অর্থনীতির গতি বৃদ্ধিতে ব্যাংকগুলি ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে: বাংলাদেশ ব্যাংক

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত, বাংলাদেশ ব্যাংক, ঢাকা

ছবি: সংগৃহীত, বাংলাদেশ ব্যাংক, ঢাকা

দেশের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধিতে ব্যাংকগুলি ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, দেশে এখন নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে ক্যাশলেস লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকিং সেবা শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এতে করে ছাত্রছাত্রী, কৃষক, শ্রমিক, মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী সবাই ব্যাংকের সেবা পাচ্ছেন। লাখ লাখ মানুষকে সরকারি ভাতা দেওয়া হচ্ছে ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে দিয়ে কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির (সিএসআর) আওতায় স্বাস্থ্যসেবা, বৃত্তি ও বৃক্ষরোপন, পরিবেশ সংরক্ষণের মতো কাজগুলো করানোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

ঋণের কিস্তি পরিশোধের সুবিধা
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, করোনার ভয়াবহ সময়ে শিল্পে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের কিস্তি বিলম্বে পরিশোধের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষিঋণ বিতরণ, ক্রেডিট কার্ড বিলে কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে বিলম্ব মাশুল আদায় না করার সুবিধা গ্রাহক পর্যায়ে দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ব্যাংক থেকে জানানো হয়, মহামারির সময়ে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের মাধ্যমে ক্ষুদ্র, অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ব্যবসা পুনরুদ্ধারসহ টিকে থাকতে সহযোগিতা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের জন্য নগদ সংরক্ষণ সীমা বা সিআরআর ও বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি সংরক্ষণের সীমা কমিয়ে তহবিল সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতির গতি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ব্যাংকগুলোকে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা দিয়ে শিল্প ও কৃষিতে ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করা হয়।

করোনার প্রভাব এবং ইউক্রেন যুদ্ধের বিরূপ প্রভাবের অস্বাভাবিক প্রবণতা ঠেকাতে রিজার্ভের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে পরের বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসে আমদানির লাগাম টেনে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ডলারের দরের বিপরীতে টাকার মানের সমন্বয় ঘটাতে টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়। এতেও সমস্যা কেটে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখতে পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার ডিলারদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানায় ডলারের একটি গ্রহণযোগ্য দর নির্ধারণ করে দিতে। এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতির ক্রমবর্ধমান উচ্চহার ঠেকাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে সুদহারে স্মার্ট করিডর পদ্ধতির সূচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মূল্যস্ফীতি সহনীয় করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হওয়ার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। গত বছরের জুলাইয়ে এ অর্থবছর শুরুর দিকে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক দুটি বড় সংস্কার আনে। তার একটি ছিল- সুদহারের ৯:৬ পদ্ধতির অবসান এবং অন্যটি হলো ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদহার ভিত্তি ধরে নতুন স্মার্ট করিডোর পদ্ধতির সূচনা।

এতে ঋণের সুদহার বাড়ে। উদ্দেশ্য ছিল- মূল্যস্ফীতি কমিয়ে নিয়ে আসা। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শেষদিকে এসেও ওই পদ্ধতির প্রত্যাশিত সুফল না আসায় স্মার্ট করিডোর অবসান করে মে মাসে সুদহার বাজারের ওপর বা ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে ঋণের সুদহার আরো বেড়ে বর্তমানে ১৩-১৪ শতাংশ হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আশা করছে, এর মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ মূল্যস্ফীতি কমে সহনীয় পর্যায়ে আসবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান এ বিষয়ে জানিয়েছেন, সরকারের চলতি হিসাবের নেতিবাচক অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটেছে। এখন উদ্বৃত্ত হয়েছে। আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি হয়েছিল। সেটা কমে এখন ৫ বিলিয়ন বা ৫শ কোটি ডলারে এসে ঠেকেছে। আর্থিক হিসাবের বড় চ্যালেঞ্জ চলে গেছে, যা আছে তাও জিরো হয়ে যাবে অচিরেই। তিনি বলেন, আশা করছি, ক্ষয় হয়ে যাওয়া রিজার্ভ আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে রিবিল্ড (পুনর্গঠন) হওয়া শুরু হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. এজাজুল ইসলাম বলেন, জানুয়ারিতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দেওয়া হয়েছে। এ নীতির মূল উদ্দেশ্য হলো- অর্থনীতির জন্য মৌলিক কার্যক্রম ব্যাহত না হয়, এমন অর্থ সরবরাহ ঠিক রেখে উড়ন্ত বা ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে থাকা প্রয়োজনের বেশি অর্থ টেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে নেওয়া।

এ লক্ষ্যেই নতুন মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ করা হয়। এতে ঋণের সুদহার বাড়ার ইঙ্গিত ছিল। ফলে, বেসরকারি খাতে অর্থ কম যাবে। মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে এ পরিস্থিতি মানতে হবে।

এজাজুল ইসলাম আরো জানান, তারা ক্রলিং পেগ দিয়েছেন। এখন ডলারের বিনিময় হার বাজারমুখী হচ্ছে। আশা করছেন, শিগগিরই একটি সঠিক একক দর পেয়ে যাবেন। তাহলে রেমিট্যান্স বাড়বে এবং ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে।