হামলার ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে দ্রুত সমাধান দাবি নাট্যকর্মীদের
গত ১ নভেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চস্থ হচ্ছিল দেশ নাটকের ‘নিত্যপুরাণ’ প্রযোজনাটি। কিন্তু দুর্বৃত্তদের তোপের মুখে পড়ে প্রদর্শনীর মাঝপথেই তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল ৮ নভেম্বর বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির সামনে সমাবেশের ডাক দেয় বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। সমাবেশের শেষের দিকে নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ বলেন, ‘‘সমাজে যে বৈষম্য, সে বৈষম্যেরও একটা গভীরতর বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে এই ‘নিত্যপুরাণ’ নাটক।’’
তার বক্তব্য শেষ না হতেই ‘ধর, ধর’ চিৎকারে চারদিকে শোরগোল শুরু হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভবনের দিক থেকে ডিম ছুঁড়ে মারা হয়। এরপর সাধারণ জনতা দাবি করা কয়েকজন লোক স্লোগান দিয়ে বলেন, ‘নিত্যপুরাণ’ নাটক প্রদর্শনী আর হতে দেবেন না তারা। এরপর পরিস্থিতি হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছায়। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। শিল্পকলা একাডেমির প্রবেশদ্বারে অবস্থান নেন নাট্যকর্মীরা।
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রতিবাদে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সভা শেষ করব না। ভেতরে নাটক হবে, বাইরে আমরা পাহারা দেবো।’ এমন বক্তব্যে দুষ্কৃতিকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
ন্যাক্কারজনক এ হামলার প্রতিবাদ ও দেশে নিরাপদে শিল্পসংস্কৃতির প্রচারের দাবিতে আজ (৯ নভেম্বর) জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। এতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজিদ, নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী, মাসুম রেজাসহ অনেকেই।
দেশে নিরাপদে শিল্প সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ না থাকার অভিযোগ এবং নাট্যকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি অনেকগুলো প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন নাট্যকর্মী তথা গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের নেতারা। দিয়েছেন ১৫ নভেম্বরের আগে এসবের জবাব ও সমাধানের আল্টিমেটামও।
সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি নাট্যকর্মীদের প্রশ্নগুলো এমন, নাটকের মানুষ এমন কি করেছে? দুষ্কৃতকারীরা কারা? তাদের অভিযোগটা কী? সংস্কৃতিকর্মীরা কি আওয়ামী লীগের দোসর? এদেশে নিরাপদে শিল্প সংস্কৃতি চর্চা করতে পারব কি না? এমন অসংখ্য প্রশ্ন তোলা হয় জরুরি সম্মেলনে।
অভিযোগ তোলা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধেও। ফেডারেশন তথা নাট্যকর্মীরা মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ৮ নভেম্বর ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও কোনও ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। তাই অভিনয়ের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না হওয়া পর্যন্ত আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন তারা। এরপর সংগঠনটি থেকে জানানো হবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত।
দুষ্কৃতিকারীদের হামলার সুষ্ঠু তদন্তের দাবির পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা নিয়ে শিল্পচর্চার পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে দ্রুত সমাধান চান তারা।