গ্যাস সংকট মোকাবিলায় ভোলার গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া খুব বেশি বিকল্প নেই। দ্বীপ জেলাটি থেকে পাইপলাইন না থাকায় সিএনজি কিংবা এলএনজি আকারে গ্যাস আনা ব্যয়বহুল হলেও বিপুল পরিমাণ ডলার সাশ্রয়ের সুযোগ রয়েছে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ভোলার গ্যাস ট্রান্সপোর্টেশন শীর্ষক সেমিনারে এমন মতামত উঠে আসে।
উপকূলীয় জেলাটি থেকে বর্তমানে সিএনজি আকারে ৫ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে প্রতি ঘনমিটারে পরিবহন খরচ ৩০.৬০ টাকাসহ গ্যাসের দাম দাঁড়াচ্ছে ৪৭.৬০ টাকা। যা পাইপলাইনে সরবরাহ করা গ্যাসের তুলনায় দেড়গুণের মতো।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে করা সিএনজি সরবরাহ চুক্তি নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। বিশেষ করে পরিবহন খরচ বেশি ধরার অভিযোগ করেন অনেকেই। এ বিষয়ে সিএনজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইন্ট্রাকো রিফুলিং স্টেশন পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াদ আলী সেমিনারে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আমরা নাকি বিশেষ বিবেচনায় দরপত্র পেয়েছি। বাস্তবতা হচ্ছে- আমরা অভিজ্ঞতার আলোকেই কাজটি পেয়েছি। তখন আরও ৫টি কোম্পানি আগ্রহপত্র জমা দিয়েছিল। দরপত্রে ইন্ট্রাকোকে কোনো রকম বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি।
পরিবহন খরচ বেশি ধরা হয়েছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে রিয়াদ আলী বলেন, আমরা ট্রাকে করে সিএনজি পরিবহন করে থাকি, সেই ট্রাকের ফেরি পারাপারের ভাড়া দিতে হয় ৪৮০০ টাকা, যা প্রতি ঘনমিটারের দাঁড়ায় ১২.৫০ টাকা, পদ্মাসেতুর টোল দিতে হয় ৩.৮৫ টাকা এবং ৬০০ কিলোমিটারের ডিজেল খরচ পড়ে প্রায় ১২ টাকার মতো। সে কারণে এখন আমরা লোকসান দিয়ে যাচ্ছি। প্রথমে যখন দরপত্র জমা দিয়েছিলাম তখন দর দিয়েছিলাম ৫৫ টাকার মতো, সেখান থেকে কমিয়ে ৪৭.৬০ টাকা করা হয়।
তিনি বলেন, আমাদের কোম্পানি ছাড়া আর কোনো কোম্পানি এতো দ্রুত সরবরাহ করতে পারতো না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে আমাদের ১০ সিএনজি ফিলিং স্টেশনের লাইসেন্স বাতিল করে, সেই মেশিনগুলো অব্যবহৃত পড়ে ছিল, সেগুলো ব্যবহার করে দ্রুত সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছি।
দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুদ ফুরিয়ে আসছে, এতে প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে উৎপাদন। এক সময় দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতো ২৯ ডিসেম্বর ১৯৩২ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন হয়েছে। অন্যদিকে দ্বীপজেলা ভোলাতে ২টি গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কৃত হয়েছে। সেখানে ৯টি কূপ গ্যাস উত্তোলনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। যেগুলোর দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ১৯০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু স্থানীয়ভাবে চাহিদা না থাকা এবং মূল ভূখণ্ডে আনার জন্য পাইপলাইন না থাকায় মাত্র ৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলন করা হচ্ছে। এখনই আরও ১১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সেখানে আরও ১৫টি কূপ খননের লক্ষ্যে কাজ করছে পেট্রোবাংলা।
ভোলার উদ্ধৃতি গ্যাস সিএনজি আকারে আনতে চলতি বছরের ২১ মে ইন্ট্রাকো রিফুলিং স্টেশন পিএলসির সঙ্গে প্রথমে ৫ মিলিয়ন ও দ্বিতীয় ধাপে আরও ২০ মিলিয়ন গ্যাস সিএনজি আকারে সরবরাহের চুক্তি করে সরকার। প্রথম ধাপের ৫ মিলিয়ন গাজীপুর ও নারায়নগঞ্জের ১৮টি শিল্পকারখানায় সরবরাহ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপের ২০ মিলিয়ন যথাসময়ে (অক্টোবর ২০২৪) সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি। যে কারণে চুক্তি রিভিউ করার চিঠি দিয়েছে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি।
চুক্তি বাতিল প্রসঙ্গে রিয়াদ আলী বলেন, আমরা চিঠি পেয়েছি, চুক্তিতে একটি জরুরি পরিস্থিতির ইস্যু থাকে। আমরা ৬ মাসের সময় চেয়েছি। আমরা কাজ অনেকদূর এগিয়ে এনেছি, নদীপথে আনার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। সড়কপথ এড়াতে রোবহান উদ্দিনে তেতুলিয়া নদীর তীরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। সরকার চাইলে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছি। এই খাতের আমাদের মতো আর কোনো কোম্পানির বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। আমরা ২০০৩ সাল থেকে সিএনজি খাতে ব্যবসায় যুক্ত রয়েছি।
৫ মিলিয়ন সরবরাহের অভিজ্ঞতা কেমন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ১৮টি কারখানায় আমরা ৯ কোটি টাকার গ্যাস সরবরাহ দিয়েছি। আমরা আরও বেশি দিতে সক্ষম ছিলাম, কিন্তু আমরা যেখানে দিচ্ছি, তারা পাইপলাইনে গ্যাস থাকার সময় আমাদের থেকে গ্যাস নিচ্ছে না। তখন ট্রাকগুলো বসে থাকছে। সরকার যদি পাইপলাইনে নিতো তাহলে আরও বেশি পরিমাণে গ্যাস দিতে পারতাম।
ভোলা থেকে এলএনজি আকারে আনতে খরচ আরও বেড়ে যাবে বলে মন্তব্য করে বলেন, বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করতে বিপুল পরিমাণ ডলার খরচ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে ভোলার গ্যাস আনলে দেশীয় টাকা ব্যয় হচ্ছে। এতে করে বিপুল পরিমাণ ডলার সাশ্রয় করার সুযোগ রয়েছে।
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ইন্ট্রাকো রিফুলিং স্টেশন পিএলসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম চৌধুরী, জেনারেল ম্যানেজার (এডমিন) কমান্ডার আবু সাঈদ, সিওও এহসানুল হক পাটোয়ারী প্রমুখ।