নুসরাত হত্যার বিচার পেলো বাংলাদেশ

  • তুষার আবদুল্লাহ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

তুষার আবদুল্লাহ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

তুষার আবদুল্লাহ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

১শ ৮০ দিনের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়া স্বস্তির। তবে বাংলাদেশ এমন রায় নাও পেতে পারতো। বৃহস্পতিবার হত্যার বিচার পেয়ে নুসরাতের মা-বাবা এবং পরিবার যে স্বস্তি পেয়েছে, এখন প্রত্যাশা করছে উচ্চ আদালতে গিয়েও একই রায় বহাল থাকার।

চিত্র এর পুরো বিপরীত হতে পারতো। বাংলাদেশ জানতো নুসরাত আত্মহত্যা করেছে। হয় পরীক্ষায় খারাপ করার জন্য, নয়তো তার অন্য কোনো ব্যক্তিগত কারণে লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে নুসরাত। পরিবার জানতো যে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ- উদ-দৌলা ও সহচররা নুসরাতকে হত্যা করেছে। কিন্তু সমাজ, রাষ্ট্রকে ভুল বা মিথ্যে গল্প বিশ্বাস করানো হতো। যে গল্প এই ১শ ৮০ দিন হয়তো বাংলাদেশের মনেই থাকতো না। অপমান, লজ্জা ও আতঙ্কে আরো কুঁকড়ে যেতো নুসরাতের পরিবার।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে নিত্য এমন অনেক নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। শুধু যে নারীরা এর শিকার হচ্ছে তা নয়। নারীর পরেই দ্বিতীয় শিকার শিশু। স্বার্থের বলি হচ্ছে শিশুরা।

এছাড়া নিয়মিতই খবর আসছে, এইতো আজ যখন নুসরাত হত্যা মামলার রায় এলো ফেনী থেকে, তখনও চট্টগ্রাম থেকে খবর এলো মাদ্রাসা শিক্ষক দ্বারা শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়নের শিকার হবার কথা। আগের দিন ঢাকার বাড্ডা থেকে ৬ বছরের এক শিশুকে ছয় মাস ধরে ধর্ষণ করার খবর এসেছে। অভিযুক্ত নিকট প্রতিবেশী।

বিজ্ঞাপন

এই যৌন নিপীড়ন বা পীড়নের চেষ্টা, হত্যার সকল ঘটনার তদন্ত সকল সময়ে দ্রুত হয় এমন নয়। কোনো কোনো ঘটনার মামলাই নিতে রাজি হয় না থানা। মামলা নিলেও তদন্ত স্থবির হয়ে থাকে। তদন্ত চললেও তার গতি শামুকের চেয়েও ধীর। প্রভাবশালীদের চাপে কোনো কোনো মামলার অপমৃত্যু ঘটে। এমন খবরওতো আমরা জানি পুলিশই কোনো কোনো মামলার নথি বা অভিযুক্তের নামটাই পাল্টে দেয়।

নুসরাতের পরিণতি তেমনই হতে যাচ্ছিল। গণমাধ্যমে সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নুসরাতের জবানবন্দী নেবার ভিডিওচিত্র প্রকাশের পর আমরা সেই প্রমাণ পাই। পুলিশের ঐ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রধান আসামী অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে কাজ করছিলেন। কিন্তু স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা নুসরাতের ঐ জবানবন্দী নেয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অধ্যক্ষের দ্বারা নিপীড়নের শিকার হয়েও নুসরাত যে লড়ে গেছে বার্ন ইউনিটের শয্যা থেকেও, তাতে নুসরাত সাহসী কিশোরীর এক উদাহরণ হয়ে ওঠে।

নুসরাতকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। নুসরাতের মৃত্যু হলে, জেগে ওঠে পুরো দেশ। তৎকালীন পুলিশ সুপার, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব ক্ষোভের আগুন নেভাতে পারেনি। সেই আগুনের তাপ বিচার প্রক্রিয়াকে ১৬ জনের বিরুদ্ধেই ফাঁসির রায়ে এনে পৌঁছে দেয়। বিচারের পরবর্তী ধাপগুলোতেও এই রায় বহাল থাকবে বলে প্রত্যাশা শুধু নুসরাতের পরিবারেরই নয়, পুরো বাংলাদেশ তাই চায়।

একই সঙ্গে বাংলাদেশ এই শুভক্ষণে এই দাবি করছে-অন্যান্য যৌন নিপীড়ন, হত্যার ঘটনাতেও পুলিশের নিরপেক্ষতা, তদন্ত এই গতিতেই চলুক। তাহলে অবশ্যই দেশের নানা প্রান্ত থেকে শিশুর আর্তনাদ, শিশুকে হারিয়ে মায়ের চিৎকার, নির্যাতিতা নারীর চাপা কান্না কমে আসবে। অবশ্যই কমে আসবে। নুসরাতের রায় থেকে গতিময়তার শক্তি পাক বিচার প্রক্রিয়া।

 

তুষার আবদুল্লাহ: বার্তা প্রধান, সময় টেলিভিশন