প্রাথমিকের বই ছাপানো শেষ, শঙ্কায় নবম শ্রেণি

  • আহসান জোবায়ের, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

শিক্ষার্থীদের হাতে নিম্নমানের কাগজ ও অনুজ্জ্বল বই বিতরণের অভিযোগে চলতি শিক্ষাবর্ষে ব্যাপক সমালোচনায় ছিল এনসিটিবি। অনেক শিক্ষার্থীর হাতেই বই পৌঁছেছে তিন থেকে চার মাস পরে। এরই মধ্যে আগামী বছরের বইয়ের মান নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। তবে আগামী শিক্ষাবর্ষে যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

ইতোমধ্যে প্রাথমিকের বই ছাপানো শেষ হয়েছে, শঙ্কা রয়েছে নবম শ্রেণীর বই নিয়ে। ৮ম ও ৯ম শ্রেণীর বই আসবে নতুন কারিকুলামে। সবমিলিয়ে ছাপানো হচ্ছে প্রায় ৩১ কোটি বই। নির্বাচনের আগেই বই পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাতদিন এক করে কাজ চলছে প্রেসগুলোতে। নতুন বছরের শুরুতে পুরো সেট পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, এ বছর চারটি শ্রেণিতেই নতুন কারিকুলামের পাঠ্যবই পাবে শিক্ষার্থীরা। চলতি বছরে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন কারিকুলামের বই দেয়া হয়েছে। নতুন ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে আরও দুই শ্রেণীতে অর্থাৎ অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও নতুন কারিকুলামের বই মুদ্রণ করা হচ্ছে। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে দশম শ্রেণীর নতুন কারিকুলামে বই তৈরি হবে।

এনসিটিবি জানিয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের ৯ কোটি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রাথমিকের বই ছাপানো প্রায় শেষ। সেগুলো দেশের বিভিন্ন উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ছাপা শেষ হয়ে যাবে। ৮ম শ্রেণীর বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রস্তত। প্রেসে গেলে নম্ভেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ হবে। নবম শ্রেণীর বইয়ের কাজ এখনো বাকী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পার্চেজ কমিটির মিটিং হলে পাণ্ডুলিপি দ্রুত প্রেসে যাবে, আনুমানিক ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মধ্যে নবম শ্রেণীর বই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধরা হয়েছে তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন। তাদের জন্য বই ছাপা হচ্ছে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি। নতুন কারিকুলামের কারণে একজন শিক্ষার্থী ১০টি করে বই পাবে। যার ফলে গতবারের চেয়ে এবার ৩ কোটি বই কম ছাপানো হচ্ছে।

সরেজমিন মাতুয়াইল প্রেস পাড়া ঘুরে দেখা গেছে, প্রেসে প্রেসে চলছে বোর্ড বই ছাপানোর কাজ। বিশালাকৃতির ছাপাখানা মেশিনে ছাপানো হচ্ছে বই। ছাপানোর সাথে সাথে বাঁধাই কর্মীরা বই বাঁধাই করে সারি সারি করে রেখেছেন। এনসিটিবির তদারকিতে দ্রুত কাজ শেষ করছেন মুদ্রণ মালিকরা।

কাগজের বাজার তুলনামূলক স্থিতিশীল হওয়ায় এই বছর কাগজ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই৷ তবে নিম্নমানের কাগজ ব্যবহারের শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মুদ্রণ সমিতি।

মুদ্রণ মালিক সমিতির সভাপতি রুপালি প্রিন্টার্স এন্ড ম্যাগাজিনের স্বত্বাধিকারী শহিদ সেরনিয়াবাত বলেন, ‘এই বছর বই সময়মতো পৌঁছাবে। গত বছরের মত বিলম্ব হবেনা। প্রেসগুলো ব্যস্ত। কিন্তু নবম শ্রেণীর বই নিয়ে কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। এই বই সময়মতো পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।’

তিনি আরও বলেন, ‘সময়মতো পেলেও বইয়ের মান নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এনসিটিবি থেকে নির্দেশনা দেওয়া থাকলেও অনেকে সেটি মানছেন না। আমি নাম বলবো না, অনেক প্রেসে নিউজ প্রিন্টে বই ছাপানো চলছে। এসব বই কয় মাস টিকবে আমি জানি না। এনসিটিবির উচিত এসব তদারকি করা।’

