আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বরাবরই নিজের অবস্থানের ব্যাপারে পরিষ্কার। যে কোন ইস্যুতে তার নিজস্ব মত প্রকাশ করেন তার সিনেমা, কলাম কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখার মাধ্যমে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও একেবারে প্রাথমিক পরিস্থিতি থেকে সরব ছিলেন তিনি। রাজপথে না মানলেও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দাঁড়িয়েছেন ছাত্রদের পাশে, যখন সত্যি সত্যি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাহস ও অনুপ্রেরণার দরকরা ছিলো।
বিজ্ঞাপন
ফারুকী একের পর এক হাসিনা সরকারের নানা কৃতকর্ম নিয়ে লিখেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল তিনি কিছু স্ক্রিনশট প্রকাশ করেন। তাতে জানা যায়, আওয়ামীপন্থি শতাধিক শিল্পীর একটি ওয়াটস অ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়েছিলো আন্দোলনের সময়। ‘আলো আসবেই’ নামের সেই গ্রুপে ফারুকীকে তিব্র কটাক্ষ করার পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে নানা কথোপকথন রয়েছে।
ফারুকী লেখেন, ‘সহকর্মী এবং শিল্পের লোকেরা যারা অত্যাচারের সাথে সহযোগী হিসাবে কাজ করেছিল এবং আমার সম্পর্কে নোংরা শব্দ ব্যবহার করেছিল তাদের ফাঁস হওয়া স্ক্রিনশটগুলির উল্লেখ করছি এবং সম্ভবত যদি অত্যাচারী বেঁচে যায় তবে আমাকে এবং তিশাকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমার ব্যক্তিগত নিরাময় উপায় ‘ভুলে যাওয়া’! যাই হোক, সরকারের উচিত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা। ১৪৬টি স্ক্রিনশট পাওয়া যাচ্ছে। যারা এই আন্দোলনে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক উস্কানি দিয়েছে তাদের উচিত তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনা!’
বিজ্ঞাপন
এই বিষয়টি দু’দিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এমন প্রেক্ষিতে ফারুকী আজ আরেকটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এটা নিশ্চয়ই বেদনার যে আমাদের দেশে শিল্পীর সাইন বোর্ড নিয়ে এমন লোকজন ঘুরে বেড়াতো (আওয়ামীপন্থি শিল্পীদের উদ্দেশ্যে) যারা গণহত্যায় প্রত্যক্ষ উস্কানিদাতা অথবা কেউ কেউ নিরব সমর্থক ছিলো। এরা শুধু শিল্পী হিসাবে না, মানুষ হিসাবেও নীচু প্রকৃতির। একাত্তরে জন্ম নিলে এরা রাজাকারের দায়িত্ব পালন করতো। ফলে এদের এ যুগের রাজাকার বলতে পারেন। নিশ্চয়ই এদের বিচার হবে গণহত্যায় সমর্থন এবং উস্কানী দেয়ার অপরাধে।’
ফারুকী আরও লিখেছেন, ‘কিন্তু আশার দিকটা আপনাদের বলি। দেখবেন এই গ্রুপের বেশিরভাগই আসলে কোনো শিল্পচর্চার সাথে সেই অর্থে জড়িত না। আমাদের মেইনস্ট্রিম (মানে টেলিভিশন, ওটিটি এবং ফিল্মে যারা প্রধান শিল্পী; তথাকথিত এফডিসি বোঝানো হয়নি মেইনস্ট্রিম শব্দটা দিয়ে) অভিনয়শিল্পী বা ফিল্মমেকারদের কেউই এদের সাথে নাই। এরাই আমাদের প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার।’
স্থপতি ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা এনামুল করিম নির্ঝরের কথা ও সুরে গাইলেন দেশের প্রখ্যাত তিন তারকা সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ, বাপ্পা মজুমদার ও সায়ান চৌধুরী অর্ণব। তাদের গানগুলো প্রকাশিত হতে যাচ্ছে বাংলাভাষায় অন্যতম বৃহৎ মৌলিক গানের সংকলন ‘যেটা আমাদের নিজের মতোন’-এ।
চলতি বছরের ৮ জুন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে শিল্পী, সাংবাদিক এবং বিশিষ্ট গুণীজনের উপস্থিতিতে ৬৩ গানের এ সংকলনের প্রকাশযাত্রা শুরু করেন নির্ঝর। গানগুলো তৈরি ও প্রকাশ করছে ইকেএনসি (এক নির্ঝর কোলাবরেশানস) ও গানশালা। ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে ৩৫টি গান। বছরজুড়ে গান প্রকাশের এই যাত্রায় এবার দেশিয় সংগীতের এই তিন জনপ্রিয় তারকা শিল্পীর গানও শোনা যাবে।
প্রকাশিত ভিন্নধর্মী গানগুলো ইতিমধ্যেই সমাদৃত হয়েছে শ্রোতামহলে। শুধু বড়দের নয়, শিশুদের কণ্ঠে ‘অ তে অজগর আসবে কেন তেড়ে’, ‘কোনটা বড়দের’ কিংবা ‘বাঘ বলে মিয়াঁও’-এর মতো গানগুলোও প্রশংসিত হয়েছে শ্রোতাদের কাছে।
