চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে মাত্র ২ কোটি ২ লাখ মার্কিন ডলার বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে সরকার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ১১৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল।
এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি কমেছে ৯৮.২৪ শতাংশ।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বিদেশি সহায়তার সাময়িক প্রতিবেদন সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
সহায়তার প্রতিশ্রুতির ধসের পাশাপাশি গত দুই মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বিদেশি সহায়তার ছাড়ও প্রায় ৪৮ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে ইআরডি।
তা ছাড়া এ সময়ে যে পরিমাণ সহায়তা ছাড় হয়েছে, পুরাতন ঋণ পরিশোধে এর চাইতে প্রায় ২৯ শতাংশ বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে বলেও প্রতিবেদিনটিতে উঠে এসেছে।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত সরকারের সময় করা ঋণচুক্তির প্রস্তাবগুলো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে পর্যালোচনা করছে। এ কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে ঋণচুক্তি সম্পন্ন হচ্ছে না।
তবে পর্যালোচনা শেষে প্রস্তাবিত ঋণের প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং তখন লক্ষ্য অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি আদায় হবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-সহ বহুপাক্ষিক এবং বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ ও বাজেট সহায়তার প্রাথমিক আশ্বাস দিয়েছে।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকার-প্রকল্প চিহ্নিত করতে এবং অপ্রয়োজনীয় বিবেচিত প্রকল্পগুলো বন্ধ করার জন্য বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত সমস্ত চলমান, প্রস্তাবিত ও আলোচনার অধীনে থাকা প্রকল্পের পর্যালোচনা শুরু করেছে।
এর অংশ হিসেবে ইআরডি ইতোমধ্যে এক চিঠির মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে প্রকল্পের যৌক্তিকতা, সম্ভাব্যতা এবং অগ্রগতির তথ্যসহ একটি অগ্রাধিকার তালিকা এ মাসের মধ্যে জমা দিতে বলেছে।
ইআরডি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে বৈদেশিক ঋণের তালিকা জমা দেওয়া হচ্ছে। ইআরডি এসব তালিকা পর্যালোচনা করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাবে। এরপর অগ্রাধিকারভিত্তিতে পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়া এবং ইআরডি ঋণ প্রক্রিয়া শুরু করবে।
ইআরডির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে কোন ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। তবে অনুদানের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ২ কোটি ১ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে অনুদান পাওয়া গিয়েছিল ৫ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং ঋণ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল ১০৯ কোটি ডলার। ঋণ ও অনুদান মিলে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল ১১৪ কোটি ৪৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার। অর্থাৎ অর্থবছরের ব্যবধানে কমেছে ৯৮.২ শতাংশ।
অন্য দিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে অর্থছাড় হয়েছে ৪৫ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এরমধ্যে ঋণের অর্থ পাওয়া গেছে ৩৮ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার ডলার এবং অনুদান পাওয়া গেছে ৭ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে পাওয়া গিয়েছিল ৭৩ কোটি ৯০ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এরমধ্যে ঋণের অর্থ ছিল ৭২ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং অনুদান ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
এ দিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করা হয়েছে ৫৮ কোটি ৯২ লাক ২০ হাজার ডলার। এরমধ্যে সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৭ কোটি ৩৬ লাখ ডলার এবং আসল পরিশোধ করা হয়েছে ৪১ কোটি ৫৬ লাখ ২০ হাজার ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুদ ও আসল পরিশোধ করা হয়েছিল ৪০ কোটি ৫ লাখ ডলার। এরমধ্যে সুদ ছিল ১৪ কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং আসল ছিল ২৫ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার ডলার।