নতুন বই পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

বিপুল উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ দেশজুড়ে অনু‌ষ্ঠিত হয়েছে বই বিতরণ উৎসব। ২০১০ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসব করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দিচ্ছে সরকার।

প্রতিবারের ন্যায় এবারও বছরের প্রথম দিন দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন বইয়ের ঘ্রাণে আর উল্লাসে মেতে উঠে শিক্ষার্থীরা। নতুন বই হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সারাদেশে বছরের প্রথম দিনেই প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ইবতেদায়ি, দাখিল ও কারিগরি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে পৌঁছে গেছে নতুন বই। বই হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বছরের প্রথম দিনে বই হাতে পাওয়ায় শুরু থেকেই পড়ালেখা শুরু করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। তবে বছরের প্রথম দিন প্রাথমিকের শতভাগ শিক্ষার্থীরা নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিতে পারলেও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পায়নি।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১ জানুয়ারি) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর মিরপুরের ন্যাশনাল (সকাল-বিকেল) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ‘বই বিতরণ উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়। পরে দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয় নতুন বই। এর আগে রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে ‘বই উৎসব’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


মেহেরপুর:

সকাল সাড়ে ৯ টার সময় মেহেরপুর বিএম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীতের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শামীম হাসান।

তবে মাধ্যমিক পর্যায়ে এখন পর্যন্ত ৫৬ ভাগ বই পৌঁছেছে স্কুলগুলোতে, বাকি বইগুলো দ্রুত পৌঁছে যাবে বলে দাবি মেহেরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্বাস উদ্দীনের। আর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী সমস্ত বই বিদ্যালয়গুলোতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

বগুড়া:

সোমবার (১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বগুড়ার ইসলাম শহরের ঝোপগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই উৎসব শুরু হয়। জেলা প্রশাসক সাইফুল উদ্বোধন করবেন। এরপর স্কুলে স্কুলে শুরু হবে বই বিতরণ।

বগুড়া জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আসাদুজ্জামান জানান, বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ২০২৪ শিক্ষা বর্ষে সম্ভাব্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ৭৭ হাজার ২৪৬ জন। আর বই এর চাহিদা দুই লাখ ৭০ হাজার ১৮০টি। ইতিমধ্যে শতভাগ বই বিদ্যালয়গুলোতে পৌঁছানো হয়েছে। সোমবার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই উৎসব পালিত হবে।

চট্টগ্রাম:

সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান নগরীর ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন। এরপর স্কুলে স্কুলে শুরু হয় বই বিতরণ।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, এবার নতুন বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯০টি। বছরের প্রথমদিন চট্টগ্রামের ৪ হাজার ৩৪৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৪ জন শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হবে নতুন বই। যেখানে গতবার বইয়ের চাহিদা ছিল ৪৭ লাখ ৫২ হাজার ২৯৭টি।

রাজশাহী:

সোমবার (১ জানুয়ারি) সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন স্কুলে নতুন বইয়ের উৎসব শুরু হয়। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরাও এই উৎসবের আমেজে মেতে উঠে। নগরীর উপজেলা পর্যায়ের স্কুলগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন আমেজে পালিত হয় বই উৎসব। বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয়। বছরের প্রথম দিন ঝকঝকে পাঠ্যবই হাতে পেয়ে দারুণ খুশি ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা।

নতুন বই হাতে নিয়ে সিরাজুম মুনিরা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বই পেলাম, ডায়েরি পেলাম। অনেক ভাল লাগছে। পড়ালেখা করবো।’

রাজশাহীতে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ২০২৪ সালে সম্ভাব্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৬৩ হাজার ২৮৮ জন। এ সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে ১ কোটি ৩০ লাখ ৩৬৬ টি বই বিতরণ করা হয়। রাজশাহীর ১ হাজার ৫৭ টি সরকারি ও ৮৭৮ টি বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ‍বই বিতরণ করা হয়।

এ জেলায় বাংলা ভার্সনে মোট বরাদ্দের ৬৪ শতাংশ, এসএসসি ভোকেশনাল পর্যায়ে ৫৪ শতাংশ, ভোকেশনাল ট্রেড ৪০ শতাংশ ও ইরেজি ভার্সনে ৪৫ শতাংশ ই বিতরণ করা হয়। এছাড়া এবতেদায়ী পর্যায়ে শতভাগ ও দাখিল পর্যায়ে ৫৮ শতাংশ বই বিতরণ করা হচ্ছে।

নরসিংদী:

নরসিংদীতে সকল প্রাক প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে ১৩ লাখ ২১ হাজার ৮৯৫টি নতুন বই বিতরণ করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টায় শহরের ভেলানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম।