উদ্বোধনী আয়োজনে প্রকাশিত হয় রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে সংকলনের প্রথম গানটি। এরপর প্রকাশিত গানগুলোয় কণ্ঠ দিয়েছেন ফাহমিদা নবী, সামিনা চৌধুরী, শফি মণ্ডল, নবনীতা চৌধুরী, কোনাল, সভ্যতাসহ অনেকেই। সংগীতসংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিটি গানের কথাই চিন্তার দুয়ার খুলে দিচ্ছে সকল বয়সী শ্রোতাদের।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় এনামুল করিম নির্ঝর তার ‘নয় বছরের বড়’ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে স্থাপত্য, চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত এবং অন্যান্য সৃজনশীল- সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে নয়টি চলচ্চিত্রের মধ্যে পাঁচটির নির্মাণ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। বছরজুড়ে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে সংকলনটির গানগুলো।
শুধু গান প্রকাশই নয়, সংকলনটির মধ্য দিয়ে সঙ্গীত মাধ্যমের পেশাজীবিদের লড়াইয়ের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছেও যুক্ত ছিল নির্ঝরের। তাই প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের পাশপাশি নবীন শিল্পীদেরও তিনি এ সংকলনে যুক্ত করেছেন। পাশাপাশি, নবীন ও প্রবীণ শিল্পীদের মধ্যে একটা আন্তরিকতা নির্মাণের প্রয়োজনও তিনি অনুভব করেছেন।
এনামুল করিম নির্ঝর বলেন, ‘এই ৬৩টি গানের মধ্যে ১০ জন শিল্পী খুব জনপ্রিয়, ১০ জন কিছুটা পরিচিত, বাকি ১০ জন্য হয়তো ভালো গান গায় কিন্তু তেমনভাবে পরিচিতি পায় নাই কিংবা কেউ কেউ শিশু শিল্পী। সবাইকে একসাথে করার মানে হচ্ছে একটা স্মৃতি, অনুপ্রেরণা এবং নতুন যোগসূত্র তৈরি করা। এর মাধ্যমে একটা সম্ভাবনা তৈরি হলেও হতে পারে। এই ৬৩ টা গানের মাধ্যমে অন্তত একটা স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখার চেষ্টা ছিলো সব সময়; কারণ এটা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেব করা হচ্ছে।’
‘যেটা আমাদের নিজের মতোন’-প্রকাশিত হচ্ছে গানশালা- ইকেএনসির ইউটিউব চ্যানেলে। সংকলনটিতে উল্লেখিত শিল্পীরা ছাড়াও আরও গান গেয়েছেন সুজিত মোস্তফা, লাবিক কামাল গৌরব, তানভীর আলম সজীব, সুনিধি নায়েক, সভ্যতা, ফারহিন খান জয়িতা, সাগর দেওয়ানসহ মোট ৫৪ জন তরুণ ও প্রতিষ্ঠিত শিল্পী। গানগুলোর সংগীতায়োজন করেছেন ১২ জন তরুণ সঙ্গীত পরিচালক।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে গানশালা থেকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মৌলিক গানের সংকলন এক নির্ঝরের গান প্রকাশিত হয় যেখানে ১০১টি গান সন্নিবেশিত ছিল।
আরও উল্লেখ্য এই যে, ব্যক্তিগত মেধা ও প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতার পারস্পরিক ঐক্যচর্চা হিসেবে ইকেএনসি (এক নির্ঝর কোলাবরেশানস) বিভিন্ন সৃজনশীল মাধ্যমে তরুণ পেশাজীবীদের নিয়ে নিরলস কাজ করে চলেছে। করপোরেট সোশ্যাল রেস্পন্সিবিলিটি (সিএসআর) প্রক্রিয়াকে আরো অনুপ্রাণিত করতে এনামুল করিম নির্ঝর তার ইন্টেলেকচুয়াল সোশ্যাল রেস্পন্সিবিলিটির (আইএসআর) মাধ্যমে নিঃস্বার্থভাবে নিজের মেধা (গানের কথা ও সুর) বিনিয়োগ করছেন। এই প্রকল্পে সিএসআর ফান্ডের সহায়তা নিয়ে গানশালার সাথে আছে স্বনামধন্য সিটি গ্রুপ।
ভারত সরকারের আমন্ত্রণে দেশটির মর্যাদাপূর্ণ ‘বালি যাত্রা উৎসব ২০২৪’ মাতালেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য নৃত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘কল্পতরু’র শিল্পীরা। সাংস্কৃতিক কূটনীতির অনবদ্য প্রয়াসের অংশ হিসাবে ‘কল্পতরু’র নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয় এই উৎসবে।
