প্রবিধানমালা সংশোধন সংক্রান্ত নির্দেশনা পায়নি বিইআরসি
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) খসড়া প্রবিধানমালা সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সংক্রান্ত সভার কার্যপত্র বিইআরসিতে এসে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন বিইআরসির সদস্য মোহাম্মদ আবু ফারুক।
তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, আমরা সভার কার্যপত্র পেয়েছি, তবে এখনও কোন নির্দেশনা পাইনি। এছাড়া পূর্বে জমা করা খসড়া প্রবিধানমালাগুলো ফেরত পাঠানোর কথা রয়েছে। নির্দেশনা পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত ১৪ ডিসেম্বর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্ব বিইআরসি সংক্রান্ত ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিনিয়র সচিব আন্তর্জাতিক বাজারের দাম অনুসারে তেল-গ্যাসের দাম নির্ধারণের বিষয়ে অভিমত দেন। সভার কার্যপত্রে দেখা গেছে, সচিবের অভিমতের পরেই বিইআরসি কর্তৃক প্রতিমাসে এলপি গ্যাসের দর নির্ধারণের মডেলটি সামনে আনা হয়। একই মডেল অনুসারে তেল-গ্যাসের দর নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা হয়। সম্ভব হলে প্রতি ৩ মাস পর পর দর পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য খসড়া প্রবিধানমালাগুলো পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের খুচরা ট্যারিফ প্রবিধানমালা, ২০১২, পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ মজুদকরণ বিপণন ও বিতরণ প্রবিধানমালা, ২০১২, এবং পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ পরিবহন ট্যারিফ প্রবিধানমালা ২০১২ অনুমোদন সংক্রান্ত প্রস্তাব পুনঃ পর্যালোচনা করে বর্তমান বাস্তবতার আলোকে পরিবর্তন করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে প্রেরণের পরামর্শ দেন সিনিয়র সচিব।
ওই সভার কার্যপত্র বিইআরসিতে এসে পৌঁছেছে কিন্তু ২০১২ সালে জমা দেওয়া খসড়া প্রবিধানমালাগুলো ফেরত দেওয়া হয়নি। বিইআরসি মনে করছে খসড়া প্রবিধানমালার সঙ্গে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে প্রেরণ করবে মন্ত্রণালয়। আর সেই আলোকে কাজটি করতে চান।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেক মল্লিক বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, বিইআরসির প্রবিধানমালায় কিছুটা সংযোজনী আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জ্বালানি তেলের দামও বিইআরসি নির্ধারণ করবে। সেই আলোকে খসড়া প্রবিধানমালা সংশোধন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়।
কবে নাগাদ খসড়াগুলো ফেরত পাঠানো হতে পারে এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারেন নি অতিরিক্ত সচিব খালেক মল্লিক।
বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল প্রবিধানমালা অনুমোদন নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আগে চিঠি পাই তারপর বুঝতে পারবো কি করতে চায়। অনেকবারেই অনেক তোড়জোড় দেখেছি, পরে তা আলোর মুখ দেখেনি। প্রবিধানমালাগুলো অনুমোদন না হওয়ায় কিছুটা হলে ব্যাহত হচ্ছে বিইআরসির কার্যক্রম।
সরকার সকল ধরনের জ্বালানি তেল থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৩ মাস পর পর দর সমন্বয় করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হবে বাজারদর। আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে দেশেও বাড়বে, আবার কমে গেলে দেশেও কমে যাবে।
দর চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এলপি গ্যাসের দর পদ্ধতিকে মডেল বিবেচনা করা হচ্ছে। এলপিজির দর প্রতিমাসে নির্ধারণ করা হলেও জ্বালানি তেলের দাম ৩ মাস পর পর দর চূড়ান্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রতিমাসে এলপিজির দর নির্ধারণ করে আসছে। গণশুনানির মাধ্যমে আমদানিকারকদের খরচ ও কমিশন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন প্রতিমাসে শুধু গ্যাসের দর অংশ ওঠানামা করে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়, কমে গেলে সেই অংশটুকু কমে যায়।
ডিজেল পেট্রোলের ক্ষেত্রেও এমন পদ্ধতি অনুসরণের কথা ভাবা হচ্ছে। জাহাজ ভাড়াসহ পরিচালন খরচ এবং আমদানি ব্যয় আলাদা করা হবে। পরিচালন খরচ অপরিবর্তিত থাকবে আর, ৩ মাস পর আন্তর্জাতিক বাজারের দরের সঙ্গে কমবেশি হবে দেশের জ্বালানি তেলের বাজারদর। বিইআরসি যাতে আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে কাজটি করতে পারে, সে জন্য ঝুলে থাকা বিইআরসি প্রবিধানমালার সংশোধনীসহ চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে যে পদ্ধতিতেই হোক সরকার জ্বালানি তেলে ভর্তুকি থেকে বের হয়ে আসতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেও এই পরিকল্পনার এ তথ্য পরিস্কার হয়েছে। রোববার (১৮ ডিসেম্বর) এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এতদিন আমাদের অর্থ ছিল আমার ভর্তুকি দিয়েছি। কিন্তু করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যে মন্দা দেখা দিয়েছে তাতে আমরাও আক্রান্ত। সুতরাং এতদিন বিদ্যুৎ এবং গ্যাসে যে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। সেই ভর্তুক্তির টাকা এখন আপনাদের দিতে হবে।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, আমরা জ্বালানি তেলের বাজার উন্মুক্ত করার কথা চিন্তা করছি। এখানে সরকারি কোম্পানির পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও থাকতে পারে। একটি পদ্ধতি বের করার চেষ্টা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশেও বাড়বে, আর কমে গেলে দেশেও কমে যাবে। সরকার জ্বালানি তেলে আর ভর্তুকি দিতে চায় না।
বর্তমানে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দর নির্ধারণ করা হয়। একক পাইকারি বিক্রেতা হচ্ছে বিপিসি। তারা নিজেরা আমদানি করছে পাশাপাশি দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর উপজাত (কনডেনসেট) থেকে পাওয়া পেট্রোল, অকটেন রাষ্ট্রীয় কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মাধ্যমে বাজারজাত করে আসছে। মূলত বিপুল পরিমাণ ডিজেল আমদানি করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। সরাসরি ডিজেলের পাশাপাশি ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল (ক্রড) আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। সরকার বছরে আরও ৩০ লাখ টন পরিশোধনের লক্ষে ইআরএল ইউনিট-২ নির্মাণে প্রকল্প নিয়েছে।
বিপিসির তথ্য অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থ বছরে দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা ছিল ৬২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৩০ মে. টন। খাতভিত্তিক সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে পরিবহন খাতে, ওই অর্থবছরে ৬২.৯২ শতাংশ সমান ৩৯ লাখ ৬৩ হাজার ৭২৫ মে.টন ব্যবহৃত হয়েছে। এর পরেই রয়েছে কৃষি খাতে ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৬০৪ মে. টন বিদ্যুৎ খাতে চাহিদা ছিল ৬ লাখ ৫২ হাজার ৬৬ মে. টন। শিল্পে ৪ লাখ ৫০ হাজার ৪৩৭ মে.টন গৃহস্থালীতে ৯৭ হাজার ৬০০ টন এবং অন্যান্য খাতে ১ লাখ ৬০ হাজার ২৯৮ মে.টন।