আমাকে গালি দেবে কে?

  • তুষার আবদুল্লাহ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

তুষার আব্দুল্লাহ | ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

তুষার আব্দুল্লাহ | ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

অন্যকে গালি দিয়ে কী হবে? গালি তো আগে নিজেকেই দেয়া উচিত। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে যখন ক্ষমতাসীন দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানোর বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিলো, তখনই দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-পাতি নেতাদের অবৈধ অর্থের উৎসের খোঁজ পাওয়া গেলো। অবৈধ টাকা রোজগার করতে গিয়ে তারা কী কী নৃশংস কাণ্ড ঘটায়, অনৈতিকতার আশ্রয় নেয়, তার খানিকটা এখন উন্মোচিত।

উন্মোচনে যাদের আটক, গ্রেফতার করা হয়েছে বা যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে নিজেদের পরিচয়, সম্পৃক্ততা প্রত্যাহার করে নেয়ার হিড়িক চলছে। মূলধারার গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবশ্য সরকার , ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের সঙ্গে সেই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ রাখে এমন ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। গণমাধ্যম ফলাও করে সেই নাম এবং যাদের সঙ্গে ছবি ও ঘনিষ্ঠতা দেখা যাচ্ছে, তাদের মন্তব্য ও বক্তব্য প্রকাশ করতে উঠে পড়ে লেগেছে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু গণমাধ্যম অভিযুক্তদের সঙ্গে অন্যের সম্পর্কের প্রমাণ দিতে গিয়ে নিজেদের কথা ভুলে বসেছিল। খেয়াল করেনি তাদের সঙ্গেও ঐ ব্যক্তিদের দহরম মহরমের স্বাক্ষ্য প্রমাণ রয়ে গেছে। ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে সেই প্রমাণ। একদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র‍্যাবের মহাপরিচালক, আইজিপির পাশে অভিযুক্তদের ছবি দেখা গেছে। এখন দেখা গেলো গ্রেফতার হওয়া যুবলীগ নেতাকে সাংবাদিকদের একটি সংগঠন বিশেষ অতিথি করেছিল তাদের অভিষেক অনুষ্ঠানে সমাজসেবক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে। অনুষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এই দায় তো সাংবাদিক সংগঠনকেই নিতে হবে। কারণ ঐ ব্যক্তি ছিল তাদের অতিথি। সাংবাদিক সংগঠনের নেতা ও সদস্যরা অভিযুক্ত ব্যক্তির বিষয়ে অজ্ঞ এ কথা তো বিশ্বাসযোগ্য নয়। তারা ঐ ব্যক্তিকে যে বিশেষ অতিথি করেছেন ‘বিশেষ অনুদান’-এর বিনিময়ে, একথা মুখ ফুটে না বললেও সকলের জানা।

আমাদের সাংবাদিকদের অনৈতিকতার সঙ্গে আত্মীয়তা হবার মূল মাধ্যম হচ্ছে সাংবাদিক সংগঠন। সাংবাদিক ইউনিয়ন, প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি পর্যন্ত হয়তো সহ্য করা গেছে। এই সংগঠনগুলো সামষ্টিক স্বার্থে কোনো গোষ্ঠীর বা ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়েছে আর্থিক সহায়তা –অনুদান। সামষ্টিক সুবিধা নিতে গিয়েও কোনো কোনো ব্যক্তির ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। তবে সইয়ে গেছে সকলে। কিন্তু ধীরে ধীরে সাংবাদিকতার বিভিন্ন বিট বা খাত ভিত্তিক সংগঠন তৈরি হতে থাকে। ২০/২৫ জন রিপোর্টার মিলে তৈরি করে ফেলছে রিপোর্টার্স ফোরাম। সংগঠন গঠনের পক্ষে সাফাই বা যুক্তি দিতে গিয়ে বলা হচ্ছে- সাংবাদিকতা করার ক্ষেত্রে বাধা ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতেই সংগঠিত হওয়া। কিন্তু গণমাধ্যম এবং এর বাইরের মানুষেরাও জানেন, বিদেশ সফর, বিশেষ খাতের তথ্যচিত্র তৈরি এবং টেন্ডারে প্রভাব রাখতেই কাজ করছে এই সংগঠনগুলো। এছাড়া নানা উপলক্ষ তৈরি করে চাঁদা, অনুদান সংগ্রহ আছে। বিভিন্ন উৎসবের বকশিস আসাটাও সহজ হয়। বেচারা সংগঠকরা হয়তো নিরুপায় হয়েই অনৈতিক আয়ের সঙ্গে জড়িত মানুষদের কাছে হাত পাতেন, কিংবা তাদের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য হন। এমনসব ছবিও ভাইরাল হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সাংবাদিকদের কারো কারো বিরুদ্ধে যে অবৈধ আয়ের কথা শোনা যায়। নানা অনৈতিক ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কের কথা বাতাসে উড়ে। এই দুর্নীতি ও অনৈতিকতার প্রথম পাঠ অনেকে নিয়ে নেন এ ধরনের সংগঠন থেকে। যেখানে অধিকাংশই জ্যেষ্ঠদের দ্বারা ব্যবহৃত হতে গিয়ে অনৈতিকার সঙ্গে জড়িয়ে যান। লোভের জাল ছিঁড়ে বের হয়ে আসতে পারেন কমজনই।

অথচ এই কয়েকজনের জন্যই সাংবাদিক সংগঠনগুলোর অসংখ্য সৎ ও ত্যাগী নেতাদের সমাজের কাছে বিব্রত হতে হচ্ছে। তাই শুধু রাজনৈতিক সংগঠন ও নেতাদের শুদ্ধি হবার তাগাদা না দিয়ে, নিজেদেরই শুদ্ধ হবার প্রয়োজন আগে।

তুষার আবদুল্লাহ: বার্তা প্রধান, সময় টেলিভিশন