’অ্যাসাইনমেন্ট’ নিয়ে বিপাকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক

  • আহসান জোবায়ের, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অ্যাসাইনমেন্ট সিস্টেমে পড়াশোনা নিয়ে ধোঁয়াশায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবক

অ্যাসাইনমেন্ট সিস্টেমে পড়াশোনা নিয়ে ধোঁয়াশায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবক

নতুন শিক্ষাক্রম-২০২২ বাস্তবায়নে দুই শ্রেণীতে চালু হয়েছে নতুন পাঠ পদ্ধতি। শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ শেষ হতে চললেও অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমের অংশ করার লক্ষ্যে চলতি বছরের শুরু থেকেই অ্যাসাইনমেন্ট, প্রজেক্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে পাঠ দেয়া হচ্ছে। কয়েক দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ফলাফল মূল্যায়নের লক্ষ্যে ‘নৈপুণ্য’ অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়েছে সম্প্রতি। কিন্তু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এ বিষয়ে দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীরা বলছেন, অ্যাসাইনমেন্ট বাড়তি চাপ তৈরি করছে। শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে অ্যাসাইনমেন্ট দিলেও যথাযথ নির্দেশনা তারা পাচ্ছেন না। আবার অভিভাবকরা নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে অবগত না থাকায় কোনো ধরনের সহযোগিতাও করতে পারছেন না। রাত জেগে নিজে নিজেই অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রজেক্ট তৈরি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবু হেনা রাফি বলেন, অ্যাসাইনমেন্ট কীভাবে করতে হয় সেটা বুঝতে অনেক সময় চলে যায়। রাত জেগে অ্যাসাইনমেন্ট করতে হয়। অনেক সময় বুঝতে পারি না কোনটার পর কোনটা লিখতে হবে। আগে তো মা-বাবাকে বললে তারা বুঝায় দিত। এখন সে সুযোগটা পাচ্ছি না।

বিজ্ঞাপন

বাংলাবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারজিন লুবনা বার্তা২৪.কমকে বলেন, সারাদিন স্কুলে ক্লাস করে বাসায় যাই। একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রজেক্টের কাজ করতে হয়। অনেক রাত হয়ে যায়, সকালে উঠতে দেরি হয়। আগের তুলনায় আমাদের প্রতিদিনকার রুটিনেও অনেক পরিবর্তন চলে এসেছে। যা আমরা সহজভাবে নিতে পারতেছি না।

রাজধানীর মুসলিম হাই স্কুলের শিক্ষার্থীর অভিভাবক সাবেরা সুলতানা বার্তা২৪.কমকে বলেন, অ্যাসাইনমেন্ট করতে গিয়ে আমাদের খরচ বেড়েছে। বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনতে হয়, আগে এসবের ঝামেলা ছিল না। আর এখন যা করার আমার বাচ্চাকে একা একাই করতে হয়। আগে তো আমি দেখিয়ে দিতাম। এখন আমি নিজেই বুঝতে পারতেছি না তাকে কীভাবে হেল্প করবো? এখন পরীক্ষা নেই, কীভাবে বুঝবো সে পাস করছে না ফেল করছে! বলতেছে মূল্যায়ন করবে। কিন্তু এ বিষয়ে স্কুল থেকে আমাদের কিছুই বুঝিয়ে বলা হয়নি। অভিভাবক হিসেবে আমাদের তো চিন্তা থেকেই যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সরকারি বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, আমরা এখনো নতুন শিক্ষাক্রমের তেমন কোনো প্রশিক্ষণ পাইনি। যা হয়েছে নামেমাত্র। ফলে জানি না কীভাবে পড়াতে হবে। নতুন কারিকুলামের সব বই পেতে পেতে আমাদের বছরের প্রায় অর্ধেক সময় চলে গেছে। শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন বিষয় উপভোগ করলেও অনেক কিছুই শিখছে না। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও বছরের শুরু থেকেই সব বই পেলে আমরা সেরাটা দিতে পারবো।

পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুলের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুস সাত্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রম এনজয় করছে। তারা হাসিখুশি ভাবেই কাজ করছে। আমাদের নির্দেশনা কীভাবে হয়েছে, বাড়তি চাপ না দিতে। তবে অভিভাবকদের একটি অংশের মধ্যে অসন্তোষ আছে। কিছুদিন গেলে তারাও অভ্যস্ত হয়ে যাবেন।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) মো. মশিউজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, অ্যাসাইনমেন্ট বা প্রজেক্ট শিক্ষার্থীকেই করতে হবে। শিক্ষক বা অভিভাবক করে দিবে না। আর শিক্ষক ও অভিভাবকরা যদি তার কাজ করে দেয়, তাহলে সে শিখতে পারবে না। আমরা জানি, তার কাজ কোনো বিশেষজ্ঞের মতো হবে না। আমরা জানতে চাই, সে কাজটা করার প্রসেস জানে কিনা। তাকে যেভাবে বলা হচ্ছে সে সেভাবে করতে পারছে কিনা! এখন একজন শিক্ষক যদি ভালো ইন্সট্রাকশন না দিতে পারে, যেভাবে দিয়েছে সেভাবেই করুক।

অভিভাবকরা নতুন কারিকুলামে অভ্যস্ত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের অভিভাবকরা আগের কারিকুলামের কিছু বুঝত? নোট গাইড পড়াতো আর কোচিংয়ে পাঠাতো। এখানে অভিভাবকদের পার্টিসিপেশনের বিষয়টি হচ্ছে, তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে। কোনো শিক্ষার্থী অ্যাসাইনমেন্ট করার সময় কোনো তথ্য জানার প্রয়োজন হলে সে অভিভাবকের সাহায্য নিবে। অভিভাবক নিজে জানলে সেটা জানাবে, না জানলে কমিউনিটির মধ্যে কেউ এ বিষয়ে জানলে তার কাছ থেকে জানতে সাহায্য করবে। তথ্য সংগ্রহ করতে হবে বিভিন্ন সোর্স থেকে।

উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো বিষয় হলে শিক্ষার্থী তার অভিভাবকের কাছ থেকে সে বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা নিবে। ওই সমস্যার সম্মুখীন হলে তিনি কীভাবে কাজ করেন, সেটা জানাবে। তারপর স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে যাবে। ওষুধের দোকানের মালিকের সাথে কথা বলবে। ওই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কাছে যাবে।

অভিভাবক সম্মেলন প্রসঙ্গে বলেন, সব কারিকুলামেই অভিভাবক সম্মেলন ছিল। তবে এখন একটু বেশি করতে বলা হচ্ছে অভিভাবকদের কাছে মেসেজ দেয়ার জন্য। অভিভাবকদের কারিকুলাম বুঝার দরকার নেই, অ্যাসাইনমেন্ট করে দেয়ারও দরকার নেই। শুধু যখন তার সন্তানের প্রয়োজন হবে সাধ্যমতো তথ্য খুঁজে পেতে তিনি সাহায্য করবেন।