প্রতি বছর ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের ঐতিহাসিক শহর কটকে অনুষ্ঠিত উৎসবটিকে এশিয়ার বৃহত্তম উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৫-২২ নভেম্বর (২০২৪) পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৭ দিনের এই উৎসবে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা এবং স্লোভাকিয়ার বিখ্যাত সব সাংস্কৃতিক দল অংশ নেয়। উড়িষ্যা রাজ্য সরকারের আতিথ্যে উৎসবে অংশ নেয় বাংলাদেশের নৃত্যদল কল্পতরু।
উড়িষ্যার ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরে বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক দল পৌছালে তাদের ঐতিহ্যবাহী প্রথায় রাজসিক অভ্যর্থনা জানানো হয়। উৎসবে যোগ দিয়ে ‘কল্পতরু’ নৃত্য বিদ্যালয়ের ৯ জন শিল্পী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী গানের আবহে মনোমুগ্ধকর নাচ পরিবেশন করেন। এছাড়াও উৎসবে আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ ‘লাঠিখেলা’ এবং ‘রায়বেশে’ পরিবেশনা আয়োজনে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
‘বালি যাত্রা’ উৎসব দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। উৎসবটি ভারত ও বাংলাদেশের অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও নিবিড় করে তুলেছে বলেই মনে করেন এর উদ্যোক্তারা।
উৎসবে যোগ দিয়ে নিজের উচ্ছ্বসিত অনুভূতি তুলে ধরে ‘কল্পতরু’র অধ্যক্ষ ড. লুবনা মারিয়াম বলেন,‘ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক গভীর ও বহুমুখী। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু তা আমাদের সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করতে পারে না।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বালি উৎসবে বাংলাদেশ দলের অংশগ্রহণকে ‘দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিদ্যমান শক্তিশালী সম্পর্কের এক অনন্য দৃষ্টান্ত এবং যৌথ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার প্রতিফলন’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা রাজীব, কালা আজিজ, মুকুল তালুকদার, মতিসহ অনেকেই মারা গেছেন নভেম্বর মাসে। তাদের স্মরণে আজ শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এই মিলাদে অংশ নেন সমিতির শতাধিক শিল্পী। আজ বাদ আসর শিল্পী সমিতির প্রাঙ্গণে এফডিসির মসজিদের ইমাম এই মিলাদ পড়ান।
এ সময় শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর প্রয়াত শিল্পীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া চেয়েছেন। সভাপতি ছাড়াও এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন সহ-সাধারণ সম্পাদক আরমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আলেকজান্ডার বো, দফতর ও প্রচার সম্পাদক জ্যাকি আলমগীর এবং কোষাধ্যক্ষ কমল, কার্যনির্বাহী সদস্য সুব্রত, চুন্নু, রিয়ানা পারভিন পলি, সনি রহমান এবং চিত্রনায়িকা রুমানা ইসলাম মুক্তি প্রমুখ।
দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা বেশ লম্বা সময় পর্দায় নেই। এখনকার ব্যস্ততা, নতুন কাজের পরিকল্পনা, সংসার ভাঙার গুঞ্জন- সব নিয়ে অকপটে কথা বলেছেন বার্তা২৪.কমের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসিদ রণ
মাসিদ রণ: দীর্ঘদিন পর্দায় নেই আপনি। কারণ কী?
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা: বিশেষ কোনো কারণ নেই। দেশ একটা বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেলো। সঙ্গত কারণে সব সেক্টরের কাজের গতিই স্লো হয়ে গিয়েছিলো। এখন আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হচ্ছে। আমার কাছেও কিছু কাজের প্রস্তাব এসেছে। শুনেছি গত বছরে আমার করা ওয়েব সিরিজ ‘মাইসেলফ অ্যালেন স্বপন’-এর নতুন সিজন নির্মাণ হবে। তবে কোনটাই এ বছর আর করা হবে না। কারণ ডিসেম্বর জুড়েই আমি চাকরীসূত্রে ব্রাকের কাজে দেশের বাইরে থাকবো।
মাসিদ রণ: নতুন বছর নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা: সত্যি বলতে নতুন বছর নিয়ে অনেক প্রত্যাশা আমার। নতুন বছরে বেশকিছু কাজ হবে। সবকিছুতেই নতুন নতুন পরিকল্পনা যোগ হবে। দেখা যাক কী হয়।
মাসিদ রণ: কলকাতাতেও নতুন কোন কাজের খবর আছে?
