জানুয়ারিতেও বিদেশিদের শেয়ার বিক্রি দ্বিগুণ
সর্বনিম্ন দামে ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম থাকায় প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনছেন না। বরং নতুন বছরের প্রথম মাসে (জানুয়ারি) শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করেছেন প্রায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ কোনো ক্রমেই পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। আর তাতে দরপতন লেগেই আছে।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে বিদেশিরা মোট ৬৭৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন করেছেন। এর মধ্যে শেয়ার কিনেছেন মাত্র ২৭৪ কোটি টাকার। আর শেয়ার বিক্রি করেছেন ৪০২ কোটি টাকা। যা টাকার অংকে ১২৮ কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসের তুলনায় জানুয়ারিতে প্রায় দ্বিগুণ শেয়ার বিক্রি করেছেন। এর ফলে টানা ১১ মাস বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করেছেন বেশি। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদেশিরা শেয়ার বিক্রির তুলনায় কিনেছিলেন বেশি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাইফ সাপোর্ট থাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলেই লস। তাই লস কমাতে শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিচ্ছেন প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। কারণ, গত বছরের জানুয়ারিতে ২০১০ সালের ধসের চেয়ে ভয়াবহ ধস হয় পুঁজিবাজারে। এই ধসে নতুন করে বিনিয়োগকারীদের অন্তত ৮০ হাজার কোটি টাকা হাওয়া হয়েছে। এরপর অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পরও পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ায়নি। বরং দিন যতই যাচ্ছে পুঁজিগুলো খোয়া যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার ছাড়ছেন বিদেশিরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘পুঁজিবাজার ভালো না থাকায় বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়েছেন। এরা মূলত গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মা, ইউনাইটেড পাওয়ারসহ বেশি কিছু শেয়ারের বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে বাজারের অবস্থা খারাপ থাকার কারণে শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশি বলেন, বিদেশি বলেন সবাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন লাভের আশায়। কিন্তু যখন বিনিয়োগ করলেই মূলধন নাই হয়ে যায়, তখন আর বিনিয়োগ করবেনই কেন?’
ডিএসইর তথ্য মতে, গত বছরের ডিএসইতে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারী ৭ হাজার ৮৪৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনা বেচা করেছেন। যা তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের চেয়ে ১ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা কম লেনদেন হয়েছে। ২০১৯ সালে পৌনে ২৭ লাখ বিওধারী বিনিয়োগকারীরা ১ লাখ ১৩ হাজার ৮২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার কেনা বেচা করেছেন। সেখানে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনা-বেচা হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৮৪৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যা মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এর মধ্যে বিনিয়োগকারীরা ৩ হাজার ৬৭৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার কিনেছেন। তার বিপরীতে ৪ হাজার ১৬৬ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন।
এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে ২৪২ কার্যদিবসে বিনিয়োগকারীরা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৯১ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনা-বেচা করেছেন। তার মধ্যে প্রবাসী ও বিদেশিরা ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার কেনা-বেচা করেছেন। তারা ২০১৮ সালে ৪ হাজার ৪৯৬ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার কিনেছিলেন। তার বিপরীতে ৫ হাজার ৮৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন।