ভাঙা হাত নিয়েই স্কুলে শিশু জিহান
প্রায় ১৭ মাস আগে বন্ধ হয় সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনা মহামারি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর আবারও স্কুলে যাওয়ার অনুমতি মিলেছে শিক্ষার্থীদের। তবে স্কুলের স্বাদ পাওয়ার আগেই করোনার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয় ১ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জিহানের স্কুলে যাতায়াত। দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলার খবরে বাড়িতে বসে থাকেনি জিহান। ভাঙা হাত নিয়েই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে এসে হাজির সে। মা-বাবাও তার এমন উৎসাহ দেখে নিরুৎসাহিত করেনি।
বলছি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের বুড়িরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. জিহানের(৭) কথা। বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার শাহিদুল-জেসমিনের দম্পতি ছেলে সে।
তার পরিবার জানায়, প্রায় ১৫ দিন আগে স্কুল মাঠে খেলতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে তার বাঁ হাত ভেঙে যায়। এখানও তার চিকিৎসা চলমান। সুস্থ হতে আরও সময় দরকার বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তবে স্কুল খোলার খবর পেয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে ক্লাস করার আগ্রহ দেখে তাকে স্কুলে পাঠায় পরিবার। প্রথম দিনে অসুস্থ জিহানকে পাশে পেয়ে সহপাঠিরাও বেশ আনন্দিত। শিক্ষকরাও তার এমন উৎসাহ দেখে অনেক খুশি।
বুড়িরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূরন নবী জানান, তার বিদ্যালয়ে মোট ১৯০ জন শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষক। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও সমানভাবে উচ্ছ্বসিত বলে জানান তিনি।
তবে আজকে সকল ক্লাসের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসার নির্দেশনা না থাকলেও প্রতিটি ক্লাসের ৭০ ভাগ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। যাদের আজ ক্লাস নেই তাদের ক্লাস রুটিন দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিদ্যালয়টির ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজিদ বলেন, ‘আমরা বাড়িতে পড়াশোনা করলেও ক্লাসের মতো লেখাপড়া করা হয়নি। সবার সঙ্গে আগের মতো ক্লাস করতে পেরে আমি খুব খুশি।’
জেলার একাধিক প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গিয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের প্রথম দিনের ক্লাসে বরণ করে নিচ্ছেন শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের মাঝে মাস্ক সরবরাহ করতেও দেখা গিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
দলদলিয়া বালিকা উচ্চা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোন্নাফ আনছারি জানান, প্রথম দিনে বিদ্যালয়ে মোট ১৭০ জন শিক্ষার্থীর ৬০ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিতি হয়েছিল আজ। ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে আশাবাদী তিনি।
বিদ্যালয়টির দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাপলা মনি জানান, ‘অনেক দিনের উৎকণ্ঠা কাটিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে ক্লাস করতে অনেক ভালো লাগছে। আমরা এভাবেই ক্লাস করে পড়াশোনার ঘাটতি মেটাতে চাই।’
দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসায় স্বস্তিতে অবিভাবকেরা। শিক্ষার্থীদের যে কোনো উপায়ে ক্লাসমুখী করার এই পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার দাবি তাদের।