজার আবার গোলমেলে। ধারণা করা হয়, কফি আবিষ্কার হয়েছে ৮৫০ সালের দিকে ইয়েমেন বা ইথিওপিয়ায়। কফির চাষ আর বাজারজাতকরণ শুরু হয় প্রথম ইথিওপিয়ায়। শুরু যেখানেই হোক, ধীরেধীরে কফি সেবন অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

প্রথম দিকেত কফি রেস্তোরাঁর কথা জানা যায় চতুর্দশ বা পঞ্চদশ শতকের দিকে। ইস্তাম্বুলের কাছাকাছি শহরগুলোতে ব্যাপকভাবে কফি জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

আরব দেশগুলোতে কফি ‘কাবেহ খানাহ’ বা ‘কিভা হান’ নামে পরিচিত ছিল। কফি পান করাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় জমজমাট আড্ডা। আড্ডা থেকেই চিন্তার আদান-প্রদান শুরু হয় এবং এই আড্ডা শাসকদের বেশ ভয় দেখিয়ে দেয়। পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে মক্কায় সব ধরনের কফি রেস্তোরাঁ এবং মুসলমানদের জন্য কফি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

অটোমান সাম্রাজ্যে কফি খুবই জনপ্রিয় ছিল। সেই ভয়ে, সুলতান চতুর্থ মুরাদ একে অবৈধ ঘোষণা করেন। এমনকি কফি পান করা অবস্থায় কাউকে ধরা হলে তার শিরচ্ছেদের নির্দেশও দেওয়া হতো। এতকিছুর পরেও কফি পানকারীকে তার অভ্যাস থেকে বিচ্যুত করা যায়নি।

ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে ভেনিস দিয়ে ইউরোপে যাত্রা শুরু করে কফি। সেখানে এর প্রচলন আর জনপ্রিয়তা বাড়লে, চার্চও ভীত হয়ে উঠে। তারা কফিকে “শয়তানের নির্মম আবিষ্কার” বলে অভিহিত করে।কফির ইতিহাস নিয়ে পল ক্রিস্টালের একটা বই আছে। বইটির নাম “কফি: আ ড্রিংক ফর দ্য ডেভিল”।

কফি যে 'অলওয়েজ আ ড্রিংক ফর ডেভিল' তাতে আমি মোটামুটি নিসন্দেহ। কেন? সে গল্পটা বলি-  একবার না বুঝেই, বিনা কারণেই একজনকে কফির দাওয়াত দিয়ে ফেললাম। কেন দিলাম, সে প্রশ্নের উত্তর আল্লাহই জানেন। দাওয়াত দিয়েই বুঝলাম মস্তবড় ভুল হয়ে গেল। খুব অনিচ্ছাসত্ত্বেও গেলাম দেখা করতে, নির্দিষ্ট সময়ের একঘন্টা পরে। ঝিপঝিপ বৃষ্টি, সেদিন সন্ধ্যা পড়ে গেছে সময়ের অনেক আগেই। আমি রিকশা থেকে নামতেই দেখি সেই অতিথি দাঁড়িয়ে। খুবই নিম্নমানের একটা কফিশপে বসলাম আমরা কারণ, সেখানে এর চেয়ে ভালো কোন রেস্তোরাঁ দেখলাম না। আমি নিজের উপরেই খুব বিরক্ত ছিলাম, কি করব বুঝতেই পারছিলাম না। টেক্সট করে আরেক বন্ধুকে আসার অনুরোধ করলাম। টুকটাক কথা দিয়ে শুরু হয়ে গল্প জমে গেল। উঠব, উঠছি করতে করতে তিনকাপ কফি হয়ে গেল। এরমধ্যেই বন্ধু এসে হাজির। তার তোড়জোড়েই খুব জমে যাওয়া আড্ডা ভেঙে বাধ্য হয়েই রাত এগারোটায় রেস্তোরাঁ থেকে বের হলাম। ফিরতি পথে পুরা রাস্তাই বলতে বলতে আসলাম, কফি অবশ্যই শয়তানি পানীয়। প্রতিদিন সকালে উঠে কফি খেতে খেতে এখনও বলি, অবশ্যই কফি শয়তানি পানীয়।

;

কক্সবাজারে ওভার ট্যুরিজমের আর্থ-সামাজিক প্রভাব



ড. মতিউর রহমান
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি মনোরম উপকূলীয় শহর কক্সবাজার দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে হয়ে পরিগণিত হয়ে আসছে। বঙ্গোপসাগর বরাবর ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ অবারিত বালুকাময় উপকূলরেখার জন্য পরিচিত, কক্সবাজার কয়েক দশক ধরে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের জন্য একটি আকষর্ণীয় স্থান হয়ে উঠেছে। যাই হোক, আদিগন্ত সৈকত এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হাজির হয়েছে – আর তা হল ওভারট্যুরিজম বা অতি-পর্যটন।

