অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালায় উপাচার্য-শিক্ষকদের আপত্তি

  • ইসমাঈল হোসাইল রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃৃহীত

ছবি: সংগৃৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে প্রস্তাবিত অভিন্ন নীতিমালার বিষয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়েছেন কয়েকজন উপাচার্য ও শিক্ষক প্রতিনিধিরা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এ সিদ্ধান্তকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে বাস্তবায়ন না করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

তারা বলছেন, ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের জন্য যে অভিন্ন নীতিমালা করতে চাইছে, তা শিক্ষকদের শিকল দিয়ে বেঁধে দেওয়ার শামিল। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই অগ্রহণযোগ্য এ নীতিমালা সামনে আনা হয়েছে বলেও দাবি তাদের।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়েও শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি সংক্রান্ত বৈঠক হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিকালে শিক্ষকদের বৈঠক হয়। শিক্ষকরা প্রস্তাবিত অভিন্ন নীতিমালার বিষয়ে প্রবল আপত্তি তুলে ধরেন। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে শিক্ষকরা এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষকদের আপত্তির মুখে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, 'অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা হলো ন্যূনতম মানদণ্ড। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এর চেয়ে ভালো নীতিমালা করতে পারে, কিন্তু এ মানদণ্ডের নিচে নামা যাবে না।'

তিনি বলেন, 'আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রয়োজনে এ নীতিমালা বাস্তবায়নে আমরা আরও সময় নেব। দরকার হলে আরও দুই বছর সময় নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী নীতিমালা সাজিয়ে নেওয়া যায়।'

এ বিষয়ে আগামী নভেম্বরে ফের বৈঠক হতে পারে বলে উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী। তার আগে প্রকাশিত খসড়া নীতিমালায় কোথায় আপত্তি এবং কী করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া উন্নত হবে তার কৌশল বের করতে শিক্ষকদের ওপরই দায়িত্ব দিয়েছেন মন্ত্রী।

সন্ধ্যায় ভিসিদের আলোচনা পর্ব শুরু হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদের বক্তৃতার মধ্য দিয়ে। ভিসিদের মধ্যে শেষ বক্তৃতা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর। ভিসিদের সঙ্গে আয়োজিত বৈঠকটি শুরুর দুই ঘণ্টা পর মুলতবি করা হয়। পরে আবার ভিসিদের নিয়ে বসার কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী।

সভায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ভিসি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে সে তুলনায় কাজ বাস্তবায়ন করার মতো পরিবেশ তৈরি করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় অনেক দূর এগিয়ে যেত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলররা শুধু মার খেতে জানে। ভিসিদের অবস্থানের দিকে একটু লক্ষ্য রাখা উচিৎ।'

তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ নেই। যেভাবে সেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হয়, ফলে সেখানে সুষ্ঠু পরিবেশে শিক্ষা দেওয়া যাচ্ছে না। ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন দাবি নিয়ে আসেন। তাই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে দেওয়া হলে আমরা যথাযথ শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারব।'

সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, 'শিক্ষক নিয়োগে প্রস্তাবিত সমন্বিত পদ্ধতি সঠিক হবে না। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ১২ বছরের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি, নিয়োগের পর চার বছর সহকারী অধ্যাপক হিসেবে থাকতে হবে। শিক্ষক তো অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড কোনো জায়গা থেকে আনতে পারব না।'

বাইরে থেকে শিক্ষক আনতে আইন আছে জানালে তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবার শিক্ষক নিয়োগের জন্য ইউজিসিতে যেতে হবে না।' ইউজিসির এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনার আপত্তি জানান তিনি।

জবাবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, 'শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি সেট ক্রাইটেরিয়া রাখতে হবে। এটাতে সর্বনিম্ন যোগ্যতা বলে দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি এর চেয়ে বেশি রাখতে চান, সেটা রাখতে পারবেন। কেউ কেউ নির্দেশনার (নীতিমালা) বিষয়ে কথা বলেছেন। সেটা বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন হলে ইউজিসির কাছে যাবেন, সমস্যা তো নেই।'

তিনি বলেন, 'বিদেশে আমাদের অনেক মেধাবী সন্তান আছেন। তাদের দেশে আনার ব্যবস্থার কথাও আমরা বলেছি। সেক্ষেত্রে ইউজিসি আছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু এই বিষয়ে আপত্তি দিয়ে দেরি হবে, সমস্যা হবে ইত্যাদি কথা বলে সহজ করে দেওয়ার কথা আসছে। কিন্তু এটা করে দিলে যে এর অ্যাবিউস (অপব্যবহার) করা হবে না সেই নিশ্চয়তা কে দেবে?'

ভিসিদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'আপনাদের কাজ আমাদের চেয়ে একেবারে ভিন্ন নয়। আমরাও একই কাজ করি। আপনারা বুঝদার নন, তা নয়। ইউজিসিতে যারা আছেন, তারাও আপনাদের মতো মানুষ। দুদিন পর ওখানে আপনাদের মধ্য থেকেই কেউ আসবেন। অনুরোধ থাকবে কথা বলার আগে সেটা বুঝে নেবেন। শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমের সঙ্গে সাবধানে কথা বলবেন। সার্বিকভাবে উচ্চশিক্ষা এগিয়ে নিতে আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই।'

সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ যোগ দেন।