পুলিশ দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
পুলিশ দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, শত শত বছর ধরে বাজারের একটা সুনাম গড়ে ওঠে। সে সুনামেই বাজার চলে।
রোববার (১০ মার্চ) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আয়োজিত ঢাকার মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আমি আগেও বলেছি যে, পুলিশ দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। শত শত বছর ধরে বাজার একটা সুনাম করে। আমাদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বললেন যে, তিনি ৫০ বছর ধরে এই বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাজারের সুনাম আছে বলেই কিন্তু বাজার চলে! তারপরেও কিছু সুবিধাবাদী লোক আছেন, যেমন আছেন পাইকারি বাজারে, তেমন আছেন খুচরা বাজারেও। পাইকারি বাজারগুলো কীভাবে, কী করবো, তা আমরা চেষ্টা করছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার আমার নিজের শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত বাজার! আমি নিজে এই বাজারে বাজার করেছি। আমার সরকারি পিএস ধানমণ্ডি থাকেন কিন্তু বাজার করেন এখানে। কারণ, এখানে সুযোগ-সুবিধা বেশি পাওয়া যায়। আলু সুপার মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে ২৯ টাকায়। আমরা তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি ১৬৩ টাকা। তারা ৫ টাকা কমে প্রতি কেজি বিক্রি করছে ১৫৮ টাকায়। ছোলা ১০৫ টাকায় বিক্রি করছে। আজকে আমাদের যেটা দেখার বিষয়, তাহলো মূল্য যেটা আমরা নির্ধারণ করে দিয়েছি, সে মূল্যের চেয়ে বেশি দামে যেন কেউ বিক্রি না করেন।
তিনি বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর আছে। তাদের উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বাজার ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা আছে। আমরা সেটাকে ঢেলে সাজাচ্ছি। আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেছি।
বাজার রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয় জানিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা দায়িত্ব পেয়েছি দুই মাসও হয়নি। আমরা রাতারাতি পরিবর্তন করতে পারবো, এটা সম্ভবও নয়। এখান থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে আমার সংসদীয় এলাকায় বস্তা দরে লেবু বিক্রি করে মাত্র ৪ থেকে ৫ টাকায়। এখানে হালি বিক্রি হয়, ৫০ টাকা করে। একশ কিলোমিটার আসতে দাম যদি ৩ গুণ হয়ে যায়, তাহলে এটা যে একটা সমস্যা, তা কিন্তু আমরা বুঝতে পারি। আমরা বাজার মনিটর করছি। বোঝার চেষ্টা করছি।
টিসিবির পণ্যের স্থায়ী দোকানে দেওয়া হবে জানিয়ে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, টিসিবির (ট্রেড কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) যে পণ্যটা দেওয়া হয়, একসময় ট্রাকে করে দেওয়া হতো, এখন উন্মুক্ত মাঠে বা ওয়ার্ড কমিশনারের ওখান থেকে দেওয়া হয়। আমরা এখন স্থায়ী দোকানে টিসিবির মালটা দিতে পারি, যেন কষ্ট করে লাইন ধরে নিতে না হয়। আমাদের টিসিবির এক কোটি সুবিধাভোগী আছেন। এখন যে টিসিবির দোকানগুলো হবে, সেগুলো হবে স্থায়ী দোকান। আমি চাই, জনপ্রতিনিধি যারা আছেন, তারা টিসিবির দোকানগুলো নির্ধারণ করে দেবেন। তাহলে আমরা টিসিবির মালগুলো সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
খেজুরের মূল্য নির্ধারণ করা নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, খেজুরের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসবো। আমাদের এখানে খেজুরের বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। আমরা বিভিন্ন জন বিভিন্ন খেজুর বিভিন্ন দামে কিনে থাকি। আমরা শুধু একটা খেজুরের দাম কমানো হবে বলেছি। সেটা হলো, যেটা বস্তায় করে আসে। সেটা দুইশ টাকার নিচে বিক্রি করতে হবে, তা ব্যবসায়ীদের বলে দিয়েছি। সেটা দুইশ টাকার নিচেই বিক্রি হচ্ছে। আর যেটা উঁচু দামের খেজুর, সেটা কিন্তু আমাদের সাধারণ মানুষ খাওয়ার সুযোগ পায় না। আমার মনে হয় না যে, অত্যাবশকীয় পণ্যের মধ্যে খেজুরটাকে হাইলাইট করার কোনো প্রয়োজন আছে। এটার সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িত। এবার আমরা পারিনি। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দেড় মাসের মধ্যেই রমজান চলে আসছে।
মতবিনিময় সভায় যোগ দেওয়ার আগে প্রতিমন্ত্রী কাঁচাবাজার পরিদর্শন করেন। গরু, মুরগিসহ মুদি ও কাঁচা সবজির দোকানে গিয়ে দাম জিজ্ঞাসা করেন। এসময় পেঁয়াজ, আলু, ডালসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্য সুপারশপের চেয়ে খুচরা বাজারে দাম বেশি হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দেন তিনি।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সফিকুল ইসলাম সেন্টু, মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজার বণিক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কাঁচাবাজার ব্যবসায়ীরা।