বন্যার বয়ানে বন্যা পরিস্থিতি-পরিণতি ও নতুন সম্ভাবনা

  • মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বন্যা মির্জা । ছবি: নূর এ আলম

বন্যা মির্জা । ছবি: নূর এ আলম

মেধাবী অভিনেত্রী বন্যা মির্জা বরাবরই সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন। তেমনি দেশের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি এবং এর পরিণতি নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য দিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

তাতে যেমন উঠে এসেছে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কথা, তেমনি এই বন্যা শেষে তার রেশ কিভাবে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে সে কথাও বলেছেন বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে। এমনকি বন্যার এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের মানুষের ভেতরের উৎকর্ষতা তাকে আরও আশাবাদী করেছে। সমালোচকদের এক হাত নিতেও ভোলেননি তিনি।

বিজ্ঞাপন

বন্যা মির্জা লিখেছেন, ‘আমাদের বাড়িটা মোহাম্মদপুর এলাকায়। যদিও এটা আসলে গরিবের এলাকাই ছিলো বা আছে, তবু আমার জন্যও এখন এই এলাকায় থাকা সহজ না। সব কিছুর উচ্চমূল্য এখানেও। এখানে বাজার থেকে পথের উপর যা যা লোকজন বেচতে আসে তারা এ এলাকার লোকজন, গরিব মানুষ। কারো জন্যই কিছু সহজ নেই। আর আমাদের মতো মানুষেরা তাদের ঠেলে ঠেলতে আরো নিচের দিকে নিয়ে গেছে। এই এলাকায় অনেক রিক্সার গ্যারেজ আর সেখানে অনেক রিক্সা শ্রমিক থাকেন। একটা বেশ বড় পরিসরের রিক্সা থাকে ও মাচা করে সারি সারি একটা জায়গাতে তারা ঘুমান সারাদিন রিক্সা চালিয়ে। যাদের পরিবার গ্রামে থাকে। অনেকে যে পরিবার নিয়ে কোন বস্তি এলাকায় থাকেন না তা না।’

বন্যা মির্জা । ছবি: নূর এ আলম

বন্যার প্রশ্ন, এরা কোথা থেকে কেন আসে জানেন?

বিজ্ঞাপন

উত্তর তিনি নিজেই নিয়েছেন, ‘এরা আসে প্রতিবার বন্যায় যাদের সব চলে যায়! জমি দখল হয়ে যায় যখন ফিরে গিয়ে দেখে আর কিছু নেই। তখন তারা ঢাকা আসেন, হয় রিক্সা চালাতে নয় অন্য কিছু করে। গার্মেন্ট বা অন্য কোন চাকরিচ্যুত হয়ে অনেকেই রিক্সা চালিয়ে সংসার চালান। হয়তো কোনদিন আর বাড়ি যাননি। তাদের পরিবার তাদের এই দুর্দশার কথা জানেন না অনেকেই। ঐ এলাকায় কিছু মানুষের পেশা মুচি। না, তাদের এটা বংশ পরম্পরার পেশা না। তারা কিছু না পেয়ে এই কাজ করেন। তারা সেটা পরিবারের কাছে লুকান। কারণ তাদের সন্তান কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যলয়ে পড়েন। তারা তাদের সন্তানের সম্মানের কথা ভাবেন। নিজের সম্মানের কথা ভাবেন। কেউ বা সিজনাল ফল বিক্রেতা। যে যা পান তাই করেন পেশা হিসেবে। এটা কেবল আমি আমার বাড়ির আশেপাশের মানুষের কথা বলছি। আমি তাদের চিনি। তারা আমাকে চেনেন। এলাকার মানুষ হিসেবে। কত কথা হয়! তাদের পরিবার নিয়ে। দুঃখ নিয়ে। তরমুজ বিক্রেতার মেয়ে পড়েন ঢাকা মেডিকেলে! কি করে বলবেন মেয়েকে তিনি কি করেন! একসময় বিদেশে ছিলেন, অসুখ নিয়ে ফিরতে হয়েছে! আর যেতে পারেননি! কি করবেন?’

