বারী সিদ্দিকী ছাড়া চার বছর
আমি একটা জিন্দা লাশ, শুয়া চান পাখি, আমার গায়ে যত দুঃখ সয়, পুবালি বাতাসে, তুমি থাকো কারাগারে, রজনী, ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া, মানুষ ধরো মানুষ ভজো- প্রভৃতি গানের জন্য তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও বংশী বাদক বারী সিদ্দিকী।
গানে গানে বিরহের কথা বলে গেছেন তিনি। একস্বপ্নীল সুরের মায়ায় আবিষ্ট করে রেখেছেন লাখো দর্শক-শ্রোতাকে বছরের পর বছর। আজ তার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বারী সিদ্দিকী স্বশরীরে না থাকলেও তার রেখে যাওয়া মায়া জড়ানো গানে দর্শকদের মাঝে অমর হয়ে আছেন।
বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনায় এক সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাবা প্রয়াত মহরম আলী ও মা প্রয়াত জহুর-উন-নিসা। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে বারী সিদ্দিকীই ছিলেন সবার ছোট।
বারী সিদ্দিকীর পুরো নাম আবদুল বারী সিদ্দিকী। শৈশবে পরিবারের কাছে গান শেখার হাতেখড়ি। মাত্র ১২ বছর বয়সেই নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তাঁর আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণিশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন।
ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সময় বারি সিদ্দিকীকে দেখে তাঁকে আরো প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রস্তাব দেন। এরপর, ছয় বছর ওস্তাদ আমিনুর রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হন বারী। এরপর, ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ধ্রুপদী সংগীতে পড়াশোনা শুরু করেন বারী সিদ্দিকী। পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে উঠায় তিনি বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসংগীতের প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে লোকগীতির সাথে ধ্রুপদী সংগীতের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন।
নব্বইয়ের দশকে কথাসাহিত্যিক ও চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে বারী সিদ্দিকীর পরিচয়। হুমায়ূনের নাটক-সিনেমায় গান করায় বারীর পরিচয় আরো ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নেন তিনি।
১৯৯৫ সালে হুমায়ূন আহমেদের ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন বারী সিদ্দিকী। এরপর, ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে সাতটি গানে কণ্ঠ দেন তিনি। এর মধ্যে ‘শুয়া চান পাখি’ গানটির জন্য তাঁর পরিচয় ও শ্রোতাপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। তারপর, আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
১৯৯৯ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন। তিনি প্রবাস প্রজন্ম জাপান সম্মাননা (২০১৪), সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস পেয়েছেন।