নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের বাজার মূল্য সর্বসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকার আমদানি নির্ভর খাদ্য পণ্যের শুল্ক-কর হ্রাস এবং ক্ষেত্র বিশেষে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আসছে রমজানে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে খেজুর আমদানিতে আমদানি শুল্ক ও সমুদয় অগ্রিম কর কমিয়েছে সরকার।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সই করা প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, রমজান মাসে খেজুরকে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য খেজুর আমদানির ওপর বিদ্যমান কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ হতে হ্রাস করে ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৩ শতাংশ এবং বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে অর্থাৎ মোট করভার ৬৩ দশমিক ৬০ শতাংশ হতে হ্রাস করে ৩৮ দশমিক ৭০ শতাংশ করা হয়েছে।

খেজুর আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক-কর হ্রাস করার ফলে মানভেদে প্রতি কেজি খেজুরের আমদানি ব্যয় প্রায় ৬০ টাকা হতে ১০০ টাকা হ্রাস পেতে পারে। আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর হ্রাসের ফলে খেজুরের আমদানি বৃদ্ধি পাবে, বাজারে খেজুরের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং খেজুরের বিক্রয় মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ্য করা হয়েছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ব্যবসায়ীদের ভূমিকা এখন গুরুত্বপূর্ণ। সরকার তাদের জন্য বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করবে।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার আন্দোলনে প্রায় দুই হাজারের মতো ছাত্রজনতা জীবন দিয়েছে। ৫০ হাজারের বেশি আহত হয়েছে, অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্যই তারা জীবনকে তুচ্ছ করেছে। ছাত্রজনতার প্রত্যাশাকে প্রাধান্য দিতে হবে।

রমজান মাস খুব দূরে নয়। ঠিক ১০০ দিন বাকি উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়াতে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশ কয়েকটি পণ্যের শুল্কও কমিয়েছে সরকার। এখন ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে যোগ করেন তিনি।

ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ খাতুনগঞ্জে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা, ওজন পরিমাপক স্কেল স্থাপন ও সহজশর্তে ব্যাংক লোনের দাবি জানান। বাণিজ্য উপদেষ্টা সমস্যাগুলো সমাধানে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল বশর চৌধুরী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন, খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সগির আহমেদসহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

একদিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে আবারও বেড়েছে সোনার দাম। এবার প্রতি ভরিতে দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯৯৪ টাকা। তাতে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম কমে হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা। নতুন এই দর শুক্রবার থেকে কার্যকর হবে।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের সোনার দাম পড়বে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ৯৩ হাজার ৬৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরও জানায়, সোনার বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।

এর আগে, সবশেষ গত ১৯ নভেম্বর দেশের বাজারে সোনার দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সে সময় টানা চার দফা কমার পর ভরিতে ২ হাজার ৯৪০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি। এছাড়া ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৩১ হাজার ১৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ৯২ হাজার ২৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা কার্যকর হয়েছে গত ২০ নভেম্বর থেকে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ৫১ বার সোনার দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে ৩০ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ২১ বার। আর ২০২৩ সালে দাম সমন্বয় করা হয়েছিল ২৯ বার।

কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রফতানিতে নগদ সহায়তার বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফলের জুস এবং ড্রিংকস রফতানির বিপরীতে নগদ সহায়তা পাবেন রফতানিকারকরা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ।

সার্কুলারে কৃষিপণ্য (শাকসবজি-ফল) ও প্রক্রিয়াজাত (অ্যাগ্রো প্রসেসিং) কৃষিপণ্য রফতানিতে প্রণোদনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে জারি করা এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলারে ফল ও সবজি থেকে উৎপাদিত সব ধরনের পেস্ট, ফ্রুটবার, টিনজাত সামগ্রী, ডিহাইড্রেটেড সামগ্রী, জুস, ড্রিংকস রফতানির বিপরীতে নগদ সহায়তা দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

এর সঙ্গে সরকারি সিদ্ধান্তক্রমে স্পষ্ট করা যাচ্ছে যে, দেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত সহযোগী বা ভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফলজাত পাল্প থেকে প্রস্তুত করা জুস এবং ড্রিংকস ইত্যাদি রফতানির বিপরীতে নগদ সহায়তা প্রযোজ্য হবে।

কৃষিপণ্য (শাকসবজি/ফল) ও প্রক্রিয়াজাত (অ্যাগ্রো প্রসেসিং) কৃষিপণ্য রফতানির বিপরীতে রফতানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত আগে জারি করা সার্কুলারের অন্যান্য নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রফতানিতে ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা পান রপ্তানিকারকরা।