বন্যা মির্জা । ছবি: নূর এ আলম

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বন্যা মির্জা লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশে এখনো প্রতিবছর বন্যা হয়। আমরা তার খবর রাখি না! বন্যায় এমনকি সাধারণ বর্ষাতে পাহাড়ে ভূমি ধ্বস হয়। কতবার এমন ঘটেছে! তার খবর তো আমরা লক্ষ্য করি না! এ বছরও দু’মাস আগেই সিলেটের দিকে বন্যার পানি বিপদসীমার উপর ছিলো। তারপরই আবার এই অকস্মাৎ বন্যা! এই বন্যাও অতিবর্ষণের কারণে।

‘ভারতে গোমতী নদীর উপর একটি ড্যাম রয়েছে এবং চট্টগ্রামের কাপ্তাইতেও একটি ড্যাম রয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথেই এ ড্যামগুলো পূর্ণ করা হয়, কারণ যত বেশি পানি সংরক্ষণ করা যাবে, তত বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তবে বর্ষার শেষ দিকে যদি বৃষ্টি হয়, তখন ড্যামগুলো আর পানি ধরে রাখতে পারে না। গোমতী নদীর অববাহিকায় ড্যামটি অবস্থিত। এর অর্থ হলো এ ড্যামের কারণে ফেনী, নোয়াখালী কিংবা চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে বন্যা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু গতকালের পত্রিকা থেকে আমি জেনেছি, এসব এলাকায় ও ত্রিপুরায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর এ অতি বৃষ্টির কারণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া একটি নিম্নচাপ। তবে এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। ( অধ্যাপক ড. আইনুন নাহার নিশাত)’’

বন্যা মির্জা । ছবি: নূর এ আলম

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মানুষের আচরন বন্যা মির্জাকে আশাবাদী করে তুলেছে। একইসঙ্গে কিছু মানুষের কারণে অকারণে সমালোচনা করার মানসিকতাকে ধিক্কার দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। তিনি লিখেছেন, ‘এবারের চিত্র একেবারেই আলাদা। সবাই মিলে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেই চেষ্টার এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। অনেকে এর ভিতরের ত্রাণকাজ ঠিকমতো হচ্ছে না বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন! আপনারাও জানেন না যে এইবার বেশি বন্যা কেন হলো? আর আপনারাও কেন এমন সব তথ্য দিচ্ছেন যাতে মনে হয় কেউ সহায়তা পাচ্ছেন না! তো আপনারা কি করছেন? আবহাওয়ার বৃষ্টির কথা জানলে কেন সতর্ক বার্তা পেলাম না আমরা? এই তথ্য তো অধিকার আমাদের! কই সে কথা তো কেউ বলছেন না? আপনারা কোনদিন দেখেননি এমন করে কেউ কোনদিন দলগত কাজ করে! দেখেননি, জানেনও না। তবু কথা বলবেন!’

বন্যা মির্জা । ছবি: নূর এ আলম

বন্যা আরও লিখেছেন, ‘দেশ কেবল কোন ভূখণ্ডের নাম না। দেশ মানে মানুষ। মানুষ মরলে দেশ বাঁচে না। মানুষ মরলে দেশ কিছু না। অতো বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় সামলানো আমাদের মতো দেশের মানুষের পক্ষে একটা অসম্ভব কাজ। সেই অসম্ভব কাজ করছেন সারা দেশের মানুষ এক হয়ে। সেখানেও দোষ খুঁজতে হয়? কেমন মানুষ আপনারা?’

বন্যা মির্জা । ছবি: নূর এ আলম

শুধু দেশের খেটে খাওয়া মানুষই নয়, বন্যা মির্জার লেখায় উঠে এসেছে প্রবাসী শ্রমিকের কথাও, ‘বাংলাদেশের কৃষক বাঁচলে আমরাও বাঁচবো। বাংলাদেশের শ্রমিক বাঁচলে আমরাও বাঁচবো। এর বাইরে কিছু নেই। তাই দেশ মানে মানুষ। বিদেশের মাটিতে বসে কত শ্রমিক তাদের তিল কিল করে গড়ে তোলা ঘর ভাঙতে দেখছে সেদিকে তাকান। আপনি বা আমার মতো কোন মানুষের শ্রমে তত চলে না দেশ যত শ্রমিক মানুষের শ্রমে চলে। এখনো।’