অল্প বাজেটের সিনেমা করে সুনাম নষ্ট করতে চাই না: হৃদি শেখ

  • মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হৃদি শেখ । ছবি: নূর এ আলম

হৃদি শেখ । ছবি: নূর এ আলম

দেশের তরুণ নৃত্যশিল্পীদের মধ্যে প্রসিদ্ধ নাম হৃদি শেখ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও কুড়িয়েছেন সুনাম। নিয়মিত নাচভিত্তিক কনটেন্ট তৈরি করে আলাদা দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন। সমসাময়িক বিষয়ে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসিদ রণ

হৃদি শেখ । ছবি: নূর এ আলম

মাসিদ রণ: যেখানে দেশের অনেকেই উন্নত দেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে যেখানে রাশিয়া ছেড়ে বাংলাদেশে চলে এলেন। কোন অনুশোচনা হয় এ নিয়ে?

বিজ্ঞাপন

হৃদি শেখ: এটা ঠিক যে রাশিয়ায় আমার বেড়ে ওঠা, পড়াশুনা, বন্ধু-বান্ধব, নাচের আন্তর্জাতিক সব প্রশিক্ষণ, কর্পোরেট জব- সবটাই ছিলো। কিন্তু দেশে এসে আমার একদমই অনুশোচনা বোধ করার কোন কারণ নেই। যারা বিদেশে চলে যেতে চান তা মূলত ভালো জীবিকার জন্য। কিন্তু আমি তো আমার বাংলাদেশেই সব পাচ্ছি। আমি কি খারাপ আছি (হাহা)? তবে এটা ঠিক যে একদম বাংলাদেশে থেকে যাবো এটা শুরুতে ভাবিনি। ‘চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে’তে ২০১৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও কিন্তু আমি রাশিয়ায় আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলাম। কিন্তু কোভিডের পর থেকে দেশেই সব প্রস্তুত করে নিয়েছি।

হৃদি শেখ । ছবি: নূর এ আলম

মাসিদ রণ: সম্প্রতি আন্তর্জাতিক কনটেন্ট ক্রিয়েটর নয়েলের সঙ্গে একটি কোলাবোরেশন করেছেন যা সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণ সাড়া ফেলেছে। এর পেছনের গল্পটি কেমন ছিলো?

বিজ্ঞাপন

হৃদি শেখ: আসলে দর্শক আমাকে নানা মাধ্যম থেকে চেনেন। কেউ চেনেন ‘চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে। কেউ আবার চেনেন বলিউডভিত্তিক রিয়েলিটি শো ‘ড্যান্স প্লাস’-এর মাধ্যমে। জেন জি আবার আমার দর্শক হয়েছে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম কিংবা টিকটকের মাধ্যমে। ফলে আন্তর্জাতিক যে কোন বয়সী কনটেন্ট ক্রিয়েটর বাংলাদেশে এলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন কোলাবোরেশন করার জন্য। কোন কোন ক্ষেত্রে আমিও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তেমনি নয়েলও আমার ইন্সটাগ্রাম স্টোরিগুলো আগে থেকেই দেখতো। যেহেতু সে আমার সম্পর্কে টুকটাক জানে তাই আমি তাকে মেসেজ করে বলি যে, তুমি আমার দেশে এসেছ, যদি কোন সাহায্য লাগে বলতে পারো। অল্প সময়ের মধ্যেই সে আমাকে রিপ্লাই দেয় এবং আমরা দেখা করি। এরপর কোন প্ল্যান ছাড়াই রাস্তার মধ্যে আমরা ওই ভিডিওটি করে ফেলি।

হৃদি শেখ । ছবি: নূর এ আলম

আমাকে যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ কিছুটা হলেও চেনেন, তাই চাইলেই রাস্তায় ওভাবে নেমে পড়তে পারি না। কিন্তু নয়েলের ভিডিও’র কনসেপ্টটাই হলো একেবারে অথেনটিকভাবে সবকিছু করতে হয়। তার স্টাইলে কাজ করে ভালো লেগেছে। পরে তো সেই ভিডিও মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হয়েছে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে। বাই দ্য ওয়ে, নয়েল কিন্তু আমার নাচের স্কুলের বাচ্চাদের সঙ্গেও কনটেন্ট করেছে। সেটাও আপনারা তার আইডিতে দেখতে পাবেন।

হৃদি শেখ । ছবি: নূর এ আলম

মাসিদ রণ: সম্প্রতি ‘হলুদ হলুদ ড্যান্স’ গানে আপনার আরেকটি নাচের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে চিত্রনায়িকা দীঘি, কনটেন্ট ক্রিয়েটর কারিনা কায়সারের সঙ্গে দেখা গেছে আপনাকে...

