খালেদাকে হত্যাচেষ্টা মামলা নিয়ে মুখ খুললেন আসামি জয়
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাড়ি বহরে হামলার মামলায় আসামি হয়েছেন শোবিজের আলোচিত সমালোচিত উপস্থাপক শাহরিয়ার নাযিম জয়।
এরপর থেকেই তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সেই মামলা নিয়ে মুখ খুললেন জয়।
গতকাল নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া একটি ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমার নামে মামলা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার হত্যাচেষ্টার মামলা। যেখানে আমাকে আসামি করা হয়েছে। আমি মামলার এজাহার পড়েছি, যেখানে লেখা আছে, ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টায় অনেকের সঙ্গে আমিও ছিলাম। বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িতে হামলা করেছি, তাকে হত্যার চেষ্টা করেছি। খুব দুঃখ পেয়েছি। জীবনে কখনো কারো গায়ে হাত দেওয়ার সাহস পাইনি। কারো সঙ্গে ঝগড়া বিবাদেও যাইনি। সেখানে এমন একটি ঘটনায় আমি মর্মাহত। খুবই কষ্ট পেয়েছি। আমার পরিবারের মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েছে।’
সেই ভিডিওতে জয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়কের বার্তাও তুলে ধরেন। জয় বলেন, ‘‘একজন নারী সমন্বয়কের কাছে জানতে চেয়েছিলাম শিল্পীদের ভবিষ্যত করণীয় কী বলে আপনি মনে করেন। জবাবে ওই সমন্বয়ক আমাকে বলেছেন, ‘তিনি খুব সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, আপনাদের মাঝে অনেক শিল্পী রয়েছেন যারা অন্যায় করেছেন। আন্দোলনের সময় একে অন্য খাতে প্রবাহিত করার জন্য অনেক রকম পোস্ট করেছেন। এই আন্দোলনকে থামানোর, দমানোর চেষ্টা করেছেন। সরকারকে সহযোগিতা করেছেন সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘আপনারা অনেকেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে গিয়ে কেঁদেছেন। অথচ শত শত হাজার হাজার স্টুডেন্ট রাস্তায় গুলি খেয়ে মারা গেছেন, কত মায়ের কোল খালি হয়েছে। অনেকেই তা বোঝেনি, সরকারের চামচামি করেছেন। আমরা জানি সবাই তা করেনি। অনেকে চুপ ছিল, অনেকে মাঠে নেমেছে। একশ্রেণির শিল্পীদের কারণে সব শিল্পী সবসময় আপনারা মানুষের তোপের মুখে থাকবেন, ঘৃণার দৃষ্টিতে থাকবেন।’’
জয় তাকে প্রশ্ন করেন, তাহলে করণীয় কী? জবাবে ওই সমন্বয়ক বলেন, ‘আপনারা এককভাবে বা সাংগঠনিকভাবে জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। ক্ষমা চান। কিংবা বিজ্ঞপ্তি দেন, তাহলে মানুষ আপনাদের ক্ষমা করে দেবে। ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আপনাদের আসলে আর কোনো পথ নেই। যে ইমেজ নষ্ট হয়েছে, সেটা ফিরে পেতে ক্ষমার বিকল্প কিছু নেই। কারণ আপনারা সেই অন্যায়কারী নন যাদের সরাসরি জেল-জরিমানা হবে। যারা এমপি-মন্ত্রী, তাদের বিষয়টা আলাদা। রাজনৈতিক আদর্শ থাকতে পারে। যারা ছাত্র হত্যার ইন্ধনদাতা হিসেবে কাজ করেছে, তারা কীভাবে ক্ষমা ছাড়া এই জাতির কাছে মুখ দেখাবে।’
ওই সমন্বয়কের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জয় বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে তার কথাটা যুক্তিযুক্ত। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করে নতুন বাংলাদেশে আমাদের একটি স্টেটমেন্ট আসা উচিত। আমি সেই ক্ষমতা রাখি না। দল যে কেউ করতে পারেন, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে যারা ছাত্রদের বিপক্ষে ফ্রন্ট লাইনার ছিলেন, তাদের উচিত জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। এ ছাড়া কোনো উপায় নাই। আমি কোনো অন্যায় করিনি, আমি ছাত্রছাত্রীদের বিপক্ষে কখনই ছিলাম না। আমি চুপচাপ ছিলাম। বুদ্ধিদীপ্ত স্ট্যাটাস দেওয়ার চেষ্টা করেছি, যে স্ট্যাটাসে সরকারকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছিল, দাবি মেনে নেন।’
বিগত সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব থাকলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নীরব ছিলেন তিনি। ফলে বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোপের মুখে পড়ছেন তিনি। তাই সেই নারী সমন্বয়কের পরামর্শ মতো তিনি ওই ভিডিওবার্তায় ছাত্র আন্দোলনে নিশ্চুপ থাকা এবং কোনো সক্রিয় ভূমিকা না রাখায় জাতির কাছে নিঃশর্তে ক্ষমা চেয়েছেন। পাশাপাশি ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে একজন শিল্পীর জায়গা থেকে নিজের অবস্থানও পরিষ্কার করেন এই অভিনেতা।
জয় বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা না রাখতে পারার জন্য আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাই জাতির কাছে। ক্ষমার চেয়ে বড় গুণ আর কিছু নেই। আপনারা নিশ্চয়ই আমাকে ক্ষমা করবেন। সব শিল্পীর উচিত তার অবস্থান পরিষ্কার করা।