অভিনয়শিল্পী সংঘ থেকে পদত্যাগ করলেন মম
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনটি যখন শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাস থেকে সহিংসতার দিকে দেশজুড়ে গড়াচ্ছে (১৫ জুলাই), ঠিক তখনই ছোটপর্দার অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন ‘অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ’ একটি বিবৃতি পাঠায় গণমাধ্যমে।
যেখানে সকল শিল্পীর পক্ষ থেকে সংগঠনটি স্পষ্ট বিবৃতিতে বলেছে, ‘কোটা সংস্কারের যৌক্তিক আন্দোলন নিয়ে আমাদের কিংবা রাষ্ট্র কারো কোনও বিভেদ নেই। কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর যে কোনও যৌক্তিক রাজনৈতিক বা সামাজিক আন্দোলনের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। কিন্তু এই কোটা আন্দোলনকে ইস্যু করে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করছেন এবং রাজাকারদের প্রতিষ্ঠা করবার চেষ্টা করছেন, তাদের প্রতি তীব্র নিন্দা, ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মনে রাখতে হবে... তুমি কে? আমি কে? বাঙালি বাঙালি... এই শ্লোগান বাঙালি জাতির সবচেয়ে গর্বের শ্লোগান। জয় বাংলা।’
এই সংগঠনেরই একজন সদস্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম। তিনি আবার আন্দোলনে শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের পক্ষে সরব থেকেছেন। কিন্তু ছোটপর্দার অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন ‘অভিনয়শিল্পী সংঘ’ বর্তমান ইস্যুতে নীরব অবস্থানে রয়েছে। এ কারণে কমিটি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন এই অভিনেত্রী।
জাকিয়া বারী মম বর্তমান কমিটির কার্য নির্বাহী সদস্য। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে কমিটি থেকে নিজের অব্যাহতি নেওয়া প্রসঙ্গে জানান। মম লিখেছেন, ‘ইক্যুইটি মানে ন্যায়, ন্যায়বিচার। ন্যায়ের কথা বলে চলমান পরিস্থিতিতে ন্যায়ের সঙ্গে প্রকাশ্যে আপোষ মেনে নেওয়া ব্যক্তিগতভাবে আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। কারণ শিল্পী হিসেবে আমি আমার দায়বদ্ধতার জায়গায় দায়বদ্ধ। সেই দায়বদ্ধতা থেকে আমি ‘অভিনয়শিল্পী সংঘ’ থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করলাম।’
তিনি আরও লেখেন, ‘অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রাণের এই সংগঠন দেশ তথা জাতীয় বিষয়ে লোক দেখানো অভিনয় না করে বিবেক এবং চেতনা বোধ জাগ্রত করে মাথা সমুন্নত রেখে এগিয়ে যাক সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’
বলা দরকার, অভিনয়শিল্পীদের ‘স্বার্থ’ রক্ষার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে একটি অ্যাড-হক কমিটির মাধ্যমে যাত্রা করে অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে প্রথম আনুষ্ঠানিক নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে সংগঠনটি। ২০১৮ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারের নিবন্ধন পায় তারা। পেশা হিসেবে অভিনয়শিল্পের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, সমস্যাগ্রস্ত শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো, নাটক-সংশ্লিষ্ট অন্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, শিল্পীদের শুটিং-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে কাজ করা, বাংলাদেশে বিদেশি অভিনয়শিল্পীদের অভিনয় নীতিমালা, অভিনয়শিল্পী সংঘের নিজস্ব কার্যালয় ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, শুটিং সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নির্ধারণসহ নানা আশ্বাস দিয়ে শুরু হয়েছিল সংঘের কার্যক্রম।
এটাও বলা জরুরি, নাটক, সিনেমা, সংগীতের মানুষের দিয়ে দেশের অনেক সংগঠনের ভিড়ে অভিনয়শিল্পী সংঘ বরাবরই অন্য সংগঠনের বিচারে অ্যাকটিভ এবং কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। সেই সুবাদে গত ৩ মে রাজধানীর আফতাব নগরে সরকারের কাছ থেকে সাড়ে তিন কাঠা জমি পায় সংগঠনটি।