গুচ্ছ ছাড়তে ‘তোড়জোড়’, হাল ধরবে কে?

  • আহসান জোবায়ের, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

 

সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে আবারও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের ‘প্রতিশ্রুতি’ রক্ষা না করা, একক ভর্তি পরীক্ষার নীতিমালা নিয়ে ইউজিসি-মন্ত্রনালয়ের ‘বিরোধ’, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বকীয়তা নষ্ট হওয়া, ভর্তি ও ক্লাস শুরু হতে অধিক সময়ক্ষেপণ এবং শিক্ষার্থী সংকটে সিট ফাঁকা থাকা সহ নানাবিধ অভিযোগ এনে এই প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়াকে ‘বাণিজ্যিক ও স্বার্থসিদ্ধির কৌশল’ বলেও আখ্যা দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এদিকে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে উপাচার্যদের যৌথ সভা আয়োজনের বিষয়েও তৈরী হয়েছে ধোঁয়াশা। এতে করে গুচ্ছ ভর্তির নেতৃত্ব নিয়েও ‘অন্ধকারে’ রয়েছেন শিক্ষকরা।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, গত শিক্ষাবর্ষের ন্যায় এবারও সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের পক্ষে মত দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। পূর্বের ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এবার নতুন আরও দুইটি বিশ্ববিদ্যালয় যোগ হয়ে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গুচ্ছ আয়োজনের কথা রয়েছে। তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবারও গুচ্ছে যেতে নারাজ। গত শিক্ষাবর্ষের ন্যায় এবারও তারা গুচ্ছে না থাকার পক্ষে মতামত জানিয়েছেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এবারও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে আশাবাদি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

ইউজিসি বলছে, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কারণে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি কমেছে। একই সাথে খরচও কমেছে। শিক্ষার্থীরা মাত্র একবার আবেদন ফি দিয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা নিজ জেলায় ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। এই পদ্ধতি কোনো ক্রমেই বাতিল করা যাবে না।

গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহ সভাপতি ড. ফায়েকুজ্জামান মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, গুচ্ছ ভর্তির যে প্রক্রিয়া সেটি বিশ্ববিদ্যালয় ধারণাটির সাথে সাংঘর্ষিক। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা একটি স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। শিক্ষার্থীদের হয়রানির নামে এই স্বাতন্ত্র্যবোধকে নষ্ট করা হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। জট তৈরী হচ্ছে, আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তথাকথিত কিছু উপাচার্য ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের কাছে নিজেদের ইমেজ তৈরী ও লবিং-তদবিরের পথ সুগম করার জন্য এই প্রক্রিয়া সৃষ্টি করেছেন। যা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি আইনুল ইসলাম বলেন, আমারা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে আমরা আগের সিদ্ধান্তে অটল আছি। আমরা চাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বকীয়তা রক্ষায় নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষায় ফেরত আসবে। যেহেতু এবার ইউজিসি একক ভর্তি পরীক্ষা নিবেনা তাই আমরা আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে পদক্ষেপ নিব।

গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়াকে সময়ক্ষেপন আখ্যা দিয়ে পিরোজপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন বার্তা২৪. কমকে বলেন, গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া অনেক ধীরগতির। ছাত্রদের ভর্তি করিয়ে ক্লাস শুরু হতে হতে অনেক সময়ক্ষেপণ হয়ে যায়। ছাত্রদের একদিকে উপকারের কথা বলে অন্যদিকে আরও বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। আর বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো না আসলে এটার মান নিয়েও কথা উঠে। মন্ত্রণালয়ের উচিত দ্রুত এ বিষয়ে কাজ করা।

গত কয়েক বছর ধরে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এবারের গুচ্ছ নিয়ে তিনি মুখ খুলতেও নারাজ। তিনি বার্তা২৪. কমকে বলেন, গুচ্ছ ভর্তি নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। ভর্তি কবে, সভা কবে?—এসব নিয়ে আমার মন্তব্য নেই। আমি এসবের নেতৃত্বেও থাকতে চাই না।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান বার্তা২৪. কম-কে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিবে এ বিষয়ে আমরা আশাবাদি। মন্ত্রণালয় আমাদের বলেছিলো একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে উপাচার্যদের সাথে সভা করে মতামত জানাতে। আমরা সেটা করেছি কিন্তু মন্ত্রণালয় এক্সেপ্ট করেনি। গুচ্ছ থেকে যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বের হয়ে যেতে চায় এটা তাদের সিদ্ধান্ত, আমাদের এখনো এ বিষয়ে কথা বলার সময় আসেনি। এবার নেতৃত্ব কোন বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে সেটা উপাচার্যদের সভায় সিদ্ধান্ত হবে, আমাদের কাজ শুধু তদারকি ও নির্দেশনা দেয়া।