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা: না, কলকাতায় নতুন কাজে আর যুক্ত হইনি। সর্বশেষ গত ঈদে কলকাতায় গিয়েছিলাম। সেখানে না গিয়ে কাজ ফাইনাল করা ঠিক না। তবে সেখানে আমার একটি ছবি এখনো মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
মাসিদ রণ: অনেকদিন কলকাতা যাচ্ছেন না। সবচেয়ে কী মিস করেন সেখানে?
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা: কলকাতায় আমি সবচেয়ে বেশি সময় থেকেছি লকডাউনে। সে সময় তো খুব একটা বাইরে বের হওয়া কিংবা কাজ করার উপায় ছিলো না। তাই ঘরের মধ্যেই নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য ছাদে ছোট্ট করে বাগান করা শুরু করি। আস্তে আস্তে সেই বাগানটিই বিশাল হয়ে যায়। কলকাতার কী মিস করি বলতে গেলে সবচেয়ে আগে নিজের হাতে গড়া সেই বাগানের কথাই আসবে।
মাসিদ রণ: সৃজিত মুখার্জির সঙ্গে সংসারজীবন ভালো যাচ্ছে না, সম্প্রতি এমন খবর এসেছে গণমাধ্যমে। বিষয়টি আপনি পরিষ্কার করলে তো আর দর্শক মনে এ নিয়ে কোন দ্বিধা থাকে না...
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা: না, সেটা চাই না। শোবিজের মানুষদের প্রতি দর্শকের আগ্রহ থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। সেই আগ্রহ আরও বেড়ে যায় যখন কোন কৌতুহল তৈরি হয়। তাই আমি সব কৌতুহল মেটাতে চাই না। সব যদি বলেই দিই তাহলে আর দর্শকের আগ্রহ থাকবে কিভাবে! তারা যেভাবে খুশি ভাবতে থাকুক, সময়ই সব বলে দেবে। তাছাড়া আমার জীবনের কোন কথা সবাইকে বলব আর কোনটি বলব না- তার অধিকার তো আমি রাখি, তাই না? সবটা বলতে হবে কেন?
মাসিদ রণ: দর্শকের আগ্রহের কথা বলছিলেন। সেটা আপনার ওপর প্রবল, তা অন্তত সোশ্যাল মিডিয়া দেখলে বোঝা যায়। এর ফলে অনেক সময় অহেতুক কটাক্ষের শিকারও হতে হয় আপনাকে। বিষয়টি কিভাবে দেখেন?
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা: এই বিষয়ে আগেও কথা বলেছি নানা জায়গায়। আসলে শুরুতে একটু খারাপ লাগতো। কিন্তু এখন আর এগুলো আমাকে স্পর্শ করে না। কারণ, আমি বুঝতে শিখে গেছি যে, যারা আমাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরনের নেতিবাচক কথা বলে বেড়ায় তারা তো কেউ আমাকে বাস্তব জীবনে চেনে না। তারা হয়তো পত্র-পত্রিকা পড়ে কিংবা কারও মুখে শুনে আমার সম্পর্কে একটা ধারণা পোষণ করে।
কিন্তু আমি আসলেই কেমন তার খবর তারা না পাওয়াই স্বাভাবিক। আর যারা আমার সম্পর্কে সত্যি কিছু জানে না বা যারা আমার জীবনের সঙ্গে কোনভাবেই জড়িত নয় তারা কী বলল তাতে অহেতুক নিজেকে কষ্ট দিয়ে তো লাভ নেই। ফলে আমি এখন বলি, আপনাদের যার যা খুশি আমাকে নিয়ে বলুন, ভাবুন- আমার তাতে কিছু আসে যায় না। আমি জানি আমি কী করছি বা আমি কেমন মানুষ।
মাসিদ রণ: তারপরও শোবিজ তারকারাও তো রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ। তাদেরও তো কোন কোন সময় হতাশা কাজ করে। আপনার ক্ষেত্রে বিষয়টি কেমন? কিভাবেই বা তা থেকে বের হয়ে আসেন?
