বড় সিটি থেকে পাঁচ বছরে বিদ্যুতের তার সরিয়ে ফেলা হবে: প্রতিমন্ত্রী

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ

পাঁচ বছরের মধ্যে বড় সিটিগুলোর বিদ্যুতের তার সরিয়ে মাটির নিচ দিয়ে নেওয়া হবে। প্রথম ধাপেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা সিটি থাকছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপনের প্রকল্প পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা জানান।

বিজ্ঞাপন

ধানমন্ডি এলাকায় ৩৪টি রোডে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। ৮টি রোডের কাজ শেষ হয়েছে ১১টি রোডের কাজ শেষের পথে।আগামী বছরের কাজ শেষ নাগাদ ১০ হাজার ৪০০ গ্রাহকের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত হবে। প্রত্যেকটি বাসায় একাধিক উৎসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। একটি উৎসের বিদ্যুতে বিভ্রাট হলে স্বয়ংক্রিভাবে বিকল্প উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল থাকবে বলেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বৈদ্যুতিক লাইনগুলো সরিয়ে ফেলেছি। এখন আর রাস্তার ওপর কোন তার থাকবে না। এই কাজটি আমরা ধানমন্ডি থেকে শুরু করলাম। এটাকে পাইলট আকারেও দেখতে চাচ্ছি এর ফলাফল কেমন হয়। পর্যায়ক্রমে পুরো ঢাকার ওভারহেড লাইন মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া হবে। এর জন্য প্রাক-সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ঝড় ও বৃষ্টিতে অনেক সময় বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারের কারণে কিছুদিন পর পর গাছের ডাল কাটতে হয়। এই জটিলতা আর থাকছে না। নগরীতে সবুজায়ন আরও বৃদ্ধি পাবে। আমরা এখন উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলে গ্রাহক যেমন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাবে। তেমনি বিতরণ কোম্পানিও অনেক সুবিধা পাবে। তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ঝামেলা কমে যাবে, সিস্টেম লস কমে আসবে। এমনকি বাসাবাড়িতে ইচ্ছামতো লোড ব্যবহারও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কেউ হঠাৎ করে বেশি (অনুমোদিত লোডের বেশি) বিদ্যুৎ ব্যবহার শুরু করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।

ধানমন্ডি ৩ নম্বরে দাঁড়িয়ে যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, সে এলাকায় কিছু ঝুলন্ত তারের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এগুলো ক্যাবল টিভি ও ইন্টারনেট লাইনের। আমরা অনুরোধ করবো তারা যেনো এগুলো সরিয়ে নেয়। তাদের ক্যাবল মাটির নিচে নেওয়ার জন্য নেটওয়ার্ক প্রস্তুত আছে। তারা যেনো সেখানে চলে যায়। যেগুলো দেখছেন সেগুলো রাস্তার বাতির খুঁটি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ধানমন্ডি এলাকার এই প্রকল্পের সঙ্গে হাতিরঝিলের পানিতে থাকা টাওয়ারগুলো সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এগুলো শিগগিরই সরিয়ে নেওয়া হবে। এছাড়া ঢাকার আশপাশের নদীতে থাকা বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের হাইভোল্টেজ টাওয়ারগুলো সরিয়ে ফেলার হবে।

সম্প্রতি মিরপুরের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি খুবই হৃদয়বিদারক। এ জন্য বিতরণ কোম্পানির পাশাপাশি গ্রাহকদের সচেতন হতে হবে। ঝড়বৃষ্টির পর কোথাও তার ছিঁড়ে গেলে একটু সাবধান থাকতে হবে। আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপন শেষ হলে এমন দুর্ঘটনার শঙ্কা আর থাকবে না।

প্রতিমন্ত্রী ধানমন্ডির ৩ নম্বর থেকে শুরু করে, প্রকল্প এলাকার বেশকিছু রোড ঘুরে দেখেন। এমনকি একটি দু’টি বাসায় গ্রাহকের সঙ্গে আলাপ করেন। তাদের প্রতিক্রিয়া মনযোগ দিয়ে শুনেন। অন্যান্য বিতরণ কোম্পানির লোকজনকে এই প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করার জন্য পরামর্শ দেন।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ধানমন্ডি এলাকায় যেসব বিদ্যুতের লাইন রয়েছে অনেক পুরনো (২০০০ সালের আগের)। ওভারহেড লাইনের (খুঁটিতে ঝুলন্ত) নানা রকম সমস্যা থাকে। দেখা যাচ্ছে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। এমনও দেখা গেছে বাসাবাড়ির ময়লা তারে আটকে গিয়ে বিভ্রাট হচ্ছে। ওভারহেড লাইনে নানা কারণেই বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে। সেদিক থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল অনেক নিরাপদ ও সুরক্ষিত। এতে করে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সহজ হবে।

ডিপিডিসি এমডি আরও বলেন, আমরা স্মার্টগ্রিড সিস্টেমের বিষয়েও কাজ করে যাচ্ছি। তাতে গ্রাহকসেবা আরও উন্নত হবে। আমরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও উন্নত গ্রাহক সেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছি।

‘ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পটির জন্য বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে চুক্তি হয় ২০১৬ সালে। আর ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। ধানমন্ডির পূর্বে মিরপুর রোড, পশ্চিমে সাতমসজিদ রোড, উত্তরে ধানমন্ডি ২৭ এবং দক্ষিণে ধানমন্ডি -১ পর্যন্ত বিস্তৃত। এসব এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৩০ মেগাওয়াটের মতো। আগামী ২৫ বছরে চাহিদা বৃদ্ধি বিবেচনায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আরএমইউ (উচ্চচাপ সংযোগ ও ইন্টার-কানেকশন) এবং বক্সটাইপ ট্রান্সফরমার ও এলভি বক্স (নিম্নচাপ) স্থাপন করা হয়েছে। এজন্য ২৭০টি আরএমইউ ও ৩৬টি বক্সটাইপ ট্রান্সফরমার, ১৩০টি এলভি বক্স ও ১০০ কিলোমিটার ক্যাবল স্থাপন করা হবে। জায়গা সংকট এবং সিটি করপোরেশনের সঙ্গে রশি টানাটানির কারণে নির্ধারিত সময়ে থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে।