সংস্কারের অভাবে সাড়ে ৫০০ বছরের বিথঙ্গল আখড়া

  • কাজল সরকার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, হবিগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিথঙ্গল আখড়া, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বিথঙ্গল আখড়া, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

হাওর বেষ্টিত হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে অবস্থিত দেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বিথঙ্গল বড় আখড়া। সংস্কারের অভাবে ঐতিহ্য হারাচ্ছে সাড়ে ৫০০ বছরের পুরনো নিদর্শনটি। এভাবে চলতে থাকলে এটি পর্যটকদের মনোযোগ হারাবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। তাই ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তারা।

এদিকে, বিথঙ্গল আখড়াসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট নিয়ে উদ্যাগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসক। একই সঙ্গে আখড়াটিকে সংস্কারের কথাও জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমদিকে আখড়াটি প্রতিষ্ঠা করেন বৈষ্ণব ধর্মগুরু রামকৃষ্ণ গোস্বামী। মন্দির ছাড়াও ১২০টি পৃথক পৃথক কক্ষ রয়েছে এখানে। প্রতিদিনই এখানে বিপুল সংখ্যক পূণ্যার্থী, পর্যটক বেড়াতে আসেন। অথচ কালের আবর্তে জীর্ণদশায় পরিণত হয়েছে আখড়াটি।

বিজ্ঞাপন

মন্দিরের বিভিন্ন স্থান খসে খসে পড়ছে। ইতোমধ্যেই এর অনেক দর্শনীয় বস্তু বিনষ্ট হয়ে গেছে। ভক্তদের অনুদানে দু-একবার সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি উদ্যোগে এখন পর্যন্ত এটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। যদিও ২০০০ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ আখড়াকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে নেওয়ার পর সংস্কারের জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়।

কিন্তু অপরিকল্পিত কাজ ও কাজের অনিয়মের কারণে স্থানীয়রা কাজটি বন্ধ করে দেন। এর পর থেকে এটি সংস্কারের আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বর্তমানে আখড়ার বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ছে।

এদিকে, আখড়ায় যাওয়ারও তেমন কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থ নেই। বর্সা মৌসুমে নৌকা ও শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে অথবা জিপ গাড়িই একমাত্র ভরসা। অথচ হবিগঞ্জ জেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় ১৪ মাইল দূরবর্তী অবস্থিত এই আখড়াটি।

 

এ ব্যাপারে স্থানীয় ব্যবসায়ী সুকুমার চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমরা ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি আখড়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঘুরতে আসেন। কিন্তু এই আখড়াটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না সরকার। যার কারণে বর্তমানে আখড়ার বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ছে।’

সেখানে ঘুরতে আসা কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামের এক পর্যটক বলেন, ‘আখড়াটিতে আসা খুবই কষ্টকর। শুকনো মৌসুমে এখানে পায়ে হেঁটে আসতে হয়। আর বর্সা মৌসুমে বিস্তীর্ণ হাওরের বুক হয়ে নৌকায় আসতে হয়। তাই এই আখড়াটিতে আসার জন্য একটি রাস্তা খুবই গুরুত্বরপূর্ণ।

কবি ও লেখক অপু চৌধুরী বলেন, ‘আখড়াটি আমাদের দেশের একটি অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। অথচ এটি সংস্কারের অভাবে ভেঙে পড়ছে। যা সত্যি দুঃখজনক। তাই এই আখড়াটিকে টিকিয়ে রাখতে এখনই সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী আখড়াটিকে দেখতে ছুটে আসেন। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই নাজুক। শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে আর বর্ষায় নৌকাই এখানে আসার একমাত্র ভরসা। তাই আখড়াটি সংস্কারের পাশাপাশি এখানে যাতায়াতের জন্য একটি রাস্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

আখড়া সংস্কার কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কুমার বৈষ্ণব বলেন, ‘২০০০ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ আখড়াকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে নেয়। এরপর সংস্কারের জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু অপরিকল্পিত কাজ ও কাজের অনিয়মের কারণে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেই।’

এ ব্যাপারে আখড়ার বৈষ্ণব মোহন্ত গোসাই বলেন, ‘২০০০ সালে তারা যে কাজ করছিল এতে অনেকগুলো নিদর্শন ও মন্দিরের কারুকাজ মুছে দেওয়া হয়েছিল। তাই আমরা কাজ বন্ধ করে দেই। পরে আর সরকার থেকে কোনো অনুদান দেওয়া হয়নি। ভক্তদের অনুদানেই আখড়াটি সংস্কার করি।’

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবির মুরাদ বলেন, ‘আমরা হবিগঞ্জের বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান চিহ্নিত করেছি। যেগুলো নিয়ে পর্যটন স্পট গড়ে তুলা হবে। এর মধ্যে বিথঙ্গল আখড়াটি রয়েছে। দ্রুত এটি সংস্কার ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে কাজ শুরু হবে।’