বরিশালে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ!

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, বরিশাল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভাগীয় শহর বরিশাল ৫ (সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলা) আসনসহ পাঁচটি সংসদীয় আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। এসব প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তারা বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় জেলার একটি আসন ব্যতিত বাকি পাঁচটি আসনে এখন নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ।

বরিশালের ছয়টি আসনে সর্বমোট বিভিন্ন দলের ৫৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে আওয়ামী লীগ মনোনীত এক প্রার্থীসহ ১০ জনের মনোনয়নপত্র প্রাথমিকভাবে বাতিল ঘোষণা করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। ফলে এখন মাঠে থাকা ৪৫ জন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে হেভিওয়েটের সাতজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এরমধ্যে ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী বরিশাল-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য বিদায়ী সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং স্বেচ্ছাসেবী এসআর সমাজ কল্যান সংস্থার চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. সালাহউদ্দিন রিপন। নিজ দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। যার প্রমাণও মিলতে শুরু করেছে।

ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গির হোসেন নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছেন। যে কারণে তাকে দলীয় পদ থেকে বহিঃস্কারের দাবিতে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। একইসাথে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইতোমধ্যে বরিশাল-৪ আসনে একাধিক সংঘাতের ঘটনাও ঘটেছে। নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পর শাম্মি আহমেদের কতিপয় সমর্থকরা বর্তমান সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে তালাবদ্ধ করে দেওয়াসহ এমপির সমর্থক নেতাকর্মীদের মারধর করেছে। এমনকি পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারীরাও শাম্মি আহমেদের লোকজনকে মারধর করেছে। সর্বশেষ মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করার পর কাজিরহাট থানা এলাকায় শাম্মি আহমেদের অনুসারীরা গত ৫ ডিসেম্বর শো-ডাউন করে পঙ্কজ সমর্থকদের বিভিন্নধরনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সবমিলিয়ে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘিরে দলে বড় ধরনের বিভক্তি দেখা দিতে শুরু করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। কারণ ওই আসনে তিনি একমাত্র দলীয় প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন এবং তিনিই মনোনয়ন পেয়েছেন। সেখানে দলীয় কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকলেও নামেমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত ছেরনিয়াবাত সেকান্দার আলী এবং গৌরনদী উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীরের বড়ভাইয়ের ছেলে মো. তুহিন হয়েছেন এনপিপি মনোনীত প্রার্থী।

বরিশাল-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস। দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সাংসদ মনিরুল ইসলাম মনি ও শের-ই বাংলার দৌহিত্র একে ফাইয়াজুল হক।

বরিশাল-৩ আসনের নৌকা মার্কার প্রার্থী সরদার মো. খালেদ হোসেন স্বপনের সাথে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান।

বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. শাম্মি আহমেদ দুই দেশের নাগরিক হওয়ায় তার প্রার্থীতা প্রাথমিকভাবে বাতিল করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে তিনি বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। এর বাহিরে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন হেভিওয়েটের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ।

বরিশাল-৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ মল্লিকের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী করার জন্য দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি খান আলতাফ হোসেন ভুলু এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল আলম চুন্নু। এরমধ্যে ঋণ খেলাপীর দায়ে শামসুল আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করার পর তিনি আবার আপিল করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে হলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বরিশাল-২ ও ৩ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও ওই দুই আসনে তার দলের আরো দুইজন প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া মেনন ঢাকার একটি আসনেও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। পাশাপাশি বরিশাল-৩ ও ৬ আসনে জাতীয় পার্টির হেভিওয়েটের দুইজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বর্তমানে ওই দুই আসনের সাংসদ এবারও প্রার্থী হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত মহাজোটের আসন ভাগাভাগি হলে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় সে পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।

সার্বিক বিষয়ে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে। নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সমালোচনামূলক কথা বলতেও নিষেধ করেছেন। এটা থেকেই তো পরিস্কার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নৌকার বিরুদ্ধে যাওয়া যাবেনা।

তিনি বলেন, রাজনীতির মাঠে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকে শতভাগ গ্রহণযোগ্য করার একটি কৌশল হচ্ছে ডামি প্রার্থী করা। ভোটের মাঠের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত আসবে। সেইসব সিদ্ধান্ত দলের সবাইকে মেনে নিতে হবে। তাই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও বিভক্তিসহ কাঁদা ছোড়াছুড়ি না করার জন্য তিনি (বলরাম পোদ্দার) দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের কাছে আহবান করেছেন।

উল্লেখ্য, ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন আগামী ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। ওইদিন থেকেই প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করতে পারবেন। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ হবে ৫ জানুয়ারি সকালে এবং ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। এবার তিনশ’ আসনেই ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে।

সাদিকের প্রার্থীতা বাতিলের দাবিতে আপিল : বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়নপত্র বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম। বুধবার জাহিদ ফারুকের পক্ষে তার মনোনয়নপত্রের সমর্থনকারী কেবিএস আহমেদ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) এ আপিল করেছেন।

বরিশাল ৫ আসনের নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম বার্তা২৪.কমকে বলেন, হলফনামায় অসত্য তথ্য দেওয়ার পরেও রিটার্নিং অফিসার স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন। আমরা বিষয়টি তখন নজর এনেছিলাম। সেখানে বিষয়টি আমলে নেয়নি রিটার্নিং কর্মকর্তা। এজন্য ইসিতে আপিল করা হয়েছে। আশা করছি নির্বাচন কমিশন আপিল শুনানি করে সঠিক রায় ঘোষণা করবেন।