রাষ্ট্রীয় কোম্পানি এলপি গ্যাস লিমিটেড তার সরবরাহকৃত এলপি গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দিয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) দেওয়া আবেদনে ১২.৫ কেজির দাম ৬৯০ টাকা বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে বলে জানা গেছে।
বিইআরসি চেয়ারম্যান প্রস্তাব পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, দিন দুয়েক আগে তাদের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। বিষয়টি কমিশনে তোলা হবে। আগামী মাস (ফেব্রুয়ারি) থেকে এর প্রতিফলন দেখা যেতে পারে।
গণশুনানি নাকি অন্যকোন প্রক্রিয়ার কথা ভাবছে বিইআরসি? এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, বিষয়টি এখনও চুড়ান্ত হয়নি, প্রস্তাবটি আগে কমিশনে তোলা হবে, সেখানে সিদ্ধান্ত আসবে কোন প্রক্রিয়ায় আবেদনটি নিষ্পত্তি হবে।
বেসরকারি এলপি গ্যাসের দর প্রায় দ্বিগুণের বেশি হলেও, দেশীয় উৎস থেকে প্রাপ্ত এই এলপিজির দর অনেক কম নির্ধারণ করা হয়। দেশে বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন এলপিজির চাহিদার বিপরীতে রাষ্ট্রীয় কোম্পানিটি ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাত্র ১৫ হাজার ২১৫ টন সরবরাহ দিয়েছে। যদিও সাধারণ ভোক্তা এই গ্যাস কখনই চোখে দেখতে পায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। বেশিরভাগ এলপিজি নিদিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ দেওয়া হয়, অল্প পরিমাণে বাজারে ছাড়া কথা বলা হলেও তা কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ অনেক পুরনো।
২০২১ সালের ১২ এপ্রিলের প্রথমবারের মতো এলপি গ্যাসের দর ঘোষণা করে বিইআরসি। ভোক্তাদের সংগঠন ক্যাবের এক রিটের কারণে অনেকটা বাধ্য হয়ে দর নির্ধারণ করা হয়। প্রায় ৯৯ শতাংশ আমদানি নির্ভর এই জ্বালানির দর ঘোষণা সময় বলা হয় সৌদি সিপিকে (চুক্তি মুল্য) ভিত্তিমূল্য বিবেচনা করা হবে। সিপির দর উঠা-নামা করলে ভিত্তিমূল্য উঠানামা করবে অন্যান্য কমিশন অপরিবর্তিত থাকবে। ঘোষণার পর থেকে প্রতিমাসে এলপিজির দর ঘোষণা করে আসছে বিইআরসি।
তখন বলা হয়েছিল বেসরকারি কোম্পানিগুলো চড়াদামে আমদানি করলেও এলপি গ্যাস লিমিটেড দেশীয় গ্যাস ফিল্ড থেকে উপজাত হিসেবে অনেক কমদামে পেয়ে থাকে। সে কারণে বিইআরসি ফর্মুলা (না লোকসান না মুনাফা) অনুযায়ী এলপি গ্যাস লিমিটেডের দর ঘোষণা করা হয়। কালোবাজারে বিক্রি ঠেকাতে তখন সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনাসারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করার বিষয়টি আলোচিত হয়। যাতে সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান আরেকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিনবে, কালোবাজারে বিক্রির কোন সুযোগ থাকবে না। এলপি গ্যাস লিমিটেডের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরাসরি বিক্রি করা হয় ১ হাজার ৯৩১ টন ও আগের অর্থবছরে যা ছিল ৪ হাজার ১২৮ টন।
এলপি গ্যাস লিমিটেডের উত্তর পতেঙ্গা (চট্টগ্রাম) এবং সিলেটের কৈলাশটিলায় এলপিজি বটলিং প্ল্যান্ট রয়েছে। ইস্টার্ণ রিফাইনারী লিমিটেড (ইআরএল) এবং রুপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডে (আরপিজিসিএল) উৎপাদিত এলপিজি পাইপ লাইনের মাধ্যমে সংগ্রহ করে বোতলজাত করে থাকে। বোতলজাতকৃত এলপিজি বিপিসি’র নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত বিপনন কোম্পানিসমুহের মাধ্যমে (পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও এসএওসিএল) বিপিসি’র নির্দেশিত হারে বাজারজাত করে থাকে।
বিপিসি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক ১৯৭৭-৭৮ সালে উত্তর পতেঙ্গা, চট্টগ্রামে এলপিজি ষ্টোরেজ ও বটলিং প্ল্যান্ট প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে “এল পি গ্যাস লিমিটেড ” পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে রুপান্তরিত করা হয়।
১৯৯৫ সালে বিপিসি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কৈলাশটিলায় আরো একটি এলপিজি স্টোরেজ, বটলিং ও ডিষ্ট্রিবিউশন প্রকল্প গ্রহণ করে, যা ১৯৯৮ সালে উৎপাদনে যায়। কৈলাশটিলা এলপিজি প্রকল্পটি ২০০৩ সালে এলপি গ্যাস লিমিটেড চট্টগ্রামের সাথে একীভুত করা হয়। দু’টি বটলিং প্লান্টের মজুদ সক্ষমতা রয়েছে ৫৪০ টন।
বিইআরসি ফর্মুলা (না লোকসান না মুনাফা) অনুযায়ী দাম বাড়ানোর কতটা সুযোগ রয়েছে সে বিষয়ে রয়েছে বিস্তর বিতর্ক। কোম্পানিটির বার্ষিক রিপোর্টে দেখা গেছে ২০২২-২৩ অর্থবছরে অপরিচালন খাত থেকে আয় করেছে ৫ কোটি ৯২ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। নিট মুনাফা করেছে ৪ কোটি ৪১ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
বিইআরসির যে কমিশন ওই দাম নির্ধারণ করেছিল সেই কমিশনের সদস্য (সাবেক সদস্য) মকবুল-ই-এলাহী চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি কোম্পানির মুনাফার লিমিট রয়েছে, ৭ কোটি নিট মুনাফা হলে সম্ভবত লিমিট ক্রস করে। তাই দাম বাড়ানোর কোন যৌক্তিকতা দেখি না।
তিনি বলেন, আমরা তখন বলেছিলাম যেখানে গ্যাস নেটওয়ার্ক নেই সেসব এলাকায় যেখানে গণরান্না হয়, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে হল, পুলিশ ও আর্মি ব্যারাক, হাসপাতালে দিক। তাহলে এর উত্তম ব্যবহার হবে, কালোবাজারির সুযোগ থাকবে না।
এলপি গ্যাস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ইউসুফ হোসেন ভূঁইয়া বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, পণ্যটি বিপিসির তাদের পরামর্শ অনুযায়ী দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
কোম্পানি মুনাফায় রয়েছে, তারপরও দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের যৌক্তিকতা জানতে চাইলে বলেন, মুনাফায় রয়েছে এ কথা সঠিক, তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিক্রি কমে যাওয়ায় মুনাফা কমেছে। আর যেহেতু পণ্যটি বিপিসির তাদের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।