গ্রামীণফোনের শেয়ার প্রতি লভ্যাংশ ১৩ টাকা
বিদায়ী বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত যোগাযোগ খাতের গ্রামীণফোন লিমিটেডের মোট আয় হয়েছে ১৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।
২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য পরিচালনা পরিষদ শেয়ার প্রতি ১৩ টাকা লভ্যাংশের প্রস্তাব করেছে।
এর মধ্যে চতুর্থ প্রান্তিক অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর তিন মাসে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যা আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিকূল নিয়ন্ত্রণমূলক পরিবেশ সত্ত্বেও গ্রামীণফোনের শক্তিশালী ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৯ সালে গ্রামীণফোনের ১৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।
আলোচিত এই সময়ে গ্রামীণফোনের ইন্টারনেট সেবা খাত থেকে আয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ। একই সময়ে ভয়েস থেকে আয় বেড়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
২০১৯ সালের শেষ প্রান্তিকে মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যা আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। এই প্রান্তিকে নতুন করে ৭ লাখ গ্রাহক গ্রামীণফোন নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। ২০১৯ সাল শেষে আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে মোট গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৬৫ লাখ। মোট গ্রাহকের মধ্যে ৪ কোটি ৬ লাখ বা ৫৩ দশমিক ১ শতাংশ গ্রামীণফোনের ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারকারী।
এদিকে কোম্পানির পরিচালনা পরিষদ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ২০১৯ সালের জন্য প্রতি শেয়ারে ১৩ টাকা লভ্যাংশ প্রস্তাব করেছে। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) এই প্রস্তাব করে। এর ফলে জিপির নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ দাড়ালো ১৩০ শতাংশ। যা কর পরবর্তী লভ্যাংশের ৫০ দশমিক ৮৬ শতাংশ (৩৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী লভ্যাংশসহ)।
সে লক্ষ্যে কোম্পানির রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ ফেব্রয়ারি আর কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৩ এপ্রিল। শেয়ারহেল্ডারদের সর্বসম্মতিক্রমে এই লভ্যাংশ পাস হবে।
গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল প্যাট্রিক ফোলি বলেন, রেগুলেটরি দৃষ্টিকোণ থেকে ২০১৯ সাল গ্রামীণফোন একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে পার করেছে। নানা ধরনের বিধিনিষেধ আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যাহত করেছে। তবে চমৎকারভাবে বাজার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং নেটওয়ার্কে আমাদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখার মাধ্যমে আমরা ব্যবসায়িক সাফল্য অজর্ন করতে সক্ষম হয়েছি। পরিকল্পিত লক্ষ্য অনুযায়ী চতুর্থ প্রান্তিকে ফোরজি সাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার। বছর শেষে আমাদের নেটওয়ার্কে ফোরজি গ্রাহকের সংখ্যা ১ কোটি ১৯ লাখে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। ইন্টারনেট সেবা খাতে এর ব্যবহার ও রাজস্ব অর্জন দুটি ক্ষেত্রেই প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি।
মাইকেল ফোলি বলেন, মোবাইল সেবাখাতের উন্নয়ন ও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিতে এর অবদান ধরে রাখতে সরকার ও খাতসংশ্লিষ্টদের মধ্যে যেকোন অর্থপূর্ণ আলোচনা করতে আমাদের প্রতিশ্রুতি আমরা পুনর্ব্যক্ত করতে চাই। ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ মার্জিনসহ ২০১৯ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে মোট মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯২০ কোটি টাকা। শেষ প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৬ দশমিক ৮১ টাকা।
গ্রামীণফোনের সিএফও ইয়েন্স বেকার বলেন, শক্তিশালী মার্জিন নিয়ে গ্রামীণফোন ২০১৯ সালে ব্যবসায়িক সাফল্য অজর্ন করেছে। তিনি বলেন, শেষ প্রান্তিকে তীব্র প্রতিযোগিতা ও বৈরী আবহাওয়া সত্ত্বেও ইন্টারনেট সেবা খাতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। আমাদের শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকদের জন্য আরও বেশি মানসম্মত সুযোগ সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে শক্তিশালী নেটওর্য়াক নির্মাণ ও বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে আমাদের বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে।
শেষ প্রান্তিকে নেটওয়ার্ক উন্নয়নে ৩৯০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এনওসি বন্ধের কারণে গ্রামীণফোনকে পরিকল্পিত বিনিয়োগের চেয়ে কম বিনিয়োগ করতে হয়েছে। শেষ প্রান্তিকে নেটওর্য়াক আধুনিকায়নের পাশাপাশি ৭১৫টি নতুন ফোরজি সাইট করা হয়েছে। ২০১৯ শেষে গ্রামীণফোনের মোট নেটওয়ার্ক সাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫০৮। গ্রামীণফোন ২০১৯ সালে কর, ভ্যাট, ফোরজি লাইসেন্স ফি, স্পেকটার্ম অ্যাসাইনমেন্ট ফি, ডিউটি ও ফিস বাবদ সরকারি কোষাগারে ৮ হাজার ৫১০ কোটি টাকা প্রদান করেছে, যা মোট আয়ের ৫৯ দশমিক ২ শতাংশ।