বন্ধুত্ব থেকে বিয়ে, প্রেমের পর্ব ছিল না: সালহা নাদিয়া
ছোটপর্দার জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী সালহা খানম নাদিয়া গতকাল (২১ জুন শুক্রবার) বিয়ে করেছেন। পাত্র সালমান আরাফাতও একই পেশার মানুষ। এরইমধ্যে বিয়ের অনেক ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন এই নব দম্পতি। কখন কিভাবে বিয়েটা হলো এ নিয়ে প্রথমবার গণমাধ্যমের (বার্তা২৪.কম) সঙ্গে কথা বলেছেন নাদিয়া। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসিদ রণ
অভিনন্দন, নতুন জীবন শুরু করলেন...
ধন্যবাদ। আসলেই বিয়ের পর জীবনটা নতুন মনে হচ্ছে। এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি বিবাহিতা, যেন স্বপ্নের ঘোরে আছি। মাত্রই ঢাকায় ফিরলাম (আজ দুপুরে)। ক’টা দিন বলতে গেলে নির্ঘুম কেটেছে বিয়ের নানা আয়োজন নিয়ে। গায়ে হলুদ, সঙ্গীত, হলি খেলা- কিছুই বাদ দেইনি। তবে সবটাই হয়েছে ছোট্ট পরিসরে। এখন নিজের বাসায়, একটু আরাম করে ঘুমাবো।
সরাসরি নিজের বাড়িতে আসলেন, শ্বশুরবাড়িতে গেলেন না?
না, আসলে আমাদের তো কেবল আকদ হয়েছে। নিকাহ, গায়ে হলুদ ও সঙ্গীতের অনুষ্ঠানটি করেছি ঢাকার বাইরের একটি রিসোর্টে। আমার একটু ইচ্ছে ছিল ডেস্টিনেশন ওয়েডিং করার। কিন্তু পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়াটা মুশকিল বলে দেশের মধ্যেই ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের ফিলটা নিলাম। একেবারে দুই পরিবারের ক্লোজ আত্মীয়-স্বজনই ছিলেন অনুষ্ঠানে।
যেহেতু এখন কেবল নিকাহ পর্ব সম্পন্ন হয়েছে তাই এখনি আমি শ্বশুরবাড়িতে যাইনি। এখনও আমরা আগের মতোই যার যার বাসায় থাকছি। এরমধ্যে আসা-যাওয়া, ঘোরাঘুরি হবে। কিন্তু বছরের শেষ নাগাদ রিসেপশন অনুষ্ঠান করার পর একসঙ্গে থাকার জায়গার বন্দোবস্ত করব। ইচ্ছে আছে রিসেপশনে আমার সব আত্মীয়-স্বজন এবং শোবিজের বন্ধু বান্ধব, সহকর্মীদের আমন্ত্রণ জানাবো।
ঘোরাঘুরির কথা বলছিলেন। হানিমুন করতে কোথায় যাচ্ছেন?
এখন আসলে ভিসা করতে গেলে দেরী হয়ে যাবে। বিয়ে যেহেতু ছোট্ট পরিসরে হয়েছে তাই হানিমুনটাও সেভাবেই করতে চাই। বড় অনুষ্ঠান করার পর সবকিছু বড়ভাবে করবো। তাই এখন দেশের মধ্যেই হানিমুন করার পরিকল্পনা করেছি। সেক্ষেত্রে দুজন মিলে কক্সবাজার যাবো শিগগিরই। তাছাড়া কক্সবাজার আমর খুব প্রিয়, সালমানেরও। আমি এতোবার শুটিংয়ে কক্সবাজার গেছি, কিন্তু মন ভরে না, আরও যেতে ইচ্ছে করে। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমূদ্র সৈকত বলে কথা!
আপনি আর আপনার স্বামী তো বিজনেস পার্টনার। সেখান থেকেই কী বিয়ের দিকে গড়ালো সম্পর্ক?
না, বিজনেস পার্টনারতো অনেক পরের কথা। তার আগে থেকেই সে আমার কলিগ, এরপর ভালো বন্ধু হয়ে ওঠা এবং এক পর্যায়ে আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে দারুণ সখ্যতা গড়ে ওঠা- এভাবেই সম্পর্কটা এ পর্যন্ত গড়িয়েছে।
সহজ করে বলতে গেলে, আমরা দুজনই যেহেতু শোবিজের সঙ্গে জড়িত, ফলে সহশিল্পী হিসেবেই শুটিং সেটে সালমানের সঙ্গে প্রথম পরিচয়। এরপর আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব, তারপর বিজনেস পার্টনার, এরপর বিয়ে।
বন্ধুত্ব থেকে সরাসরি বিয়ে? মাঝে তাহলে প্রেমের অধ্যায় ছিল না বলছেন?