জেলায় প্রাক প্রাথমিক ৪৭ হাজার ৬৮৭ জন শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বই দেওয়া হয়। এছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারি ৭৭৩ ও বেসরকারি ৭১৩ টি প্রতিষ্ঠানের জন্য মোট ২ লাখ ৬৯ হাজার ৮৭৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য নতুন বই বিতরণ করা হয়। জেলায় চার ইংরেজি ভার্সন প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪০৫০ কপি নতুন বই বিতরণ করা হয়।

ফেনী:

ফেনীতে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা সব নতুন বই হাতে পেলেও এই উৎসবে মাধ্যমিকের অনেক শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছায়নি নতুন বই। শহরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায় অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের বই এলেও নবম শ্রেণির বই এখনও আসেনি। একই সমস্যা শিশু নিকেতন স্কুলে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় সম্পূর্ণ নতুন বই জোটেনি ৮ম ও ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের।

জেলা শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, ফেনীতে মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী ১ লাখ ৬৪ হাজার ১৮৫ জন এবং মাদরাসায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫ জন। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে বইয়ের মোট চাহিদা ২৬ লাখ ৯১ হাজার ৩৯২টি। কিন্তু ফেনীতে এখন পর্যন্ত বই এসেছে ১৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫৭৯ টি। মোট প্রাপ্তির হার ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

বরিশাল:

সোমবার (১ জানুয়ারী) সকালে বরিশাল সদর গার্লস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বই বিতরণ উৎসব উদ্বোধন করেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী।

জেলার ১০ উপজেলার ৪৬৯টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকেে এবং ২৩৯টি মাদ্রাসায় ৩৭ লাখ ৮৮ হাজার ৪৯৬ টি বই শিক্ষার্থীদের হাতে বিতরন করা হয়।

এ সময় নতুন বই হাতে পেয়ে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার ইভা জানান, আমি সব সময় ভালো লেখাপড়া করে মা বাবার ইচ্ছে পূরণের জন্য ভালো রেজাল্ট করি। আমার বই পড়তে অনেক ভালো লাগে তার চেয়ে বেশি ভালো লাগে বছরের প্রথম দিনে নতুন বই হাতে পেয়ে।

এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সামীম হোসেন জনি বলেন, আমাদের সময় বই কিনে পড়ার সবার সামর্থ্য ছিল না। যদিও কেউ বই কিনতো তাও পুরাতন বই। এখন সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়েছে। বছরের প্রথম দিনে শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার জন্য আমরা অভিবকরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।

যশোর

সোমবার (১ জানুয়ারি) সকাল থেকে জেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা শীতের সকালে নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। জেলায় মোট ১হাজার ২৮৯ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৫৩৪ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বই বিতারণ উৎসব পালন করা হয়।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, যশোরে প্রাথমিকে বইয়ের চাহিদা ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫১ টি। চাহিদার শতভাগ বই জেলায় এসেছে এবং সেগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতারণ করা হয়েছে।

সিলেট

উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও বই বিতরণ উৎসব পালিত হয়েছে। সোমবার (১জানুয়ারি) প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের আয়োজনে সিলেট নগরীর দুর্গাকুমার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বই বিতরণ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।

 

কুমিল্লা

নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন বই হাতে পাওয়ার আনন্দে মেতে উঠেছে কুমিল্লার শিশুরা। সোমবার (১ জানুয়ারি) জেলার প্রতিটি স্কুলে পাঠ্যপুস্তক উৎসব উদযাপন করা হয়।

এ বছর জেলার ৭ লাখ ৯২ হাজার ৬৪৬ জন মাধ্যমিক, প্রাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে ৮৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৮৪ টি বই বিতরণ করা হয়।

 

চাঁদপুর

বিপুল উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে চাঁদপুরে বই বিতরণ উৎসব-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১ জানুয়ারি) সকালে বই বিতরণ উৎসবের উদ্ধোধন করেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান।

এ সময় শিক্ষার্থীরা একযোগে নতুন বই উঁচিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। জেলায় প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ১২ লাখ ৩৬ হাজার এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় ২২ লাখ ৫০ হাজার নতুন বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।

এনসিটিবি সূত্রমতে, এবার সারা দেশে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজারের মতো নতুন বই বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে প্রাথমিকে বই ৯ কোটি ৩৮ লাখের বেশি এবং মাধ্যমিক স্তরের বই ২১ কোটি ৩২ লাখের বেশি। প্রাথমিকের সব বই ছাপা হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিকের সব বই ছাপা শেষ হয়নি।