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা: হ্যাঁ, সেটা ঠিক বলেছেন। আশেপাশের মানুষের জন্য কিংবা নিজের কিছু একান্ত কারণেও মাঝেমধ্যে লো ফিল হয়। একটি উদাহরণ দিতে পারি, আমি লকডাউনে কলকাতায় ছিলাম পুরোটা সময়। এর আগে সেখানে হয়তো দু-চার দিনের জন্য যাওয়া হলেও আমার কোন বন্ধু কিংবা তেমন পরিচিত কেউ ছিলো না। বৈবাহিকসূত্রে গিয়েছিলাম, এরপর আস্তে আস্তে নিজের একটা জগৎ সেখানেও তৈরি করে নিয়েছিলাম। তবে ওই সময় সত্যিই আমার খুব হতাশ লাগতো। লকডাউনে কলকাতার দিনগুলো হতাশার ছিলো- এটা বলতেই পারি। আমি তখন নিজেকে ঘরের মধ্যেই নানা কাজে ব্যস্ত রাখতাম। ওই সময়ই বাগান করার সিদ্ধান্ত নিই।
মাসিদ রণ: আবারও কাজের প্রসঙ্গে আসি। টিভি নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়েই আপনি তারকাখ্যাতি পান। সেখানে আপনার ইমেজ ছিলো পাশের বাড়ির মেয়ে। এখন কি সেই ইমেজ ভাঙার সংগ্রাম চলছে?
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা: আপনি নিশ্চয়ই আমার শেষ কিছু কাজ দেখে এ কথা বলছেন। যেমন ‘মাইসেলফ অ্যালেন স্বপন’-এর শায়লা, ‘মন্টু পাইলট’-এর বারবণিতা, ‘মায়া’র মায়াজাল সৃষ্টিকারী মায়া কিংবা ‘কাজলরেখা’র কঙ্কন দাসি। এই প্রতিটি চরিত্রই ভীষণ আলাদা, প্রত্যেকটি চরিত্রের মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্ব ফুটে ওঠে পর্দায়।
আসলে ইমেজ ভাঙা কি না বলতে পারবো না, কিন্তু এটা সত্যি যে সব শিল্পীর মতো আমিও চাই নানা ধরণের চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করতে। এমন চরিত্র করতে চাই যা আমাকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে নতুন কিছু করতে। যেমন কঙ্কন দাসি চরিত্রের মতো একটি নেতিবাচক চরিত্র যে আমি করতে পারব সেটা আমি তো ভাবিইনি, ছবির নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিমও পুরোটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বলে মনে হয় না। কিন্তু চরিত্রটি করার পর তো সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে সমালোচক, এমনকি আমাদের ইন্ডাস্ট্রির লেজেন্ডারি তারকাদের কাছ থেকেও প্রশংসা পেয়েছি।
মাসিদ রণ: টিভি নাটকে আর ফিরবেন না?
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা: সর্বশেষ চার বছর আগে টিভি নাটকে কাজ করেছি। এরপর অনেক নাটকের প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু যে ধরনের চরিত্র কিংবা গল্প পাই তাতে দেখা যায়, ওগুলো আমি আগেই করে ফেলেছি। নিজের কাছেই এক্সাইটিং লাগে না। তাহলে সেটি করলে দর্শক কতোটা পছন্দ করবে সে বিষয়ে তো সন্দেহ থেকেই যায়। তবে এমন না যে আমি টিভি নাটকই আর করতে চাই না। ভালো মানের কাজ আসলে অবশ্যই করব। কারণ, আমার ভক্তরা কমেন্ট বক্সে আমার কাছে সবচেয়ে যে আবদারটি করে সেটি হলো, তারা আমাকে বেশি বেশি পর্দায় দেখতে চায়। কারণ আমি তো কাজই করি বছরে দু-চারটি!
মাসিদ রণ: অভিষ্যতে ক্যারিয়ার প্ল্যান কী?
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা: আমি তো একজন পেশাগত উন্নয়নকর্মী। বাচ্চাদের ডেভেলপমেন্ট নিয়ে ব্র্যাকে কাজ করি দীর্ঘসময় ধরে। সেই কাজটি বরাবরই নিষ্ঠার সঙ্গে করি, ভবিষ্যতেও তাই করতে চাই। পিএইচডি টা যতো দ্রুত সম্ভব শেষ করতে চাই। আর অভিনয়ের ক্ষেত্রে ওই একটা কথাই বলার, নতুন কিছু করতে চাই। নয়তো সেখানে সময় দেবার ইচ্ছে নেই। তার চেয়ে অন্য অনেক কিছু করে ভালো সময় কেটে যাবে আমার।