ঘুষ না পেয়ে খতিয়ান আটকে রেখেছিলেন ভূমি কর্মকর্তা!
লক্ষ্মীপুরে ঘুষ না পেয়ে নামজারির খতিয়ান আটকে রেখে সহকারী অধ্যাপক আবু জাফর মো. কামাল উদ্দিনকে প্রায় চার মাস হয়রানি করা হয়েছে। সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের নোয়াখালী সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমেদ এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উত্তর জয়পুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে কর্মকর্তা শাহাদাতের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অবৈধ অর্থ লেনদেনের সত্যতা পাওয়া যায়।
ভুক্তভোগী কামাল উদ্দিন তেজগাঁও কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।
নোয়াখালী দুদক কার্যালয় সূত্র জানায়, শিক্ষক কামাল তার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের ১১ শতক জমির নামজারির জন্য গত ২১ মে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর জয়পুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা শাহাদাতের কাছে বিষয়টি তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। এজন্য শাহাদাত ওই শিক্ষকের কাছে ফোন করে ৮ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে বিপক্ষে প্রতিবেদন দেয়া হবে বলেও হুমকি দেন। পরে শিক্ষক তাকে ৫ হাজার টাকা দেন। বাকি টাকা কাজ শেষ হলে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু নামজারির খতিয়ান ও নোটিশের সরকারি ফি হচ্ছে এক হাজার ১৫০ টাকা।
এদিকে বাকি টাকা না দেয়ায় শাহাদাত খতিয়ান দেবেন না বলে হুমকি দেন। এভাবে প্রায় দেড় মাস অতিক্রম হলেও কামাল নামজারির খতিয়ান পাননি। একপর্যায়ে হয়রানির শিকারের ঘটনায় শাহাদাতের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই দুদকের নোয়াখালী সমন্বিত কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
অন্যদিকে শাহাদাতের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রেকর্ড সংশোধন করে আবেদনকারীকে খতিয়ান দেয়ার জন্য গত ১১ জুন লক্ষ্মীপুর সদরের সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু বাকি টাকার জন্য কামালকে নামজারির খতিয়ান দেয়া হয়নি। পরে তিন হাজার টাকা নিয়ে গত ২৯ আগস্ট কামালকে খতিয়ানটি দেয়া হয়।
শিক্ষক আবু জাফর মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘ভূমি কর্মকর্তা শাহাদাত জমির নামজারি করতে আমার থেকে ৮ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় খতিয়ান দেবেন না বলে হুমকি দেন। পরে টাকা দিয়ে আমাকে খতিয়ান আনতে হয়েছে।’
উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি কারো কাছ থেকে টাকা চাইনি। শিক্ষক কামাল তার জমির নামজারির জন্য এসিল্যান্ড অফিসে আবেদন করেছেন। সেখান থেকে আমাকে কাজটি করে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। আমি তার থেকে খতিয়ান ও নোটিশের সরকারি ফি নিয়েছি। বাড়তি কোনো টাকা নেয়া হয়নি। শিক্ষকের সঙ্গে খতিয়ান নেয়ার সময় দেখা হয়েছিল। এর আগে কখনো দেখা হয়নি।’
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাহমিদা মোস্তফা বলেন, ‘দুদকের অভিযানের বিষয়টি আমি শুনেছি। এখনো আমাকে অফিসিয়ালভাবে জানানো হয়নি। এ নিয়ে কোনো চিঠি আসলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের নোয়াখালী সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমেদ জানান, ভূমি কর্মকর্তা শাহাদাতের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অবৈধ অর্থ লেনদেনের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদন পাঠানো হবে।