বিদেশে উচ্চশিক্ষা: প্রতিবেশীদের তুলনায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

  • আহসান জোবায়ের, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিদেশে উচ্চশিক্ষা: প্রতিবেশীদের তুলনায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

বিদেশে উচ্চশিক্ষা: প্রতিবেশীদের তুলনায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে। দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তবে বিভিন্ন জরিপ বলছে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত দেশের বাইরে ছুটলেও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছে।

জরিপে কারণ হিসেবে দেখেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি এবং জাপানসহ অনেক দেশ বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি, নাগরিকত্ত্ব সেবা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। তবে যোগ্যতা বিবেচনায় আমাদের শিক্ষার্থীরা কিছুটা পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।

বিজ্ঞাপন

ইউনেস্কোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট ৫২ হাজার ৭৯৯ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য বিদেশে গেছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮ হাজার ৫২৪ শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে, ৬ হাজার ৫৮৬ জন যুক্তরাজ্যে, ৫ হাজার ৮৩৫ জন কানাডায়, ৫ হাজার ৭১৪ জন মালয়েশিয়ায়, ৫ হাজার ৪৬ জন জার্মানিতে গেছে।

এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ায় ৪ হাজার ৯শ ৮৭, জাপানে ২ হাজার ৮২, ভারতে ২ হাজার ৬০৬ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১ হাজার ২০২ এবং সৌদি আরবে ১ হাজার ১৯০ জন উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ ছেড়েছে।

২০২২ সালে সর্বমোট ৪৯ হাজার ১৫১ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বিদেশ ভ্রমণ করেছে, এবং ২০২১ সালে ৪৪ হাজার ৩৩৮ জন শিক্ষার্থী বিদেশ ভ্রমণ করেছে।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা সংখ্যার দিক দিয়ে বাড়লেও জরিপের তথ্য মতে এখনও প্রতিবেশী ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তানের মতো অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের তুলনায় কম।

ইউনেস্কোর তথ্য অনুসারে, ভারত থেকে ২০২৩ সালে মোট ৫ লাখ ৮ হাজার ১৭৪ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গিয়েছে। যার মধ্যে ১ লাখ ৯ হাজার ৩২৯ জন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ৯৩ হাজার ৮৩৪ জন কানাডায়, ৮৩ হাজার ৯২৩ জন যুক্তরাজ্যে, ৬৮ হাজার ৭২৫ জন অস্ট্রেলিয়ায় এবং ২৮ হাজার ৭৭৩ জন জার্মানিতে রয়েছে।

২০২৩ সালে নেপাল থেকে মোট ৮৮ হাজার ৯০৪ জন শিক্ষার্থী শিক্ষার জন্য বিদেশে যায়। যার মধ্যে ৩২ হাজার ৯৯৯ জন শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায়, ১৮ হাজার ৪৩৬ জন জাপানে, ১৩ হাজার ৩৪ জন ভারতে, ১০ হাজার ৯২৯ জন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং ২ হাজার ৬১১ জন দক্ষিণ কোরিয়ায়।

একই বছর পাকিস্তান থেকে মোট ৭১ হাজার ৮৬৫ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গেছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৯৩২ জন যুক্তরাজ্যে, ৯ হাজার ৪৭২ জন অস্ট্রেলিয়ায়, ৭ হাজার ৪৯৮ জন কিরগিজস্তানে, ৭ হাজার ১৩৩ জন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং ৬ হাজার ২৬০ জন জার্মানিতে গেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চশিক্ষায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত দেশগুলো অনেক সুযোগ তৈরি করছে। ভাল চাকরির সুযোগ, অস্থায়ী/স্থায়ী আবাসনের অনুমতি এবং উচ্চমানের জীবনযাপনের সুযোগ তারা দিচ্ছে। অনেক পশ্চিমা দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া, শ্রমশক্তি সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় শিক্ষাগত অভিবাসনের মাধ্যমে তাদের শ্রমের ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করছে।

এবিষয়ে কথা হয় ‘গো এভ্রোড বাংলাদেশ’ এর সিইও ফাইজুল ইসলাম অয়নের সাথে। তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর পড়া শেষ করতে একজন শিক্ষার্থী কয়েক লাখ টাকা খরচ করে ফেলে। এরপর সে যখন চাকুরীর বাজারে আসে, সেখানে ভালো সেলারী পায় না। ২০ লাখ টাকা খরচে ব্যাচেলর শেষ করে ২৫ হাজার টাকা সেলারীর চাকুরী সে করতে চায় না। তাই সে বিদেশ চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

তিনি আরও বলেন, ব্যাচেলরে পড়ার জন্য যেসব শিক্ষার্থী দেশের বাইরে যায় তাদের ৯০ শতাংশ সার্ভাইভ করতে পারে না। তারা একসময় পাশ্ববর্তী দেশগুলোয় স্থানান্তরিত হয়ে যায় এবং মাইগ্রেশনের জন্য আবেদন করে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী ফারুক হোসেন বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা বিশ্বায়ণের একটা প্রভাব। এখন ঘরে বসেই তারা বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে পারছে। তারা নতুন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকে দেশের বাইরে পড়তে যাচ্ছে।

তবে এসকল মেধাবীরা আবার দেশ ফেরত আসছে কিনা সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারা যদি দেশে ফিরে না আসে এটা আমাদের জন্য এলার্মিং। এ বিষয়ে আমাদের ও সরকারের কাজ করার সুযোগ আছে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশ ফিরিয়ে এনে দেশের কাজে লাগাতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ফেরদৌস জামান বলেন, মেধাবীরা দেশ ছাড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিং। যেসব পরিবারের সামর্থ্য আছে তারা তাদের সন্তানদের উন্নত পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেশনজট একটা কারণ হতে পারে।

তবে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে থাকার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ভারতের জনসংখ্যা আমাদের তুলনায় অনেক বেশি। রেশিও হিসেবে আমরা এগিয়ে থাকবো। নেপাল ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আছে একটা পর্যায়ে এসে। আমাদের শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও প্রতিবছর বাড়ছে।