শোক দিবসে তবুও বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করলেন যে তারকারা
আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫-এ এই দিনের বর্বর ইতিহাসের কথা কারোর অজানা নয়। প্রতি বছর এই দিনে সরকারি ছুটি থাকলেও আজ তা নেই। কিন্তু শোক দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার শহীদ পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা ও স্মরণে কোন বাধা নেই। তাইতো দেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মতো শোবিজ তারকারাও তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কোন তারকা কি লিখেছেন জাতির পিতাকে নিয়ে, তা নিয়ে এই আয়োজন সাজিয়েছেন মাসিদ রণ
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শোবিজের যে তারকারা সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন তারমধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুণ ও অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। এই দুই তারকাকেও আজ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন।
আশফাক নিপুণ লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুই। তিনি থাকবেন। গত ১৫ বছরে স্বৈরশাসনের দমন পীড়নের হাতিয়ারে যেমন তাকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল, ঠিক তেমনি ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনেও "তোমার ১২টা বাইজে গেছে" স্লোগানেও তিনি ছিলেন। আওয়ামী সরকারের একক কুক্ষিগত করার চেষ্টায় বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে বিস্মৃত করার চেষ্টা ছিল, আজকে শোক প্রকাশে বাঁধা প্রদানে, সাংবাদিকদের ছবি তুলতে বাঁধা দেয়ায় উনি পুনরায় জ্যান্ত হয়ে উঠছেন। মনে রাখবেন ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার সাথে সাথে তিনিও স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত। বঙ্গবন্ধু এখন সবার। পতিত আওয়ামী স্বৈরশাসককে ঠেকাতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কোন অসম্মান যেন না হয়।’
অভিনেত্রী বাঁধন জাতির পিতার ছবিসহ বিনম্র শ্রদ্ধা লিখেছেন, যা দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। কিন্তু বাঁধন বঙ্গবন্ধুকে কোন দল মতে ভাগ করতে চান না। আমাদের দেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তিনি গভীরভাবে অনুধাবন করেন।
শেখ হাসিনার আমলে অভিনেত্রী কাজী নওশাবাকে গ্রেফতার করা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল তথ্য প্রচারের দায়ে। সম্প্রতি সেই সময়ের অন্ধকার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন অভিনেত্রী। সেই নওশাবাই যে আজ বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাবেন সেটা হয়তো অনেকে ভাবতেই পারেননি। কিন্তু এই অভিনেত্রী অন্যের ভুল বা দোষের দায় জাতির পিতাকে দিতে চাননি। তাইতো শিল্পী শাহাবুদ্দীন আহমেদের আঁকা বঙ্গবন্ধুর দুটি ছবি পোস্ট করে নওশাবা লিখেছেন, ‘বিনম্র শ্রদ্ধা, ভালবাসা আর কৃতজ্ঞতা!’ তার আগে আরেকটি স্ট্যাটাসে অভিনেত্রী লেখেন, ‘অগ্রজদের অবদান মননে রেখে অগ্রসর হই, নতুন সূর্যতে করি স্নান! এটাই হোক আমাদের সহমর্মী ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার মূল মন্ত্র।’
জনপ্রিয় অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা নিজের আঁকা একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘ধর্ষিতা মেয়ের বাবার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দাও শেখ মুজিবুর রহমান আর ঠিকানা ধানমণ্ডি বত্রিশ। বিনম্র শ্রদ্ধা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাকস্বাধীনতা সিরিজের আরেকটি ছবি আঁকলাম।’
ঢালিউডের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি লিখেছেন, ‘আপনি কোনো দলের না, আপনি এই জাতির সবার। আপনার ঋণ আমরা কোনোদিন ভুলবো না। বিনম্র শ্রদ্ধা হে জাতির জনক।
একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার লিখেছেন, ‘সবচেয়ে বিশাল ও ভারী যে লাশটি বাংলাদেশ নিজের বুকে বয়ে নিয়ে চলছে, সেটি শেখ মুজিবের লাশ- হুমায়ুন আজাদ।’
মেধাবী অভিনেত্রী তানজিকা আমিন লিখেছেন, ‘আজ ১৫ আগস্ট, এত দিন জাতীয় শোক দিবস হিসাবে যেই দিনটিকে জেনে এসেছি। আমাদের বাচ্চাগুলো যখন একটা ন্যায্য দাবি আদায় করতে গিয়ে অকাতরে প্রাণ দিচ্ছিল, তখন সকলের মত আমারও মনে হয়েছিল- স্বৈর শাসকের পতন জোরালোভাবে চাইতে হবে। ছাত্ররা লড়েছে, আমরা মনে প্রাণে সমর্থন করেছি। স্বৈরাচার পতন হয়েছে, বিপ্লব সফল হয়েছে। সেই উৎসব দেখতে শাহবাগ ছুটে গিয়েছি। অন্তত দুটো অচেনা পতাকা উড়াতে দেখে আর নজিরবিহীন লুটতরাজের নমুনা দেখে বিষন্ন মনে বাড়ি ফিরেছি। পৃথিবীতে কত কত বিপ্লব এভাবে বিফলে চলে গিয়েছে! ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু -জাতির এই অর্জনকে অন্তরে ধারণ করতে না পারলে জাতির নিজস্ব বলে আর কিই বা থাকবে? ৫২, ৬৯, ৭১, ৯০, ২৪- এই দীর্ঘ ইতিহাস বাদ দিয়ে কেবল ২৪-এর ইতিহাস মনে রাখতে চাইলে আমাদের আত্মপরিচয় কি প্রশ্নবিদ্ধ হয় না? বিনম্র শ্রদ্ধা বঙ্গবন্ধু।’
জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী বিজরী বরকতউল্লাহ সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কাব্য থেকে দুটি লাইন শেয়ার করেছেন, ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা, কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।’
প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস লিখেছেন, ‘ঠিকানা ৩২, শোক।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী শর্মিমালা লিখেছেন, ‘বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। কারো চাপে পড়ে নয়, কিছু প্রমান করবার আকাক্সক্ষা থেকে নয়, ভালোবাসা-সম্মান জানাই অনুধাবন থেকে। জোর করে যেমন সম্মান আদায় করা অন্যায়, তেমনি কেউ সম্মান করতে চাইলে তা কেড়ে নেওয়াও অন্যায়।’
জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী সানিয়া সুলতানা লিজা গীতিকার রবিউল ইসলাম জীবনের কবিতার একাংশ শেয়ার করেছেন, ‘এ কান্না এতটাই দীর্ঘ, বয়ে যাবে কাল থেকে মহাকাল, এ শোকে ব্যথিত আজও, মাঠের সবুজ থেকে সূর্যের লাল, ওরা কেড়ে নিয়েছে প্রাণ, তবু রয়ে গেছে সেই রক্তের দাগ- ওরে, বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ, কোনোদিনও হয় কি ভাগ? বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ, কখনও হবে না ভাগ।’
জনপ্রিয় গায়ক বেলাল খান প্রখ্যাত কবি আল মাহমুদের নিশিডাক কবিতার অংশ বিশেষ শেয়ার করেছেন, ‘তার আহবান ছিলো নিশিডাকের শিসতোলা তীব্র বাঁশীর মত। প্রতিটি মানুষের রক্তবাহী শিরায় কাঁপন দিয়ে তা বাজত...।’
ক্লোজআপ ওয়ান তারকা মুহিন খান একটি কবিতা লিখেছেন, ‘রক্তের শোকে কাঁদে মানুষ, পনের পঁচাত্তর, আগস্ট চব্বিশ যেন এক ভয়াল মৃত্যুকূপ... সাধারণ কেনো আজো এত- এমন পরাধীন, মানুষ কবে মানুষ হবে- দেখবো সুদিন, দলের চাইতে দেশ বড় হয়- সেটাই ভুলে যান, মনের মাঝে সবাই খোঁজে- দুঃখের অবসান... স্বাধীন দেশে আমরা এখনও- চিন্তায় মশগুল... বাংলাদেশে প্রশ্ন উত্তর- শুধু লাল সবুজ।’
অভিনেত্রী শানারেই দেবী শানু লিখেছেন, ‘বিনম্র শ্রদ্ধা। ইতিহাসের পাতায় বাঙালির চেতনায় চির অম্লান তুমি, বঙ্গবন্ধু।’
থিয়েটার অ্যাকটিভিস্ট নূনা আফরোজ লিখেছেন, ‘হৃদয় থেকে মুছে ফেলার আছে সাধ্য কার?’
গায়িকা শ্রাবণী সায়ন্তনী লিখেছেন, ‘সব ইতিহাস কি ভুল ছিল? শোক প্রকাশের স্বাধীনতা নেই? এই স্বাধীনতাটাই কি আমরা চেয়েছিলাম! বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই সকল শহীদদের প্রতি।’
নির্মাতা মুরাদ পারভেজ লিখেছেন, ‘আপনার লাশ অনেক ভারি, এ জাতি বইতে পারেনা.. শ্রদ্ধা।’
এছাড়া সাইমন সাদিক, কুসুম শিকদার, আমান রেজা, সুষমা সরকার, পিয়া জান্নাতুল, শ্রাবণ্য তৌহিদা, সূচনা আজাদ, প্রীতি দত্ত, এসএ হক অলিক, আনন জামানসহ অনেক তারকা, শিল্পী, কলা কুশলীরা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।