বাতির নিচে অন্ধকার!
সরকার যখন প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে ঠিক তখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি শহর ঘেঁষা একটি গ্রাম। সারি সারি বসানো হয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। আর বিদ্যুতের এ খুঁটি বসাতে গ্রামবাসীকে রীতিমতো খরচ দিতে হয়ছিল লক্ষাধিক টাকা। তাও প্রায় পাঁচ বছর আগে।
জানা গেছে, নড়াইল পৌরসভার দক্ষিণ নড়াইল এবং মুলিয়া ইউনিয়নের ননীক্ষীর গ্রামটি শহর ঘেঁষা হলেও এ এলাকার বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। মাত্র দু’কিলোমিটার রাস্তায় প্রায় ৫ বছর অগে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ১৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি পোতা হলেও দু’শতাধিক পরিবার এখনো অন্ধকারে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) দুই সিবিএ নেতা বৈদ্যুতিক খুঁটি, তারসহ আনুসঙ্গিক খরচ ও সংযোগ বাবদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিলেও এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি।
ননীক্ষীর গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সভাপতি সাহেব আলী মীর বলেন, ‘২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে দক্ষিণ নড়াইলের একাংশ ও নুনীক্ষীর গ্রামের দু’কিলোমিটার এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য নড়াইল জেলার ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর দরখাস্ত করা হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে ব্যর্থ হই। তখন সরকার দলীয় সিবিএ নেতৃবৃন্দের যোগাযোগ মাধ্যমে ওজোপাডিকোর নড়াইল অফিসের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী (ইউডিএ) তৎকালীন বিদ্যুৎ শ্রমীক লীগ নড়াইল জেলা শাখার সভাপতি মো. তৈহিদুজ্জামানের যোগসাজসে বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নড়াইল অফিসের এমএলএসএস লাইবুর রহমানকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এর কয়েক মাস পর ২০১৫ সালের মার্চ ও এপ্রিল মাসে দু’দফায় ওই এলাকায় ১৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি পোতা হয় এবং তার সংযোগস্থলে নেওয়া হয়। এ সময় বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান বন্ধ হয়ে যায়।’
সূত্র জানায়, নড়াইল ওজোপাডিকোর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী রজব আলী বিশ্বাস বিষয়টি যশোর ওজোপাডিকোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ইখতিয়ার উদ্দিনকে (পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল) অবহিত করলে এ ঘটনায় ওজোপাডিকো, যশোরের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী সায়েদ আলীকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ২০১৫ সালের ৪ আগস্ট তদন্ত কাজ শুরু হয়। তদন্তে লায়েবুর রহমান দোষী সাবস্ত প্রমাণিত হলে শাস্তি স্বরুপ বরগুনায় বদলি হলেও এলাকাবাসী আর বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি। এমনকি ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি ক্ষতিগ্রস্তদের কষ্টের টাকাও।
নুনীক্ষী এলাকার বাসিন্দা সুজিত বিশ্বাস বলেন, ‘সর্বশেষ ১০ দিন পূর্বে তৌহিদুজ্জানকে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যাপারে কথা বললে তিনি লেবারের খরচের জন্য আরও ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। প্রধানমন্ত্রী ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবার কথা বললেও নড়াইল বিদ্যুৎ অফিসের কিছু ব্যক্তির কাছে অমরা বার বার হয়রানির স্বীকার হচ্ছি।’
এদিকে অভিযুক্ত লাইবুর রহমাননের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে সিবিএ নেতা মো. তৈহিদুজ্জামান বলেন, ‘দক্ষিণ নড়াইল ও নুনীক্ষীর এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগের ঘটনার সাথে তার বিন্দুমাত্র কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে যেসব ঠিকাদার এসব সংযোগের কাজ করে থাকে তাদের সাথে সুজিত বিশ্বাসের কথা বলিয়ে দিয়েছিলাম। এখানে টাকার কোনো কথা হয়নি।’
এ ব্যাপারে নড়াইল ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আবু রায়হান বলেন, ‘এ ব্যাপারে কিছু কিছু বিষয় জানা আছে। এটা অনেক দিন পার হয়েছে।’
এক পর্যায়ে তিনি উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, ‘আপনারা এতো দিন কোথায় ছিলেন? আমাদের কাছে কোনো ডুকুমেন্ট নেই। আপনাদের কাছে কি ডুকুমেন্ট আছে নিয়ে অফিসে আসেন। ননীক্ষীর ও দক্ষিণ নড়াইলের বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেই। যেসব জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই তার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে।’