কাজ হয়েছে বলেই গ্যাসের উৎপাদন বেড়েছে: পেট্রোবাংলা

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার

সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৩ সালে দেশীয় ফিল্ডগুলোর গ্যাসের উৎপাদন ১৯০০ এমএমসিএফডিতে (মিলিয়ন ঘনফুট দৈনিক) নেমে আসার কথা ছিল। পেট্রোবাংলা তথা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ কাজ করেছে বলেই প্রায় ২৩০০ এমএমসিএফডি পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) পেট্রোবাংলার বোর্ড রুমে জ্বালানি খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশের (এফইআরবি) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এমন দাবি করেন। গত ২ জানুয়ারি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন অতিরিক্ত সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার। সাংবাদিকদের সঙ্গে এটিই তার প্রথম আনুষ্ঠানিক মতবিনিময়।

বিজ্ঞাপন

এলএনজি আমদানির বিষয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, দেশীয় উৎস থেকে আগামী কয়েক বছরে গ্যাস সরবরাহ খুব বেশি বৃদ্ধির সম্ভাবনা ক্ষীণ। সাগরে বড় কোন রিজার্ভ পেলেও তা সিস্টেমে আনতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৮ বছর সময়ের প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে নতুন নতুন শিল্পকারখানা হচ্ছে বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা। তাই চাহিদা পূরণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তিনটি নতুন এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন ও এলএনজি আমদানির উৎস বাড়াতে কাজ করছে সরকার।

তিনি বলেন, এলএনজি আমদানির জন্য দেশে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল আছে মহেশখালীতে। দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানির সক্ষমতা রয়েছে। আবহাওয়া ও অন্যান্য কারণে নিদিষ্ট কোন দিনে হয়তো ৯৯৯ পর্যন্ত সরবরাহ দেওয়া সম্ভব। তবে গড়ে ৮৫ শতাংশের অর্থাৎ ৮৫০ মিলিয়নের বেশি সম্ভব না। এলএনজি আমদানির সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলমান রয়েছে। পায়রায় একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল করার বিষয়ে এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে এক মাসের মধ্যেই একটি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। টার্মিনালটির সক্ষমতা হবে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ও পরে বাড়ানো হবে।

বিজ্ঞাপন

মহেশখালীতে একটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণে সামিট গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিছু বিষয়ে মতানৈক্য দূর হলেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এ টার্মিনাল থেকে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ এলএনজি সরবরাহ করা যাবে। তবে পায়রায় পাইপলাইন না থাকায় গ্যাস সরবরাহ পেতে তিন বছর লাগতে পারে। এর বাইরে মহেশখালীতে স্থলভাগের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। জমির বিষয়ে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির অনাপত্তি পেলেই প্রস্তুতি শুরু হবে। এটি প্রথমে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার করা হবে, পরে দ্বিগুণ করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে কাতার এবং ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। বছরে ৫৬টি এলএনজি কার্গো সরবরাহ করে দেশ দু’টি। চুক্তি অনুসারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে আনুপাতিক হারে এ দাম নির্ধারিত হয়। এতে করে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম চড়া হলেও তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায় এ চুক্তি অনুসারে। দেশ দু’টির সঙ্গে সরবরাহ আরও বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। তারা সরবরাহ বাড়াতে সম্মত হয়েছে, এখন দাম পরিমাণ চূড়ান্ত করা হবে। আমাদের কাছে আরও বেশ কিছু প্রস্তাব রয়েছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করছে আরপিজিসিএল।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, একটি স্বস্তির খবর হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে (খোলা মার্কেটে) এলএনজির দাম কমে এসেছে। সর্বশেষ যে দরটি চূড়ান্ত হচ্ছে তাতে ১৩ ডলারের কাছাকাছি পড়বে। জুন পর্যন্ত ১২টি কার্গো আমদানি করা হবে।

তিনি বলেন, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪ হাজার মিলিয়নের মতো। সরবরাহ করা হচ্ছে ৩ হাজারের মতো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই চাহিদা সংযোগ পাওয়া গ্রাহক বিবেচনায়। সংযোগের জন্য অপেক্ষমান গ্রাহকদের চাহিদা হিসাব করা হয়নি। অপেক্ষমাণ গ্রাহকের চাহিদা নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ গ্যাসের চাহিদা ৫৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট প্রাক্কলন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের স্থলভাগে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনা নেয় পেট্রোবাংলা। এটি এখন ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৬টি কূপের উন্নয়ন প্রকল্প করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ২৮টি করতে পারবে দেশীয় কোম্পানি বাপেক্স। বাকি কূপগুলোর কাজ বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে করানো হবে। তবে দরের ভিত্তি হবে পেট্রোবাংলা স্থলভাগে যে দরে কাজ করছে সেই দর। ৪৬টি কূপের মাধ্যমে ৬০০ মিলিয়নের মতো উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভোলার উদ্বৃত্ত গ্যাস সিএনজি আকারে আনার বিষয়টি চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে জুন মাস নাগাদ এই কার্যক্রম শুরু হবে। প্রথমধাপে দৈনিক ৫ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ করা হবে। পরে আরও ২০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে দামের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাপেক্সসহ পেট্রোবাংলার অধীনস্থ কোম্পানিগুলোকে গতিশীল করার বিষয়ে তিনি বলেন, বাপেক্সে দু’টি মামলার কারণে পদোন্নতি ঝুলে ছিল। আমি যোগদানের পর তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সুরাহা করার উদ্যোগ নিয়েছি। তাদের এসিআর নিয়ে একটি জটিলতা ছিল, সেটিও সমাধান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জোড়াতালি দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব না। কোম্পানিগুলো কাজের গতি ফিরে আসবে আশা করি। এইতো কয়েকমাস হলো যোগদান করেছি, আমাকে একটু সময় দেন দেখতে পাবেন কাজের গতি। না হলে তখন প্রশ্ন করবেন।

সিস্টেম লস প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, এখন প্রত্যেকটি কোম্পানির প্রান্তে মিটার বসানো হয়েছে। যে কোম্পানি যতটুকু নেবে তাকে সেই পরিমাণ বিল দিতে হবে। এই কাজটি শুরু হয়েছে, ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।