নতজানু হয়েও কোন পক্ষের সমর্থন পেলেন না জোভান

  • মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভিডিও বার্তায় জোভান ও ‘রূপান্তর’ নাটকের দৃশ্য

ভিডিও বার্তায় জোভান ও ‘রূপান্তর’ নাটকের দৃশ্য

ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা ফারহান আহমেদ জোভান পড়েছেন দারুণ ঝামেলায়। তার একটি নাটককে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একপক্ষের সমালোচনায় অবশেষে নতজানু হয়ে ভিডিও বার্তা দিলেন তিনি। তাতেও সেই পক্ষের মন গলাতে পারলেন না। উল্টো তারা জোভানের বাকী নাটকগুলোকেও বয়কটের সুর তুলছে!

ঝামেলা এখানেই শেষ নয়। জোভান নতজানু হয়ে দুঃখ প্রকাশ করায় আরেকপক্ষ তাকে দারুণভাবে করছেন সমালোচনা। এই পক্ষে আবার রয়েছেন তারই সহকর্মীরা। তারা জোভানের সাহস ও শিনদাঁড়ার শক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বিজ্ঞাপন

ঘটনার সূত্রপাত গেল ঈদুল ফিতরে প্রচারিত জোভানের নাটক ‘রূপান্তর’ নিয়ে। রাফাত মজুমদার রিংকু পরিচালিত এই নাটক প্রচারের পরই এটি নিয়ে অন্তর্জালে ফুঁসে ওঠে একাংশ দর্শক। নিরুপায় হয়ে নাটকটি ইউটিউব থেকেও নামিয়ে ফেলা হয়।

 ‘রূপান্তর’ নাটকের দৃশ্যে সামিরা খান মাহি ও জোভান

কিন্তু রেহাই মেলেনি তাতেও। অগত্যা অভিনেতা জোভান নিজেই গা ঢাকা দেন, বন্ধ করে রাখেন নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেল। অবশেষে আজ ১৯ এপ্রিল ভোর রাতে দেখা দিয়েছেন তিনি। একটি ভিডিও বার্তা নিয়ে হাজির হলেন। যেখানে আকুতিভরা কণ্ঠে ক্ষমা চেয়েছেন দর্শকের কাছে।

আতঙ্ক আর অসহায়ত্বে ভরা চাহনিতে জোভান বলেন, ‘এই ঈদে আমার বেশ কিছু নাটক এসেছে। প্রথম দিন থেকেই ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। এই ঈদটা আমার খুব সুন্দর ঈদ হতে পারতো আপনাদের ভালোবাসায়, সাপোর্টে। কিন্তু সেটা হয়নি। একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ে আপনারা যেমন কষ্ট পেয়েছেন, আমিও কষ্ট পাচ্ছি। আমি কিন্তু একদমই ভালো নেই।’

বিজ্ঞাপন

‘রূপান্তর’ নাটকের প্রসঙ্গে জোভানের জবাবদিহি এরকম, “রূপান্তর’ নাটককে ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা একদমই অপ্রত্যাশিত। এই নাটকের মাধ্যমে কারও ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করার উদ্দেশ্য আমাদের ছিল না। আমি নিজেও একটা মুসলিম পরিবারের ছেলে। আমি জানি, ধর্মকে কতটা বিশ্বাস করি, আল্লাহকে শ্রদ্ধা করি। এই নাটকের মাধ্যমে আমরা কোনও কিছুকে নরমালাইজ করা বা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করিনি। কেবল একটি চরিত্র উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেটার মাধ্যমে এতগুলো মানুষকে কষ্ট দিয়েছি, এর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সবার কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।”

ফারহান আহমেদ জোভান

সবশেষে অনুরোধের সুরে জোভান বলেছেন, ‘দীর্ঘ এগারো বছর যাবত নাটক করছি। আজকে আমার যে অবস্থান, এর পেছনে আমার একার নয়, অবশ্যই দর্শকের ভালোবাসা ও সাপোর্ট ছিল। আমার কাজ করার মূল উদ্দেশ্য হলো দর্শককে একটু বিনোদন দেওয়া, সেজন্যই এত কষ্ট। এরপর থেকে আরেকটু বেশি সচেতন থাকবো চরিত্র বাছাই করতে। যাতে তাদের মনঃক্ষুণ্ণ না হয়, কষ্ট না পায়। আমার যে কাজগুলো আপনাদের ভালো লেগেছে, তার চেয়েও ভালো কাজ উপহার দেবো। শুধু একটাই অনুরোধ, আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না। আমার জন্য দোয়া করবেন।’

যদিও জোভানের ভিডিও বার্তার কমেন্ট বক্স দেখলে আঁচ করা যায়, তার এই আর্তনাদ গলাতে পারছে না নেটিজেনদের মন। গণহারে তার নাটক বয়কটের ঘোষণা দিচ্ছে তারা। বিপরীতে অনেকেই জোভানের এই পরাজিত কণ্ঠ ও মুখ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বলছেন, প্রকৃত শিল্পী কখনোই এতোটা নতজানু হয় না।

উল্লেখ্য, নীহার আহমেদের চিত্রনাট্যে ‘রূপান্তর’ নাটকটি নির্মিত হয়েছে। এর গল্পটি মূলত একজন তরুণ চিত্রশিল্পীকে ঘিরে। যিনি শৈশবে ট্রেন দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন পরিবারের সদস্যদের। যার ফলে তিনি জানতেই পারেননি তার বাবা-মা কে কিংবা কোন ধর্মের মানুষ। বড় হয়েছেন শিশু আশ্রমে। বড় হয়ে হয়েছেন চিত্রকর। পেয়েছেন খ্যাতিও। এর মধ্যে একজন ধনীর দুলালী তার আঁকায় মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পড়েন। বিয়ের জন্য পারিবারিকভাবে প্রস্তাব দেওয়া হয় চিত্রকরকে। কিন্তু তিনি সাফ জানিয়ে দেন, তাকে দিয়ে সেটা সম্ভব নয়। এরপর তার চিকিৎসকের মাধ্যমে জানা যায়, তিনি আসলে একটি হরমোন জনিত বিরল জটিলতায় ভুগছেন। তিনি দেখতে পুরুষের মতো হলেও মানসিকভাবে তিনি একজন নারী।

ফারহান আহমেদ জোভান

গত ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় ‘রূপান্তর’ নাটকটি উন্মুক্ত করা হয় ইউটিউবে। রাতে বেশ কিছু দর্শকের পক্ষ থেকে আপত্তি পেয়ে সেটি ১৬ এপ্রিল সকালে তুলেও নেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও রক্ষা হয়নি। একই নাটক ডাউনলোড করে অসংখ্য ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করছে সমালোচনাকারীদের একটা বড় অংশ। তারাই আবার এমন নাটক নির্মাণ ও প্রচারণার প্রতিবাদ করছেন! এমনকি নির্মাতা-শিল্পীদের হুমকিও দিচ্ছে অনেকে। যা নিয়ে আতঙ্কিত সংশ্লিষ্টরা।