প্রতি চালানে ১ লাখ টাকা পেতেন ইয়াবা কারবারি দ্বীল মোহাম্মদ
কক্সবাজার থেকে: পেশায় ছিলেন ট্রাক চালকের সহায়তাকারী (হেলপার), সাত বছর ধরে এ কাজ করে আসছেন। আট বছরের মাথায় স্টিয়ারিংয়ে হাত দেওয়ার সুযোগ পান। কক্সবাজার টু চট্টগ্রাম ট্রিপও মেরেছেন দুইটি। তাতেই যেন সোনা ফলতে শুরু করে দ্বীল মোহাম্মদের সংসারে।
বলছিলাম আগামীকাল শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে আত্মসমর্পণ করতে যাওয়া ইয়াবা ব্যবসায়ী দ্বীল মোহাম্মদের (৩৮) কথা।
২০১৫ সালে চট্রগ্রাম মালিক শ্রমিক সমিতির নেতা বাবুলের সঙ্গে পরিচয় হয় দ্বীল মোহাম্মদের। পরিচয়ের এক পর্যায়ে বন্ধুত্ব। তারপর বন্ধু দ্বীল থেকে অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে দিতে ছোট একটি কাজের প্রস্তাব দেন বাবুল।
দুই মেয়ে আর দুই ছেলের অভারের সংসারে অতিরিক্ত কোনো কাজকেই দ্বিতীয় বার ভাবার কোনো সুযোগ ছিল না। তাছাড়া প্রস্তাবটি লোভনীয় হওয়ায় লুফে নেন দ্বীল।
কাজটি খুব কঠিন না, কক্সবাজার থেকে ৫০ হাজারের একটি ইয়াবার চালান পৌঁছে দিতে হবে চট্টগ্রামে। তারপর বাবুলের হাত থেকে নিয়ে নেবেন এক লাখ টাকা।
সম্প্রতি আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বার্তা২৪.কমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ইয়াবা কারবারের জীবনে প্রবেশ করার গল্পটি এভাবে বলেন দ্বীল মোহাম্মদ।
তিনি বলেন, ‘নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের পৌঁছে দিই আমি। এই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে ৫০ হাজার ইয়াবার চালান পৌঁছে দিতে হবে। তার বিনিময়ে পাবো প্রতি চালানে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।’
এ যেন রাতারাতি বড়লোক হতে চলা একটি গল্প। প্রথমে বিশ্বাস করতে না পারলেও প্রথম চালানের টাকা বুঝে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়েছিলেন বলে জানান দ্বীল মোহাম্মদ।
টেকনাফ হাতিয়ার সদরে বসবাস করেন দ্বীল মোহাম্মদ। তার বাবার নাম সিদ্দিক। সাত থেকে আটটি ইয়াবার চালান পৌঁছে দিয়ে এলাকায় রীতিমত মধ্যবিত্ত জীবনে পৌঁছে যান তিনি।
হঠাৎ অর্থ-বিত্তের মালিক হতে চলায়, তার প্রতি মানুষের চোখ পড়ে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইয়াবা কারবারি তালিকায় নাম যুক্ত হয় দ্বীলের। ততোদিনে ১৫ থেকে ১৬ চালান ইয়াবা পার করেছেন তিনি।
দ্বীল বলেন, ‘তার হাত দিয়ে টেকনাফ-কক্সবাজার চট্টগ্রামে কমপক্ষে ১০-১২ লাখ ইয়াবা পিস চলে গেছে।’
এখানেই শেষ হতে পারতো, তা হয়নি। সিনেমার গল্পের মতোই গত বছরের শেষের দিকে এক রাতে বাসায় গিয়ে দেখেন, তার বউ বাচ্চাকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ।
বাসায় চলাচলের জন্য যে মোটরসাইকেল ছিল সেটিও জব্দ করেছে পুলিশ। ভয় পেয়ে গেলেন দ্বীল মোহাম্মদ। আদালত চত্বরে ঘুরে ঘুরে বউ ছেলেকে মুক্ত করেন। তবে এবার সংশয় তার ক্রসফায়ার নিয়ে।
দ্বীল মোহাম্মাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এভাবে আর বেঁচে থাকা যায় না। সম্প্রতি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণে আশা ইয়াবা কারবারিদের তালিকায় আমার নাম দিতে উঠে পড়ে লাগি। পরিবারের সম্মতি ছিল, নিজের পরিবার ও নিজেকে বাঁচাতে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘জেল খেটে নিজেকে শুদ্ধ করে যদি ফিরে আসতে পারি। এবার সিএনজি চালিয়ে উপার্জন করবো, না হয় মোদির দোকান দেবো। আমি অপরাধী, আমার বউ-বাচ্চা তো নিরাপরাধ। আমার শাস্তি ওদের দিতে পারি না।’