ভাঙনে শেষ সম্বল হারিয়ে দিশেহারা ফিরোজা বেওয়া
নদী ভাঙনে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে দিশেহারা টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর উপজেলার কষ্টাপাড়া গ্রামের বিধবা ফিরোজা বেওয়া। চার সন্তান নিয়ে সংসার চলছিলো তার সংসার। স্বামী রোশনালী ভ্যান চালাতেন। কয়েক মাস আগে স্বামী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ভ্যানচালক স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারে চরম দুর্ভোগ নেমে আসে। এরইমধ্যে যমুনার করাল গ্রাসের স্বীকার হয়েছেন ফিরোজা বেগম। শেষ সম্বল হিসেবে বাড়ির ৮ শতাংশ জায়গার মধ্যে একটি কুঁড়ে ঘর ছিল। সে ঘরটিও গত ২০ দিনের যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এতে চরম বিপদে পড়ে খেলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে সে। বর্তমানে কোথায় আশ্রয় নিবে সেটিও জানা নেই।
কষ্টাপাড়ার ফিরোজা বেওয়ার মত অনেক ফিরোজা বেগমের এমন করুন দশা। নদীর পাড়ে খোলা আকাশের নিচে জীবন যাপন করছে তারা। ভুঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া ও খানুরবাড়ি এলাকায় তীব্র ভাঙনে তিনশতাধিক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এছাড়া গাবসারা ও অজুর্না ইউনিয়নের বলরামপুর, তারাই, চর তারাই এলাকার ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
গ্রামবাসীরা জানান, ভাঙনরোধে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়নি টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে দেড় কিলোমিটার ভাঙনের মধ্যে মাত্র ৭৫ মিটার এলাকায় ভাঙনরোধে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দাবি ছোট আকারে প্রকল্প পাস করতে হচ্ছে। কারণ বড় প্রকল্প দিলে সেগুলো পাস হয় না। তাই ভাঙনরোধে কাজ ধীরগতি হচ্ছে।
সোমবার (১৫ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায়, যমুনা নদী ভুঞাপুর অংশে পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা না থাকায় গ্রামবাসী নিজ উদ্যোগে বন্যা থেকে রেহাই পেতে যমুনা নদী পাড়ে মাটি ও বস্তা ফেলেছে। ভাঙনের কবলে গৃহহারা মানুষদের সহায়তায় সরকারি বা বেসরকারি কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলেও জানান তারা।
ভুঞাপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, যমুনা নদীর তিনগ্রামে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গৃহহারাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, যমুনা নদীর ভুঞাপুর অংশে পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। নতুন করে আরো ৭৫ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ শুরু হবে।