টিউশনি হারিয়ে অসহায় বৃদ্ধ মোসলেম মাস্টার
মোসলেহ উদ্দিন ওরফে মোসলেম মাস্টার (৭৪)। প্রতিবন্ধী এই শিক্ষক করোনায় হারিয়েছেন টিউশনি। সাত মাস ধরে বন্ধ তার প্রতিবন্ধী ভাতা। এমন পরিস্থিতিতে তিনি খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
মোসলেম মাস্টারের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের বেকারকান্দা গ্রামে। একজন ইংরেজি শিক্ষক ও পত্রিকাপ্রেমী হিসাবে তিনি বেশ পরিচিত। শনিবার বার্তা২৪.কমের সাথে আলাপচারিতায় জীবনের নানা গল্পের কথা তুলে ধরেন তিনি।
মোসলেম মাস্টার বলেন স্বপ্ন ছিল চাকরি নিয়ে স্কুল-কলেজে ইংরেজি পড়াবো। ভাগ্যদোষে সেটা হয়নি। পেটের দায়ে টিউশনি ও খন্ডকালীন শিক্ষকতা শুরু করি। এখন বৃদ্ধ হওয়ায় টিউশনি পাইনা। অনেক কষ্টে দুই হাজার টাকার দুইটি টিউশনি পেয়েছিলাম। করোনায় সেটা বন্ধ হওয়ায় খুব অসহায় হয়ে গেছি।
১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাশ করে মোসলেম। ১৯৮৪ সালে তিনি একটি স্কুলে চাকরির জন্য ১৭ শতাংশ জমি বিক্রি করে পাঁচ হাজার টাকা দক্ষিণা দেন। কিন্তু ভগ্নিপতি সাদত আলী ও ভাগ্নে নজরুল ইসলাম জমি বিক্রি নিয়ে ষড়যন্ত্র করলেও চাকরিটাও হারাতে হয়। পরে ১৯৯৩ সালে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে টিউশনি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খন্ডকালীন শিক্ষকতা করেন মোসলেম। কিন্তু সহজ-সরল হওয়ায় অনেকেই তাকে প্রাপ্ত সম্মানী না দিয়ে ঠকাতো।
মোসলমের বাবা-মা বেঁচে নেই। সাত-ভাইবোনের মধ্যে পাঁচ জন মারা গেছেন। বড় ভাই জীবিত থাকলেও তেমন খোঁজ নেয়না। উল্টো বড় ভাইয়ের সন্তানরা তার বসতবাড়ির কিছু অংশ দখল করায় নিজের ঘর তুলতে পারছেন বলে অভিযোগ মোসলেমের।
জীবনের চুয়াত্তরটি বসন্ত পার করে বিয়ে করা হয়নি মোসলেমের। বসবাস করেন জরার্জীণ ঘরে। রান্নার কাজও নিজে সামলান। তবে জীবনের পড়ন্তবেলায় নতুন ঘর তুলে বিয়ের কথা ভাবছেন তিনি। ইচ্ছা আছে হজ্ব করার, লিখবেন নিজের আত্মজীবনী। এজন্য ঘুরে দাঁড়াতে চান এই শিক্ষক।
মোসলেম মাস্টার বলেন ইচ্ছা পূরণ করতে টাকা প্রয়োজন। তাই টিউশনি খোঁজার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ব্যাচ পড়াতে ঘর ভাড়া নিয়েছি। এখন টাকার অভাবে শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ-টেবিল বানাতে পারছিনা। হৃদয়বানরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমি খুশি হবো।
শিক্ষকতার পাশাপাশি মোসলেম মাস্টার একজন পত্রিকাপ্রেমী। অর্থাভাবে একটি দৈনিক পত্রিকা যৌথভাবে ক্রয় করতেন। ওই পত্রিকাটি পড়ার জন্য প্রতিদিন বাড়ি থেকে তিন মাইল পথ হেঁটে বাজারে আসতেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে কবি সেলিম বালা আজীবন মোসলেমেকে বিনামূল্যে পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা করে দেন।
গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক রায়হান উদ্দিন সরকার বলেন মোসলেম ভাই ইংরেজি বিষয়ে পড়াশোনা না করলেও ইংরেজিতে তার পান্ডিত্য মুগ্ধ করে। এই পত্রিকাপ্রেমীর সংগ্রহশালায় প্রায় ৬০ বছরের পত্রিকা সংগ্রহ রয়েছে। কিন্তু বুক সেলফ কিংবা আলামারি না থাকায় এসব তথ্য সংগ্রহ করতে পারছেনা তিনি। হৃদয়বানদের উচিত তাকে সাহায্য করা।