ফের গুজবের বৃত্তে পুঁজিবাজার!
পুঁজিবাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরতে না ফিরতেই আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি কারসাজি চক্র। ওই চক্রটি ব্রোকারেজ হাউজের ট্রেডারের সঙ্গে মিলে ‘মুজিব বর্ষ পর্যন্ত পুঁজিবাজার ভালো থাকবে’ বলে আশ্বাস দিচ্ছে। অন্য একটি গ্রুপ গুজব ছড়াচ্ছে পুঁজিবাজার চাঙা করতে সরকার ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড সহায়তা দেবে। তবে এই আশ্বাসের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আরেকটি গ্রুপ ছড়াচ্ছে সরকার কোনো ফান্ড দেবে না। এসব গুজবে পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন হচ্ছে।
আর তাতে বিনিয়োগকারীরা প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন আবার শেয়ার কিনছেনও। যেদিন শেয়ার কিনছেন, সেইদিন সূচক ও বেশির ভাগ শেয়ারের দাম বাড়ছে। আর যেদিন শেয়ার বিক্রি করছেন সেইদিন দরপতন হচ্ছে। আর তাতে ফায়দা নিচ্ছে কারসাজি চক্র।
এই চক্রটি শেয়ার গুজব ছড়িয়ে শেয়ার দর কমিয়ে শেয়ার কিনছেন। আবার বিক্রির সময় শেয়ার কিনতে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে গুজব ছাড়িয়ে দেন। বিনিয়োগকারীরাও আশায় শেয়ার কিনেন। তারপর আবারও ধরা খাচ্ছেন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বুধ, বৃহস্পতি এবং রোববার তিনদিন পুঁজিবাজারে উত্থান হয়েছে। এই দিনগুলোতে সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম ও লেনদেন। এই সময়ে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিয়েছে লেনদেনের শীর্ষে থাকা ৫-৮টির ব্রোকারেজ হাউজের কারসাজি চক্র। ফলে সোমবার তাদের শেয়ারের পারিমাণ কম ছিলো। তারা শেয়ার কিনতে গুজব ছড়িয়েছে ‘বিএসইসি শেয়ার কেনার জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু কেউ কিনছে না।’
আবার কাজী সানাউল হককে ডিএসইর এমডি নিয়োগ ঠেকাতে একটি গ্রুপ শেয়ার না কিনে বিক্রি করে দরপতন ঘটাচ্ছে। তাতে সোমবার বড় দরপতন হয়েছে। বেশ কিছুদিন দরপতন হতে পারে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।
লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী এনায়তুল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মুজিব বর্ষ পর্যন্ত’ পুঁজিবাজার ভালো থাকবে বলে আমাকে অনেকে জানিয়েছেন। সেই অনুপাতে শেয়ার কিনছি।
ইবিএল সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী মুশফিক বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি শুনেছি পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংককে স্বল্প সুদে ঋণ দিতে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বোরবার আবারও শুনলাম উল্টো কথা। সরকার ফান্ড দিচ্ছে না। এই কারণে হঠাৎ করে শেয়ার বিক্রি করেছে।
এর আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বলেন, রিউমারের (গুজব) কারণে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। গুজবের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের রাস্তা বন্ধ করতে হবে। তাই প্রচলিত আইন শক্তভাবে পরিপালন করা হবে।
সম্প্রতি আগারগাঁওয়ে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কীভাবে বাজারকে আরও গতিশীল করতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে ডিএসই কিছু প্রস্তাব করেছে। বিএসইসির সুশাসন (কমপ্লাইন্স) একটু দুর্বল, এটা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর গুজবের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের রাস্তা বন্ধ করার দাবিটিও আমরা বাস্তবায়ন করব।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটা রিউমার হলো টাকার ডিভ্যালুয়েশন, আমরা টাকার ডিভ্যালুয়েশন করব না। আমাদের রেমিটেন্স খাত ডিভ্যালুয়েশন করার কথা বলা হয়েছিল। ডিসেম্বর মাসে রেমিটেন্স খাতে আমাদের গ্রোথ ৪০ শতাংশ। একটা মাসে একটা আইটেমে ৪০ শতাংশ গ্রোথ বাংলাদেশের ইতিহাস। এই রেকর্ড আর কেউ ব্রেক করতে পারবে না। এটা প্রমাণ স্বরূপ আনলাম এই কারণে এখানে আমরা টাকার ডিভ্যালুয়েশন করি নাই। শুধু এই খাতকে ২ শতাংশ ইনসেন্টিভ দিয়েছি। যার কারণে আমরা এই সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছি। সুতরাং কোনো খাতেই টাকার ডিভ্যালুয়েশন করার সম্ভাবনা নাই।