অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে উপাচার্যদের কঠোর বার্তা

  • ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠক

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠক

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে কঠোর বার্তা দিয়েছে সরকার। ভিসিদের অবস্থানের অপব্যবহার করলে তাদের প্রয়োজন নেই বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি সংক্রান্ত বৈঠকে বসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞাপন

কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ নানা অভিযোগ উত্থাপন, ইউজিসি থেকে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা এবং এর রেশ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উদ্ভূত পরিস্থিতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠকে গুরুত্ব পায়। সভায় ভিসিরা শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে দাবি দাওয়া তুলে ধরেন।

সভা সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে ইউজিসির কর্মকর্তাদের কিমিটিতে রাখার প্রতিবাদ জানান ভিসিরা। তারা শিক্ষকদের এসব কমিটিতে দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান। তারা অভিযোগ করেন, ইউজিসির কর্মকর্তাদের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। অনেক সময় ভিসিদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেন বলে অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভিসিদের অপরাধ পেলে ব্যবস্থা নেবে সরকার, কিন্তু ইউজিসির অফিসাররা সেখানে অসদাচরণ করতে পারেন না।


এ সময় শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কামালউদ্দিন আহমদ দাবি করেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে খবর আসলে বিশেষ করে বিপক্ষে খবর আসলে সেই সাংবাদিকের ব্যাকগ্রাউন্ড কি সেটি জানতে হবে। দেখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা আছে কিনা।

বিজ্ঞাপন

জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, কোনো কোনো ভিসি তার অবস্থানের অপব্যবহার করছেন, অসদাচরণ করছেন। ভিসিদের নিয়ে আমরা এতক্ষণ যা শুনলাম তার সবই কি পত্রিকার তৈরি? কেউ কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা ধ্বংসের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। ভিসিরা অনেক সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু আইন মেনে না চললে এমন ভিসির দরকার নেই।

ভিসিদের আলোচনা পর্ব শুরু হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদের বক্তৃতার মধ্য দিয়ে। ভিসিদের মধ্যে সবশেষে বক্তৃতা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর। ভিসিদের সঙ্গে আয়োজিত বৈঠকটি শুরুর ২ ঘণ্টা পর মুলতবি করা হয়। পরে আবার ভিসিদের নিয়ে বসার কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী।

বৈঠকের সমাপনী বক্তা ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইউজিসির তৈরি অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির ভিসির বক্তৃতার রেশ ধরে দীপু মনি বলেন, ভিসিদের নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। অনেক ভালো ভালো কথা হয়েছে। এই একজন বললেন যে ভিসি হিসেবে তিনি লজ্জা পান। ভিসিদের নিয়ে যেসব অপ্রীতিকর কথা হয়েছে সেসব কি পত্রিকার তৈরি?

তিনি বলেন, ভিসিদের অনেকে নিজের পদের অপব্যবহার ও অসদাচরণ করছেন। তারা পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চশিক্ষাকে ধ্বংস করার পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। নিয়োগ সহজীকরণের কথা আসছে। কিন্তু যাদের কারণে উচ্চশিক্ষা ধ্বংসের পর্যায়ে গেলো ভবিষ্যতে তাদের মতো কেউ ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাবেন না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে?

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ (নিয়োগে) চাপ প্রয়োগের কথা বলেছেন। কারা চাপ দেয় তাদের আমরা চিনি। চাপ বন্ধ করার জন্য কী করতে হয় তা আমরা জানি। আপনারা চিন্তা করবেন না। স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা,মান-সম্মান, নিয়ম-কানুন ও আইনের মধ্যে থেকে কাজ করলে ২০০ শতাংশ সহায়তা পাবেন। যদি আইন মানা না হয় তাহলে আমরা বলবো স্যরি, রিয়ালি সরি টু সে।

তিনি আরও বলেন, ভিসিদের কেউ যদি ভাবেন যে, আমি আমার মতো কাজ করবো, আমি রাজা; তাহলে সহযোগিতা দূরে থাক তাদের থাক বলবো, সরি। আর আইনের মধ্যে থাকলে আপনাদের সঙ্গে আমরা ষোল আনা আছি।

সভায় উপস্থিত একাধিক ভিসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ঘটনা তদন্তে ইউজিসির কর্মকর্তাদের সদস্য করে কমিটি গঠন করা হয়, তারা সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার করে। আমরা সে বিষয়টি আজকের সভায় তুলে ধরেছি। আর কয়েকজন ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ যোগ দেন।