কক্সবাজারকে প্রায়ই পৃথিবীর অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এর সূর্যস্নাত সৈকত, প্রশান্তিদায়ক তরঙ্গ এবং প্রাণবন্ত স্থানীয় সংস্কৃতি বিশ্বের সমস্ত কোণ থেকে পর্যটকদের আকৃষ্ট করেছে। শহরটি বিলাসবহুল রিসর্ট থেকে শুরু করে বাজেট-বান্ধব আবাসন, ভ্রমণকারীদের জন্য বিভিন্ন রকম উপাদেয় খাবারের পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গর্বিত। শহরের আইকনিক সমুদ্রের তীরে প্রমোনেড, যা লাবনি পয়েন্ট নামে পরিচিত, স্থানীয় উপাদেয় খাবার, হস্তশিল্প এবং সীশেল স্যুভেনির বিক্রি করে এমন বিক্রেতাদের দ্বারা ভরা একটি ব্যস্ততাপূর্ণ কেন্দ্র।

তদুপরি, কক্সবাজার সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করে, যা বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর প্রবাল প্রাচীরের আবাসস্থল। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মতো প্রধান শহর থেকে এর প্রবেশযোগ্যতা পর্যটকদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও পর্যটনের বৃদ্ধি অনস্বীকার্য সুবিধা নিয়ে এসেছে, এটি এই বৃদ্ধির স্থায়িত্ব এবং স্থানীয় সম্প্রদায় এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগও সৃষ্টি করেছে।

অতি-পর্যটন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। এটি এমন পরিস্থিতিকে বোঝায় যেখানে অত্যধিক সংখ্যক পর্যটক একটি গন্তব্যে যান, যা পরিবেশ, স্থানীয় সংস্কৃতি এবং বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মানের ক্ষতি করে। অত্যধিক পর্যটনের নেতিবাচক পরিণতি কক্সবাজার বিভিন্নভাবে ভোগ করছে।

প্রথমত, কক্সবাজার ভ্রমণকারী পর্যটকদের বিপুল সংখ্যা এই অঞ্চলের ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্রের উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। সমুদ্র সৈকতের ক্ষয় যা একসময় একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ছিল, সমুদ্রের খুব কাছাকাছি হোটেল এবং রিসর্ট নির্মাণের কারণে এটি আরও তীব্র হয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়নের কারণে এই অঞ্চলের আদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যা পর্যটকদের আকর্ষণ করত তা ক্রমশ বিলুপ্ত হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, শহরটির অবকাঠামো পর্যটকদের আগমনের সাথে মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে। যানজট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যা এবং অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধা দৈনন্দিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় সরকার এবং কর্তৃপক্ষ পর্যটন শিল্পের চাহিদা পূরণের জন্য অবিরাম চেষ্টা করছে, যার ফলে এই শহরের স্থায়ী বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার ওপর এর প্রভাব পড়ছে।

কক্সবাজারে অতি-পর্যটনের আর্থ-সামাজিক প্রভাব জটিল এবং বহুমুখী। যদিও পর্যটন এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সুযোগ এনে দিয়েছে, এটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। পর্যটন নিঃসন্দেহে স্থানীয় অর্থনীতিতে অর্থ যোগান দিচ্ছে। এটি আতিথেয়তা, পরিবহন এবং খুচরাসহ বিভিন্ন সেক্টরে চাকরি তৈরি করেছে। পর্যটকদের অবিরাম আগমনের কারণে ছোট ব্যবসা, যেমন রেস্তোরাঁ এবং স্যুভেনির শপগুলি সমৃদ্ধ হয়েছে৷ উপরন্তু, বর্ধিত অর্থনৈতিক কার্যকলাপ কিছু বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে।

পর্যটন খাতও উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ খুলে দিয়েছে। দর্শনার্থীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় উপকৃত হয়ে স্থানীয়রা তাদের নিজস্ব গেস্টহাউস এবং রেস্তোরাঁ চালু করেছে। এর ফলে অনেকের আয় বেড়েছে এবং জীবিকার উন্নতি হয়েছে।

যদিও পর্যটন অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে এসেছে, এই খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা স্থানীয় অর্থনীতিকে দুর্বল করে তুলেছে। মৌসুমী পর্যটনের কারণে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সারা বছর আয়ের ওঠানামা অনুভব করে। অফ-পিক সিজনে, অনেক প্রতিষ্ঠান টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করে, যার ফলে ব্যবসার মালিক এবং তাদের কর্মচারী উভয়ের জন্যই অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়।

কক্সবাজারে জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় স্থানীয় জনগণের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। পর্যটন খাত থেকে আবাসন এবং জমির চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে সম্পত্তির দাম বেড়েছে, সাধারণ বাসিন্দাদের জন্য বাড়ি ও জমি কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। এটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে মিশ্র অনুভূতি তৈরিতে অবদান রেখেছে, কারণ তারা তাদের শহরকে প্রাথমিকভাবে পর্যটকদের জন্য পরিবর্তিত হতে দেখেছে।

