কক্সবাজারে বিদ্রোহের আগুনে পুড়ছে নৌকা
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এর মধ্যে বেশি আলোচিত হচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়টি। কক্সবাজারের ৬ উপজেলায় বিদ্রোহের আগুনে পুড়ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
জানা যায়, চেয়ারম্যান পদে কোথাও কোথাও একজন আবার কোনো কোনো উপজেলায় চারজনের মতো বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এ নিয়ে সরকারি দলের নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বিদ্রোহীদের অনেকেই নির্বাচন করার ব্যাপারে অনড় থাকায় বেশ ঝামেলায় রয়েছেন দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীরা।
দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের আশঙ্কা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী লড়াইয়ে বিদ্রোহীরা থেকে গেলে ফল পক্ষে আনা খুব কঠিন হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা।
আগামী ২৪ মার্চ উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে জেলার ৬ উপজেলার রামু, মহেশখালী, পেকুয়া, উখিয়া, টেকনাফ, কুতুবদিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে গত মঙ্গলবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ওই দিন ৮৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এছাড়া ৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ১৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৩ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এদিকে কুতুবদিয়া ছাড়া বাকি ৫টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নৌকার ৫ মাঝি ছাড়াও আওয়ামী লীগের আরও ৯ নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্রের বৈধতা পান।
রামু উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রিয়াজুল আলম। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল। তিনি পুরো রামুর ১১ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকের প্রেরণায় মাঠে রয়েছেন বলে দাবি করেন। সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল অবশ্য দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ বলে দাবি করেন।
আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বেহাল অবস্থা টেকনাফ উপজেলায়। এখানে আওয়ামী লীগের ৩ বিদ্রোহী রয়েছে। চেয়ারম্যান পদে সাবেক সাংসদ অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী দলের নৌকার মনোনয়ন পেলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জাফর আহমদ। এছাড়া মাঠে রয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আলম। ফলে দলীয় প্রার্থীর গলদঘর্ম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে মহেশখালীতেও। দলীয় প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহীম। মাঠে রয়েছে মহেশখালী যুবলীগের আহ্বায়ক সাজেদুল করিম এবং ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী এরফান উল্লাহ। ফলে প্রার্থী নিয়ে উক্ত উপজেলার আওয়ামী পরিবারে রয়েছে দ্বিধাবিভক্তি।
অপরদিকে পেকুয়ায় দলীয় প্রার্থী রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক আবুল কাশেম। মাঠে বিদ্রোহী রয়েছেন একই দলের জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এসএম গিয়াস উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আবু শামা শামীম। ফলে মাঠে কোন্দল তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
উখিয়াতে দলের প্রার্থী অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী থাকলেও প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী। মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবুল মনসুর চৌধুরী। এ উপজেলায় এখনো প্রার্থিতা বহাল রয়েছে সাংবাদিক এবং সংগঠক তরুণ প্রজন্মের প্রিয়মুখ ইমরুল কায়েস চৌধুরীর। পূর্বে উন্নয়ন করার কারণে বিশেষ করে সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতিদান দেওয়ায় মাহমুদুল হক চৌধুরীর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফলে এ উপজেলায় মাহমুদুল হক চৌধুরীকে এগিয়ে রাখছেন অধিকাংশ নেতাকর্মীরা।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, যত বিদ্রোহীই থাকুক না কেন, মানুষ নৌকার পক্ষে ভোট দেবে। দলীয় সিদ্ধান্তের কথা চিন্তা করে অনেকে সরে দাঁড়াবেন বলেও জানান তিনি।