একদমই তাই বলছি। কারণ আমরা কখনো প্রেম করিনি। এ কথা হয়তো বললে কেউ বিশ্বাসই করবেন না, কিন্তু আসল সত্য এটাই। বলছিলাম না যে, আমাদের বন্ধুত্ব এতোটাই গাঢ় ছিল যে, একটা সময় দুই পরিবারের সবাই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। তার বাবা মার সঙ্গে আমার বাবা মাও কানেক্টেড হয়ে পড়েছিলেন।
আমাকে আসলে অনেক বছর ধরেই বিয়ের জন্য জোরাজুরি করছিলো পরিবার থেকে। কিন্তু আমি বিয়ে নিয়ে বরাবরই খুব সচেতন ছিলাম। কখনোই চাইতাম না, কারও চাপে পড়ে বা মোহে পড়ে বিয়ে করে কোন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে। কিন্তু সালমান আমার ভীষণ ভালো বন্ধু হওয়ায় আমাদের বিয়ের কথা যখন দুই পরিবার থেকে আসলো তখন আমার আছে এটা কমফোর্ট জোন মনে হয়েছে। আমার বাবা মা বলছিলেন, এতোদিন অনেক বাহানা করেছে, এবার তোমার মানসিকতার সঙ্গে মেলে এমন ছেলে পেয়েছি, তাদের পরিবারও খুব ভালো, তোমরা একে অপরের কেয়ার করো, এখানেই বিয়েটা করো। সালমানকেও তার বাবা মা একই কথাই বলেছেন হয়তো। পরবর্তীতে আমরা রাজী হয়ে যাই।
আপনি অনেক বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত একজন তারকা। আর আপনার স্বামী কেবল শোবিজে নিজের জায়গা তৈরী করার লড়াই করছেন। এ বিষয়টি কী কখনোই সম্পর্কের মধ্যে আসেনি?
আমি অভিনেত্রী বা মডেল, সেটি তো আমার পেশা। তার আগে তো আমি একজন মানুষ। তাছাড়া আমি নিজেকে কখনোই সেলিব্রেটি মনে করি না। আমি সাধারন একটি মেয়ে যে পরিবার নিয়ে থাকতে সবসময় পছন্দ করে। আমি কখনোই চাইনি আমার স্বামী বিলিয়নিয়ার হোক। মোটকথা টাকা পয়সার পেছনে আমি কখনোই ছুটিনি। নিজের স্বাধীনতা রেখে কাজ করেছি, অতোটুকুই উপার্জন করেছি যতোটুকু একটি সুন্দর জীবনের জন্য দরকার।
তাই সব সময় জীবনসঙ্গী হিসেবে একজন ভালো ও শিক্ষিত মানুষ চেয়েছি। আর চেয়েছি এমন একজনকে জীবনে পাশে চাই যার সঙ্গে বন্ধুর মতো চলতে পারবো, কোনকিছু বলতে গেলে ভাবতে হবে না যে সে কি ভাববে? কিংবা বিয়ের পর নিজেকে বদলে অন্য একটা মানুষ হয়ে যেতে হবে এমন পরিবারও আমি চাইনি।
সালমানকে এখন পর্যন্ত যতোটা দেখেছি তাতে তাকে আমার খুব ভালো মনের একজন মানুষ মনে হয়েছে। সে একজন শিক্ষত ছেলে, মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। শোবিজে হয়তো অল্পদিন কাজ করছে, কিন্তু এর আগে সে অন্য পেশায় দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে। এছাড়া ফরিদপুরে তাদের পারিবারিক ব্যবসায়ও সে সময় দিয়ে থাকে। তার পরিবারও ভীষণ আন্তরিক। আমার শ্বশুর শাশুড়ি খুব সংস্কৃতিমনা। তারা আমার কোন ভালো নাটক দেখলে ফোন করে জানান। আমরা একসঙ্গে ঈদে আমর নাটক দেখেছি। জীবনটা ছোট্ট, ছোট ছোট আনন্দ নিয়ে এভাবেই যাতে কেটে যায় সেটাই একমাত্র চাওয়া।