কুষ্টিয়ায় কিশোর-কিশোরী ক্লাবের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য ও সংশ্লিষ্টদের জন্য বরাদ্দকৃত নাস্তার এক তৃতীয়াংশ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কিশোর-কিশোরী ক্লাবের জেন্ডার প্রমোটর রাকিবুল হাসানসহ অন্যান্য ফিল্ড সুপারভাইজজারে। অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে লুটপাট চালিয়ে গেলেও দেখার কেউ নেই।
গত শুক্র ও শনিবার কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ক্লাবে সরেজমিন গিয়ে এসব তথ্যের সত্যতা মিলেছে। ৩৫ টাকার মধ্যে মাত্র ১২-১৫ টাকার নাস্তা সরবরাহ করা হচ্ছে এবং ৩০ জনের মধ্যে মাত্র ৫-১০ জন উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাঝে বরাদ্দ দিয়েই বাকী টাকা আত্মসাৎ করছে।
হাটশহরিপুর ইউনিয়নের দি ওল্ড হাইস্কুলের কেন্দ্রে গেলে দেখা যায়, সেখানে ৩০ জন উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৮ জন। তাদের ডিম, লাড্ডু ও পাউরুটি নাস্তা দেওয়া হয়েছে। এই নাস্তার মুল্য ১৫ টাকার বেশি নয়, এছাড়াও ৮ জনকে নাস্তা দিলেও ৩০জনের বিল উত্তোলন করা হয়।
বটতৈল ইউনিয়নের সঙ্গীতশিল্পী মৌলি জানান, গত শুক্রবার ৩০ জনের মধ্যে মাত্র একজন শিক্ষার্থী এসেছিল। তবে নাস্তায় কি দেওয়া হয়েছে সেটাও কিশোর-কিশোরী ক্লাবের জেন্ডার প্রমোটর রাকিবুল হাসান জানেন বলে জানান তিনি।
আইলচারা ইউনিয়নের আবৃত্তি শিক্ষক নওরীন নেহা জানান, ১০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিতত হয়েছিলেন। নাস্তা কেবলমাত্র এই উপস্থিত ১০জনকেই দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সকলকে মাস্ক দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের আবৃত্তি শিক্ষক ফারজানা পারভীন জানান, আমি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছি অনেকদিন। তবে আমার স্থানে বিউটি নামের একজনকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া ছিলো। কিন্তু সে ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আলামপুর ইউনিয়নের আবৃত্তি শিক্ষক স্নিগ্ধা আফরিন জানান ১০জনকে ডিম পাউরুটি ও লাড্ডু দিয়ে নাস্তা দেওয়া হয়েছে।
এখানকার এক শিক্ষার্থী জানান, ১০ থেকে ১৫ টাকার নাস্তা দেয়া হয়।করোনার সময় নাকি হ্যান্ড সেনিটাইজার এবং মাস্ক দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি।
এসব বিষয়ে দায়িত্বরত শিক্ষকরা জানান, প্রতিটি ক্লাসে ৩০ জন ছেলে এবং মেয়ে থাকার কথা থাকলেও নামে মাত্র কিছু কিছু কিশোর-কিশোরীরা এখানে আসে। তবে প্রতিদিনের এই নাস্তার টাকা বেঁচে যাওয়ার ব্যাপারটি সম্পর্কে জেন্ডার প্রমোটর রাকিবুল হাসানই বিষয়টি জানেন।
তবে এসব বিষয় নিয়ে জেন্ডার প্রমোটর রাকিবুল হাসান কোন কথা বলতে রাজি হননি।তিনি জানান, বিষয়টি আামাদের জেলার ডিডি ম্যাডাম দেখছেন।
কোন কোন ক্লাবে শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকলেও সেই বরাদ্দের টাকা নয়ছয় করে সরকারের এমন উন্নয়ন ভাবনা ম্লান করতে এই কর্মকর্তাকেই দুষছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূরে সফুরা ফেরদৌস এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ৩০ জনের জন্যই নাস্তা কিনতে হয়, কিন্তু অনেক সময় ২০-২৫ জন উপস্থিত হয়। যারা উপস্থিত হয়না তাদের নাস্তা অন্যরা খেয়ে নেয়।
উল্লেখ্য “শেখ হাসিনার উন্নয়ন, কৈশোরের জাগরণ” এই প্রতিপাদ্যের বিষয়ে সারাদেশে ২৪ নভেম্বর ২০১৯ ইং থেকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধিনে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত কিশোর কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়।এই প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি উপজেলায় দুজন করে ফিল্ড সুপারভাইজার, তিনজন করে জেন্ডার প্রমোটার, এবং প্রতিটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার জন্য সঙ্গীত শিক্ষক ও আবৃত্তি শিক্ষক নিয়োজিত রয়েছে।