ঋণের ৬৬৯ কোটি টাকা সরকারি ইক্যুইটিতে স্থানান্তর চায় বিমান

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ বিমান

বাংলাদেশ বিমান

কর্মীদের স্বেচ্ছা অবসর গ্রহণ স্কিম ও উড়োজাহাজ কিনতে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে দুই দফায় বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল বিমান কর্তৃপক্ষ। সুদে আসলে ওই ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৬৯ কোটি ২৬ লাখ টাকায়। কিন্তু এতো টাকা পরিশোধের সক্ষমতা নেই সংস্থাটির। তাই এই দুই ঋণকে সরকারি ইক্যুইটিতে রূপান্তর করার আবেদন করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি বেসরকারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বিমান শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব নিলুফার জেসমিন খান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয় বরাবর এ আবেদন করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে বিমান কর্তৃপক্ষকে প্রতিবছর গড়ে ৬০০ কোটি টাকা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। তার ওপর ভাড়া করা এয়ারক্রাফটের নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করায় নগদ তহবিল প্রবাহের ভারসাম্য বজায় রাখা বেশ কষ্টের। এ অবস্থায় স্বেচ্ছা অবসর গ্রহণ স্কিমের আওতায় কর্মীদের পেনশন বা গ্র্যাচুইটির জন্য নেওয়া ঋণের সুদ-আসল ৪৪৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা ও উড়োজাহাজ কিনতে নেওয়া সুদ-আসল ২২১ কোটি ৬৪ লাখ পরিশোধ করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় ঋণ ও সুদের টাকা সরকারি ইক্যুইটি খাতে স্থানান্তরের অনুরোধ করা হচ্ছে।

কর্মীদের গ্রাচ্যুইটি বাবদ ঋণ

২০০৭ সালে তত্ত্ববধায়ক সরকার বিমানের লোকসান কমাতে এক হাজার ৮৭৭ জন কর্মীকে স্বেচ্ছায় অবসরে (ভিআরএস) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য তাদের পেনশন ও গ্র্যাচুইটির টাকা পরিশোধ করতে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেয় বিমান। যদিও পরবর্তীতে অনেকে মামলা করে চাকরিতে ফিরে আসেন। তবে সেই ঋণ সুদে-আসলে বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৪৪৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। গত নয় বছরে ঋণের অর্ধেক টাকা পরিশোধ করার কথা থাকলেও এক কানাকড়িও পরিশোধ করতে পারেনি সংস্থাটি। ঋণ দেওয়ার সময় বিশ্বব্যাংক যেসব শর্ত দিয়েছিল বিমান সেগুলো মানেনি। ফলে এই টাকা পরিশোধের সক্ষমতা না থাকায় তা সরকারি ইক্যুইটি খাতে স্থানান্তরের আবেদন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বিমানের ভিআরএস কার‌্যক্রমের জন্য নেওয়া ঋণের টাকা ৫ শতাংশ সুদে ১৫ বছরে ষান্মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করার শর্ত দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু বিমান ওই শর্ত মানে নি। ঋণ নেওয়ার পর গত নয় বছরে বিমান একটি টাকাও পরিশোধ করেনি। এমনকি ঋণের টাকা ব্যয়ের দুই মাসের মধ্যে কন্ট্রোলার জেনারেল অব ফরেন এইডেড প্রজেক্টের মাধ্যমে অডিট করার শর্তও পূর্ণ করেনি বিমান।

তারা আরো জানান, ঋণ নেওয়ার আগে এক হাজার ৮৭৭ জনের পেনশন বা গ্র্যাচুইটির টাকা পরিশোধের কথা বলা হয়। কিন্তু ওই তথ্য সঠিক নয়। কারণ অনেক বিমানকর্মী আদালতের নির্দেশে পরবর্তীতে চাকরি ফেরত পান। তারা পেনশন বা গ্র্যাচুইটির টাকা নেননি। চাকরি শেষ করে স্বাভাবিক নিয়মে অবসরে যাওয়ার সময় তারা পেনশন বা গ্র্যাচুইটির টাকা দাবি করবেন।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে সংস্থাটির ঋণ পরিশোধের অক্ষমতার কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্তটি পরিচালনা পর্ষদে পাস করিয়ে নেওয়া হয়।

উড়োজাহাজ কিনতে ঋণ

এদিকে, সিংগাপুর এয়ারসাইন্সের কাছ থেকে ৩টি ডিসি ১০ উড়োজাহাজ কিনতে ১৯৮৪ সালে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেয় সংস্থাটি। সরকারের গ্যারান্টির বিপরীতে ৮টি বিদেশি ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকের লন্ডন শাখা থেকে ওই ঋণ নেওয়া হয়। পরে ১৯৮৭ সালের জুলাই মাস পর্ষন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করলেও অগাস্ট মাস থেকে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ঋণ পরিশোধ করে। পরবর্তীতে বিমানের পরিচালনা পর্ষদ সুদ ও বাকি আসলসহ ২২১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা সরকারি ইক্যুইটি খাতে স্থানান্তর করতে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

বিমান কেন ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিমান আগে কর্পোরেশন ছিল। পরে সংস্থাটিকে লিমিটেড কম্পানি করা হয়। পুনর্গঠন ও বাণিজ্যিকীকরণ করার জন্য বিমান নতুন প্রজন্মের বোয়িং কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ধারাবাহিকতায় চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর এবং দুটি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ কেনা হয়। এই ছয়টি উড়োজাহাজ কেনার জন্য দেশি-বিদেশি ব্যাংক থেকে ৮ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা ঋণ করে। এই ঋণের কিস্তি হিসেবে গত বছর ৩০ জুন পর্যন্ত তিন হাজার ৫৫১ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। আরো চারটি বোয়িং ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বিমানবহরে যুক্ত হওয়ার কথা। ফলে বিমানের ঋণের পরিমাণ আরো বাড়বে। এ জন্য সংস্থাটি ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম নয়।

যদিও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিমানের সরকারি ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮১৮ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, ঋণের টাকা পরিশোধে অক্ষমতার কথা জানালেও বিমান গত অর্থবছরে মুনাফা করার ঘোষণা দেয়। ২০১৭ সালসহ টানা তিন বছরে মোট ৬০৬ কোটি টাকা মুনাফা করে সংস্থাটি। বিমান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মুনাফার হিসাবের মধ্যে শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। কারণ বিমান শুধু কর্মীদের পেনশনের জন্য নেওয়া ঋণের কিস্তিই নয়, জ্বালানির টাকাও পুরোপুরি পরিশোধ করতে পারছে না।