শিক্ষাঙ্গনে কেউ অনিয়ম করলে কঠোর শাস্তি: শিক্ষামন্ত্রী

  • স্টাফ করেসটন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ‘শিক্ষাঙ্গনে ভর্তি বাণিজ্য ও অন্যকোনো অনৈতিকতা ও অনিয়মের সঙ্গে কেউ যুক্ত হলে তাদেরকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। এই নির্দেশনাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।’

রোববার (২১ জানুয়ারি) সকালে নগরীর কে.সিদে রোডস্থ প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি নীতি নির্ধারণই কাঠামো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা প্রায়োগিকস্তরগুলো হলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়- দপ্তর, অধিদপ্তর এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাঠামোগুলো এবং এইসব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা পাঠ্যক্রমকে সময় ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হবে উল্লেখ করে বলেন, নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে যে বন্ধ্যাত্ব বিদ্যমান তা সমাজকে স্থবির করে দেয়। নতুন কারিকুলামের প্রধান লক্ষ্য হলো আমাদের সন্তানদের দক্ষ, জ্ঞান ও বিজ্ঞান মনস্ক মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা। তাই একেবারে তৃণমূল থেকেই শিক্ষার্থীরা যাতে ভবিষ্যতের বিশ্বনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে এবং তারাই একদিন আমাদের অর্থনীতি ও জাতীয় উৎপাদনে প্রধান কারিগর ও চালিকা শক্তি হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, বর্তমানে প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহণ করলেও মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ১ কোটি ৮০ লক্ষ শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহণ করতে পারে। এই ২ কোটির মধ্যে মাত্র ২০ লক্ষ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত পাঠ গ্রহণ করতে পারে। তাই এই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, প্রচলিত শিক্ষা ও পাঠগ্রহণ কার্যক্রমে বিশাল অঙ্কের শিক্ষার্থী নিম্ন মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পাঠগ্রহণ করতে পারায় তারা দক্ষ মানবসম্পদে উন্নীত হতে পারছে না। বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাঙালিদের অধিকাংশই অদক্ষ। তাই এই খ্যাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের গতি খুবই মন্থর।

‘স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে যে ২৯ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এগুলোর অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো সংস্কার অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেবে। তিনি এও উল্লেখ করেন যে, শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব না হলেও এখন থেকেই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারলে আমরা অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হব।’

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের অধীনে শান্তি, শৃঙ্খলা ও জন নিরাপত্তা সুরক্ষায় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে একটি মনিটরিং সেল গঠন মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট নীতি নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে রাজনীতি সৃষ্টিশীল এবং জনকল্যাণমুখী ও জনবান্ধব।

তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অব‌্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কথা উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক দোকান পাঠ নয়, শিক্ষার্থীরা যাতে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারে এবং নিজেরা নিজেদের সংস্থান করতে পারে সেই দিকে শিক্ষক ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্টদের মনোযোগী হতে হবে।

শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী আরও বলেন, নিজেদের পেশার প্রতি দায়িত্বশীল ও কর্তব্য পরায়ণ হতে হবে। শিক্ষকরা অবশ্যই রাজনীতি করবেন, কিন্তু অন্ধভাবে রাজনৈতিক দলের তোষামোদকারী হয়ে নিজের হীন স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা না করাটায় বাঞ্ছনীয়। এতেই শিক্ষাঙ্গনে নৈতিকতা ও সৃজনশীলতার বাস্তব প্রতিফলন ঘটবে এবং শিক্ষাঙ্গনে শত ফুল বিকশিত হবে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সাথে আনুপাতিক হারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় শিক্ষা খ্যাতের অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনা নেই বললেই চলে। সমগ্র দক্ষিণ চট্টগ্রামে একটি মাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও কোন মেডিকেল কলেজ ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। তাই শিক্ষার অগ্রসরমানতা দক্ষিণ চট্টগ্রাম জেলা অপেক্ষাকৃত মন্থর। এই প্রেক্ষিতে দক্ষিণ চট্টগ্রামে পাবলিক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম.এ সালাম বলেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে হলে শিক্ষার নতুন কারিকুলামে আমাদের ঢুকতে হবে। আমরা চাই এমন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা যা মন ও হৃদয়কে আলোকিত করে। আলোহীন শিক্ষা অন্তঃসারশূন্য। আমার বিশ্বাস মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে আজকের শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সংকট ও ত্রুটিগুলো সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন। তিনি ইতঃপূর্বে শিক্ষা উপমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্বগুলো দক্ষতার সাথে পালন করায় তিনি এখন একই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ায় চট্টগ্রামবাসী হিসেবে আমরা গর্বিত।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, অতীতে আমাদের লক্ষ্য ছিল শিক্ষিতের হার বৃদ্ধি করা। আমরা ৭শতাংশ থেকে শিক্ষিতের হার ৭০ শতাংশে উন্নীত করতে পেরেছি। এই সফলতা রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের। এখন আমাদের একমাত্র লক্ষ্য শিক্ষার মানোন্নয়ন করে তাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করা। এই লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষা কারিকুলামে পরিবর্তন আনায়নের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। এখন আমরা দক্ষ, প্রযুক্তি ও জ্ঞান নির্ভর মানবসম্পদ সৃষ্টিতে একসঙ্গে কাজ করে যেতে পারবো। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনের অশান্তি সৃষ্টির কারণগুলো অরাজনৈতিক বলে মন্তব্য করে বলেন, এই অশান্তির কারণ ব্যক্তি স্বার্থ ও অনৈতিক কাজে অংশীদারিত্ব ও আধিপত্য বিস্তারের জন্যই। আমরা যারা রাজনৈতিক নেতৃত্বে আছি অবশ্যই শিক্ষাঙ্গনে অশান্তি ও কলহ-বিবাদ দূর করে সমাধান দিতে আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ যে চট্টগ্রামের একজন কৃতি সন্তানকে একজন যোগ্য ও উপযুক্ত মানুষ হিসেবে শিক্ষামন্ত্রীর মত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করেছেন। শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন করতে গিয়ে যে চ্যালেঞ্জগুলো সামনে আসবে তা মোকাবেলায় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তাঁর মরহুম পিতা চট্টলবীর জননেতা এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মত সাহসী ভূমিকা রাখবেন বলে আশা আশা রাখি।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, উত্তর জেলার সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ.টি.এম পেয়ারুল ইসলাম প্রমুখ।