আওয়ামী লীগ-জাপার বৈঠক নিয়ে লুকোচুরি 

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে বৈঠক নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। বৈঠকের স্থান, সময় ও বিষয়বস্তু নিয়ে দুই পক্ষ থেকেই কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে।

গুঞ্জন ছড়েছে একাধিক বৈঠকের বিষয়ে। একাধিক সুত্র দাবি করেছে মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) গণভবনে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আর বুধবার (৬ নভেম্বর) গুলশানে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের বাসায় সিনিয়র নেতাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জাতীয় পার্টির পক্ষে নেতৃত্ব দেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি। আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ছিলেন বলে কোনো কোনো সোর্স দাবী করেছে।

বিজ্ঞাপন

ওই বৈঠকের পরও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বাসায় বসেছিলেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও ৪ কো-চেয়ারম্যান। সেখানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে বলে একটি সুত্র জানিয়েছে।

তবে এসব বৈঠক এবং আলোচ্য বিষয় নিয়ে জাতীয় পার্টি একেবারেই নিশ্চুপ। কোনো নেতাই মুখ খুলতে নারাজ, তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা এসব বৈঠকের বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির বৈঠকের বিষয়টি আলোচনায় আসে গতকাল ৫ ডিসেম্বর।

ওইদিন ১৪ দলীয় জোটের দুই শরীকের সঙ্গে বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ১৪ দলের শরিকদের আসন ভাগাভাগির বিষয়টি জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারিত হবে। তিনি বুধবার জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনার আভাস দিয়েছিলেন। 

বুধবার দুপুরে বৈঠকের কথা স্বীকার করলেও আসন ভাগাভাগির কথা অস্বীকার করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেছিলেন বৈঠক হবে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ৫ ডিসেম্বর আমির হোসেন আমুর দেওয়া বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোন পরিকল্পনা নেই তাদের। বিগত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আসন সমঝোতা ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে। ওই নির্বাচনের পরিবেশ ও আসন সমঝোতা নিয়ে মিশ্র মতামত রয়েছে দলের মধ্যে।

আসন সমঝোতার গুঞ্জন প্রসঙ্গে গত ১৮ নভেম্বর জাতীয় পার্টির মহাসচিব বার্তা২৪.কমকে বলেছিলেন, বিষয়টি পুরোপুরি সত্য না আবার মিথ্যাও না। এই মুহুর্তে এরচেয়ে বেশি মন্তব্য করতে পারছি না। 

সুত্র জানিয়েছে, জাতীয় পার্টি ৬০টি আসন চায় আওয়ামী লীগের কাছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩৫ থেকে ৪০টির মতো আসনের বিষয়ে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টি আসন সংখ্যার পাশাপাশি শীর্ষ নেতাদের আসনও চুড়ান্ত করতে চায় আগে ভাগেই।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কো-চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির ডোনার খ্যাত যমুনা গ্রুপের কর্ণধার সালমা ইসলাম এমপি ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপির আসন নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।

নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে নির্বাচনে আসা জাতীয় পার্টি ২৯৪ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেন। দলীয় টিকেট পেলেও ৬ জন প্রার্থী শেষ পর‌্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। ছেলে সাদ এরশাদের আসন নিয়ে টান দেওয়া এবং অনুসারীদের মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়ায় ২৯ নভেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান রওশন এরশাদ। 

দলীয় কোন্দলের পাশাপাশি সরকারের উপর আস্থার সংকটে ভুগছে জাতীয় পার্টি। দলটির নেতারা মনে করেন ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ কোন নির্বাচনেই প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেনি আওয়ামী লীগ। নানাভাবে তাদের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে। উপনির্বাচন, উপজেলা পরিষদ থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত কোথাও ছাড় দেওয়া হয়নি। অতীতে অনেক নির্বাচনে জাপার প্রার্থীদের জোর করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এবারের প্রতিশ্রুতি কতটা রক্ষা করবে সে সম্পর্কে তাদের মনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যে কারণে জাতীয় পার্টি আগেভাগেই নিশ্চিত হয়ে তারপর সিদ্ধান্ত দিতে চায়। তারা এমন কোনো মাধ্যমে নিশ্চিত হতে চান যাতে, আওয়ামী লীগ আর প্রতিশ্রুতি ভাঙতে না পারে।

অন্যদিকে জিএম কাদেরকেও সরকার পুরোপুরি আস্থায় নিতে পারছে না বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।