কক্সবাজারে অতি-পর্যটন শুধু শহরের ভৌগোলিক ল্যান্ডস্কেপই পরিবর্তন করেনি বরং এর সাংস্কৃতিক বুননেও প্রভাব ফেলেছে। পর্যটকদের আগমন ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ এবং সাংস্কৃতিক চর্চাকে হ্রাস করেছে। পর্যটক-বান্ধব অভিজ্ঞতার চাহিদা প্রায়ই স্থানীয় রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যের পণ্যীকরণের দিকে নিয়ে যায়, যা দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য নিছক দৃশ্য পণ্যে পরিণত করে।

অধিকন্তু, বহুজাতিক চেইন হোটেল এবং বিদেশী মালিকানাধীন ব্যবসার উত্থান স্থানীয় সংস্কৃতিকে আরও সংকোচিত করেছে। ঐতিহ্যবাহী বাজার এবং খাবারের দোকানগুলির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলির দ্বারা ছেয়ে গেছে, যা স্থানীয় অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্রতাকে নষ্ট করে দিয়েছে। এই সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে কক্সবাজারের পরিচিতি ও ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে।

কক্সবাজারে অতি-পর্যটনের পরিবেশগত প্রভাব সম্ভবত সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়। উপকূলরেখা বরাবর হোটেল এবং রিসর্টের অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কাঠামো উল্লেখযোগ্য সৈকত ক্ষয়ের দিকে পরিচালিত করেছে। এই ভাঙন শুধুমাত্র শহরের পর্যটন আকর্ষণকেই হুমকির মুখে ফেলে না বরং স্থানীয় জেলেদের জীবিকাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলে, কারণ সমুদ্রে তাদের প্রবেশাধিকার ব্যাহত হয়।

অধিকন্তু, পর্যটকদের ফেলে দেয়া প্লাষ্টিক কাপ, পানির বোতল ও অন্যান্য দ্রব্যাদি প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য তৈরি করে, যা প্রায়শই সমুদ্র এবং আশেপাশের অঞ্চলকে দূষিত করে। অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকাঠামো এবং অনুশীলনের ফলে সমুদ্র সৈকতে এবং শহরে দৃশ্যমান আবর্জনা দেখা দিয়েছে। এটি শুধুমাত্র পরিবেশেরই ক্ষতি করে না বরং পর্যটকদেরও নিরুৎসাহিত করে যারা আদি
প্রাকৃতিক পরিবেশ খুঁজতে আসে।

কক্সবাজারে অত্যধিক পর্যটন সমস্যা সমাধানের জন্য একটি বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন যা পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের সাথে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ভারসাম্য বজায় রাখে। পর্যটকদের আগমনকে আরও দক্ষতার সাথে পরিচালনা করার জন্য পর্যটন ব্যবস্থার উন্নতি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার মতো বিষয়গুলোতে বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপকূলরেখার কাছাকাছি হোটেল ও রিসর্ট নির্মাণের ক্ষেত্রে কঠোর প্রবিধান প্রয়োগ করা এবং দায়িত্বশীল নির্মাণ কাঠামো অনুশীলনের প্রচার করা সৈকত ক্ষয় কমাতে সাহায্য করতে পারে। পর্যটন পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্থানীয় সম্প্রদায়কে জড়িত করা নিশ্চিত করতে পারে যে তাদের স্বার্থ বিবেচনায় নেওয়া হয় এবং তারা শিল্প থেকে উপকৃত হয়।

পর্যটন ব্যতীত অন্যান্য শিল্পকে সমর্থন করে এমন অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করে পর্যটনের মৌসুমী দুর্বলতা হ্রাস করতে পারে। সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ এবং স্থানীয় অভিজ্ঞতার সত্যতা প্রচার কক্সবাজারের অনন্য পরিচয় বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।

দায়িত্বশীল এবং টেকসই পর্যটন অনুশীলন সম্পর্কে পর্যটকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পরিবেশ ও সংস্কৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমাতে অবদান রাখতে পারে। এলাকাটি টেকসইভাবে ধারণ করতে পারে এমন সর্বাধিক সংখ্যক পর্যটক নির্ধারণ করা এবং পিক সিজনে দর্শনার্থীদের অবস্থানের সময়সীমা নির্ধারণ করা কিছু পরিবেশগত চাপ কমিয়ে দিতে পারে।

একটি শান্ত উপকূলীয় শহর থেকে একটি ব্যস্ত পর্যটন কেন্দ্রে কক্সবাজারের অভিযাত্রা অতি-পর্যটনের কারণে একটি চ্যালেঞ্জের তৈরি করেছে যা এই শহরের টেকসই পর্যটনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। যদিও পর্যটন অর্থনৈতিক সুযোগ এনে দিয়েছে, এটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের উপর গভীর আর্থ- সামাজিক এবং পরিবেশগত প্রভাবও ফেলেছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং স্থায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে যাতে কক্সবাজার তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভ্রমণকারীদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল হয়ে থাকে। এই মনোরম উপকূলে টেকসই পর্যটনের একটি রূপরেখা প্রণয়ন সরকারি, বেসরকারি, ব্যবসায়ী ও পর্যটকসহ সকল স্টেকহোল্ডারের অন্যতম দায়িত্ব।

ড. মতিউর রহমান: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী

;