জনতা প্রেসের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম কাজল বলেন, ‘আমাদের প্রাইমারি স্কুলের যে বইয়ের দায়িত্ব পেয়েছি, সেটার কাজ শেষ। তবে তৃতীয় শ্রেণির খ্রিষ্টান ধর্ম ও শিক্ষা ও হিন্দু ধর্মের বইয়ে আবার সংশোধনের জন্য নিয়ে গেছে। অন্যদিকে ৭ম শ্রেণির তিনটি প্যাকেজ পেয়েছি (এক প্যাকেজে ৪ লাখ বই থাকে)। সেগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করে পাঠিয়ে দিব।’

কাগজের মানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাগজের মান নিশ্চিতে বোর্ড থেকে প্রেসগুলোকে মনিটরিংয়ে রেখেছে। প্রেস মালিকরাও চাপে আছে। বাকিটা বই হাতে পাওয়ার পর বোঝা যাবে।’

আনমন প্রেসের বাঁধাই কর্মী মো. সোহাগ বলেন, ‘৮ম শ্রেণির বইয়ের ৪টি প্যাকেজের টেন্ডার হয়েছে, কিন্তু এনসিটিবি থেকে এখনো পাণ্ডুলিপি পাঠায়নি। তারা যখনি পাঠাবে আমরা কাজ করে দ্রুত জমা দিয়ে দিব। অনেক সময় তারা প্রেসে পাঠানোর পরে ভুল থাকে তখন সংশোধন করতে আবার ফেরত নিয়ে যায়, এভাবে মাঝে মাঝে পৌঁছাতে দেরি হয়।’

তবে নবম শ্রেণির বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন রেদোয়ানি প্রেসের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, নবম শ্রেণির বইয়ের কোনো কার্যক্রম এখনো শুরুই হয়নি। দেরিতে শুরু হলে বইও দেরিতে যাবে। তিনি বলেন, ছোট প্রেসগুলো শর্ত পূরণ করলেও কাজ কম পায়। কিন্তু বড় প্রেসগুলো বেশি কাজ পেলেও তারা যথাসময়ে কাজ শেষ করতে পারেনা।


এনসিটিবির শিক্ষাক্রম সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘গতবছর কাগজ পাওয়া যায়নি, বিদ্যুৎ, পানিসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে বই দিতে বিলম্ব হয়েছে। এই বছর এসব সমস্যা পোহাতে হয়নি। দাম বেশি হলেও বাজারে কাগজ রয়েছে। তাই এ বছর সময়মতো বই পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে নতুন কারিকুলামের কারণে এবার ৮ম ও ৯ম শ্রেণীর বই প্রস্তত করতে দেরি হয়েছে।’

সার্বিক বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘এই বছর খুব গুরুত্বের সাথে বইয়ের তদারকি করছি। গতবছর কাগজের বাজার অস্থিতিশীল ও প্রেস মালিকদের কিছু হেয়ালির কারণে বই পেতে বিলম্ব হয়েছে। এবার তেমনটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ বছর আমি নিজেই ব্যাংকে বলে পেপার মিল মালিকদের লোন পেতে সাহায্য করেছি। তারা যেন সহজে কাগজ আমদানি করতে পারে। এবার কাগজের দাম ও স্থিতিশীল। আশা করি সঠিক সময়ে বই পৌঁছাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাইমারির বইয়ের কাজ প্রায় শেষ। নভেম্বরের মধ্যেই পৌঁছে যাবে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বইয়ের কাজও প্রায় শেষ। নতুন কারিকুলামের কারণে সমাজবিজ্ঞানের সিলেবাস নিয়ে একটু সমস্যা। দ্রুত কাজ শেষ হয়ে যাবে। নবম শ্রেণীর বই নিয়ে একটু শঙ্কা আছে, কারণ বইটি লিখতে দেরি হয়েছে। অর্থমন্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় পার্চেজ কমিটির মিটিং হয়নি। সেখানে চূড়ান্ত হলে আমরা পাণ্ডুলিপি প্রেসে পাঠিয়ে দিব।’