বৃষ্টি হলে ওদের নিয়ে কোথায় যাব?

  • এসএম শহীদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, সাতক্ষীরা, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

খোলা আকাশের নিচেই চলছে শিশুদের ক্লাস, ছবি: বার্তা২৪

খোলা আকাশের নিচেই চলছে শিশুদের ক্লাস, ছবি: বার্তা২৪

নোনায় খেয়ে ফেলেছে ইটের দেয়াল। ছাদে ধরেছে ফাটল। ছাদ থেকে খসে পড়ে সিমেন্টের আস্তরগুলো। এমন অবস্থায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ৫৭নং জয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এ স্কুলে পাঠদান চলছে খোলা আকাশের নিচে খোলা ময়দানে। স্কুলভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে কখনো খোলা মাঠে, কখনো গাছ তলায়। নতুন ভবন নির্মাণেও নেই অগ্রগতি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. সাজেদা খাতুন বলেন, 'দেশ বিভাগের আগে ১৯৪৪ সালে এলাকার দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে টিনের ছাউনি আর ইটের দেয়ালে তৈরি কক্ষে তৎকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে স্থানীয় সরকারের প্রকৌশল বিভাগের অধীনে নির্মিত হয় ৩ কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবন।'

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, '২০১৬ সালে ব্যবহারের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়ে ভবনটি। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে মৌখিকভাবে উপজেলা প্রশাসন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এরপর আর ওই ভবনে ক্লাস হয়নি। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৪৯০ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এছাড়াও ২০০৬-০৭ সালে পিইডিপি-২ এলজিইডির বাস্তবায়নে নির্মিত আরও একটি দুই কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবনের একটি কক্ষে অফিসিয়াল কার্যক্রম আর অপরটিতে শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।'

বিদ্যালয়ের ফলাফল সন্তোষজনক উল্লেখ করে সহকারী শিক্ষক রত্না পারভীন জানান, ২০১৬ সালে ৪জন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল। এরমধ্যে ২ জন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিল। ২০১৭ সালে ৮ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত হয়ে ৭ জন বৃত্তি পেয়েছিল। এর মধ্যে ৬ জন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। ২০১৮ সালে ১০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তবে বৃত্তির ফলাফল এখন প্রকাশ হয়নি।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, 'এখন না হয় খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বর্ষাকালে ওদের নিয়ে কোথায় যাব আমরা? দ্রুত একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করে শিক্ষার বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।'

ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি জিএম রাজগুল বাহার অভিযোগ করে বলেন, 'পরিত্যক্ত ভবনটির নির্মাণ কাজ মানসম্মত না হওয়ায় ভবনে ফাটল ধরেছে। দেয়াল ভেঙে পড়ছে। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পাঠদান চলছে খোলা আকাশের নিচে।'

প্রথম শ্রেণির ছাত্র বিজয় ও মুনতাসীর জানায়, বাইরে ক্লাস করার সময় অনেক শব্দ হয়। রোদের মধ্যে ক্লাস করতে হয়। একই কথা বলে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আম্বিয়া, মনিরা, শুভজিৎ, সাদিয়া পারভিনসহ অনেকে।

শ্যামনগর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর্জা মিজানুর আলম জানান, বিদ্যালয়টির এ অবস্থা আমি জানি। বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের জন্য তালিকার প্রথম সারিতে নাম রাখা হলেও অজ্ঞাত কারণে তা হয় না। না হওয়ার কারণটা আমার জানা নেই। তারপরও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।