তাঁকে কখনো বিদায় বলতে পারবো?
দশকের পর দশক ধরে আসমুদ্রহিমাচল মোহিত থেকেছে তার জাদুমাখা কণ্ঠে। তিনি ভারতের ‘নাইটএঙ্গেল’, ‘সুরের সরস্বতী’, আর সরস্বতী বন্দনায় যখন ব্রতী ভারত, সেই সময়ই না ফেরার দেশে চলে গেলেন লতা মঙ্গেশকর।
জানুয়ারির শুরুতেই করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে লতার। তারপর গত ৯ জানুয়ারি মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। করোনা কাটিয়ে উঠলেও ৯২ বছর বয়সে কোভিড পরবর্তী অসুস্থতার ধাক্কা সামলাতে পারলেন না এই কিংবদন্তি।
সুরসম্রাজ্ঞীর প্রয়াণের খবরে শোক নেমে এসেছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে।
সংগীতাঙ্গন থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র ও রাজনৈতিক অঙ্গনের সকলেই সুরসম্রাজ্ঞীর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন। সে তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কনক চাঁপা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কনক চাঁপা লিখেছেন, “আজ আমরা যারা সঙ্গীত অনুরাগী তাদের খুবই বেদনার দিন। আজ গানের সূর্য লতা মুঙ্গেশকর আমাদের ছেড়ে অন্যভুবনে যাত্রা করেছেন! কিন্তু তাঁকে কখনো বিদায় বলতে পারবো? তাঁর বিদায় হয় কখনো? তিনি ছিলেন, আছেন, থাকবেন।”
যোগ করে তিনি লিখেছেন, “যেহেতু তিনি রক্তমাংসের মানুষ সেহেতু তিরোধান তাঁর হবেই। অনেক দিন অসুস্থ ছিলেন। চলে যাওয়ার ভয়টাই পাচ্ছিলাম কিছুদিন হলো। গতকাল রাতেও এই ভয় নিয়ে ঘুমিয়েছি।কারণ গতকাল লাইফ সাপোর্ট এ চলে গেছেন পড়লাম! আর ঘুম ভাঙ্গতেই এই দুঃসংবাদ!”
“একজন লতা মঙ্গেশকর এই পৃথিবীতে আগে পরে একজনই। তিনি অবিচল হিমালয়ের মতো সুউচ্চ, এর চেয়ে আর উঁচু নাই। পৃথিবীর প্রতিটি কোনায় কোনায় প্রতিটি সেকেন্ডে তাঁর গান বেজেই চলে। সে গান তীরের মতো গতিসম্পন্ন, মাখনের মতো মোলায়েম আরামদায়ক ফারেনহাইট এ সেট করা অনবদ্য একটি শান্তি মাখা অনুভব! দূর পাহাড়ের কোন গাঁয় যখন তাঁর গানের একটি হামিং বেজে ওঠে তখনও বোঝা যায় এটা তাঁর কণ্ঠ।প্রথম বয়সে তার মেশিনের মতো যত বিস্ময়কর, মধ্যবয়সে তা পারিজাতের সুবাস ছড়িয়ে শেষ বয়সে পরিনত কণ্ঠ যেন আরও সুন্দর হয়ে উঠলো! অপার্থিব!”
“বিস্ময়কর ভাবেই আমার একটি অনুভব যে ওনাকে আমার মানুষই মনে হয়নি কখনো! সবাই বলতেন সুরের দেবী,আমার কাছে মনে হতো সুরের সূর্য, একটাই,অবিচল, একদিন না উঠলে গানের আকাশ আঁধার হয়ে যেতো, যায়,যাবে! জীবনে কখনো তাঁকে চাক্ষুষ করিনি। অতবড় সৌভাগ্য নিয়ে জন্মাইনি কিন্তু তাতে কোন দুঃখ নেই। তাঁর গান আমার মর্মে গাঁথা। কখনো কোন দ্বীপান্তর হলে সাথে শুধুই লতা মঙ্গেশকর হলেই দিন চলে যাবে এমনই অনুভব ভাবনার রন্ধ্রে এসে জমাট হয়! তাঁর গানে মজে কতগুলো প্রজন্ম বড় হলো বুড়ো হলো তার হিসাব গবেষণার বিষয়। কেউ হয়তো বলবেন তিনি গানের জগতের সম্পদ বা নক্ষত্র! আমি খুব জোরেশোরে দ্বিমত করে বলি তিনি গানের জগতের সম্পদ নন, তিনি নিজেই সম্পুর্ন বলয় সাদৃশ্য "গানের জগৎ" যেখানে কোন কিছুরই অভাব নেই।”
“একটা সাদা শাড়ি পরে দুইবেনী করে প্রসাধন বিহীন মঞ্চে যখন দাঁড়িয়ে লিরিক স্ট্যান্ড এ চোখ রেখে দাঁড়িয়ে নিশ্চল গাইতেন তখন ভাবতাম কোথা থেকে এমন কণ্ঠ ভেসে আসে আর একই সাথে যেসব শিল্পী মঞ্চে নড়াচড়া করেন তাদের বড়ই দরিদ্র মনে হতো। যেহেতু তাঁকে দেখিনি তাই মনে করতাম কোন না কোনভাবে তাঁর নিঃশ্বাস আমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়,আজ থেকে সেই ভাবনা বন্ধ! সত্যিই আমার দম আটকে আসছে। স্রষ্টা সবকিছুর বিনিময়ে ওনাকে শান্তিতে রাখুন। ওপারে ভালো থাকবেন আমাদের গানের সূর্য।”