হৃদি শেখ: হ্যাঁ। ওই ভিডিওটা করেছি গত শুক্রবার মুক্তি পাওয়া ‘৩৬ ২৪ ৩৬’ সিনেমার প্রমোশনের জন্য। ‘হলুদ হলুদ ড্যান্স’ কিন্তু ওই ছবিরই গান। দীঘি তো নাচতে পারে আমরা সবাই জানি, ও খুব সুইট। কিন্তু কারিনা এভাবে দ্রুত নাচের স্টেপগুলো তুলে ফেলতে পারবে আমি ভাবতেই পারিনি। খুব মজা হয়েছে কাজটি করে। তবে এই ভিডিওটি শুধু এজন্য করিনি যে আমার সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ফলোয়ার আছে বলে। বরং তারা জানে যে আমার সেই দক্ষতা আছে যা দিয়ে একটি মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করতে পারবো। আমি এমন কনটেন্ট ক্রিয়েটর না যে ঘরে বসে ফোনের ক্যামেরার ভিডিও করে ছেড়ে দিলাম! যারা করেন, তাদেরকে আমি ছোট করে দেখি না। আসলে একটা সফল ক্যারিয়ারের পেছনে সমৃদ্ধ ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হয়। নিজেকে বরাবরই ছাড়িয়ে যেতে হয়। সেজন্যই আমি এতো বড় ফ্লোর ভাড়া করে স্টুডিও বানিয়েছি। সম্পূর্ণ প্রফেশনাল সেট-আপ তৈরি করেছি। আমার একশ’র ওপরে স্টুডেন্ট রয়েছে যারা নিয়ম করে আমার কাছে নাচ শিখতে আসছে।

হৃদি শেখ । ছবি: নূর এ আলম

মাসিদ রণ: নানা মাধ্যমে কাজ করে সফলতা পেলেও ফিল্মের কোরিওগ্রাফিতে আপনাকে দেখা যায় নি কেন?

হৃদি শেখ: আসলে আমাদের দেশে ফিল্মের গানের বাজেট খুব কম থাকে। যে দু-একটা ছবিতে ভালো বাজেট থাকে সেখানে তারা বিদেশি কোরিওগ্রাফারকে নিয়ে নেয়। বাজেট না থাকলে আমি যতো ভালো কোরিওগ্রাফি করি না কেন, সেটা ঠিকঠাক পর্দায় ফুটে উঠবে না। তাই অল্প বাজেটের ছবিতে কাজ করে আমার এতোদিনের অর্জিত সুনাম নষ্ট করতে চাই না।

এই প্রশ্নের আরও একটা উত্তর আমার কাছে আছে। সেটি হলো, ২০২৪-এ এসে আমি কোন মাপের কোরিওগ্রাফার কিংবা আমার দক্ষতা প্রমাণের জন্য শুধুমাত্র সিনেমার গান করাটাই একমাত্র উপায় নয়। আমি নিয়মিত ভালো কনটেন্ট তৈরী করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করছি। সেটি দেখেই কিন্তু কমেন্ট বক্সে অনেকেই আমাকে সিনেমার গানে কোরিওগ্রাফি কেন করছি না সেটা জানতে চান। আমার সেই দক্ষতা না থাকলে তারা এমন প্রত্যাশা করতেন না আমাকে নিয়ে।

এছাড়া আমি কিছু মিউজিক ভিডিওর কাজ করেছি যেটা চলচ্চিত্রের অনেক গানের চেয়ে বড় বাজেটের। ফলে এখন মেধা প্রকাশের অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে। সবাই অবশ্য সেই প্ল্যাটফর্মগুলো ক্রিয়েট করতে পারেন না। আমাদের দেশে অনেক মেধাবী নাচের ছেলে মেয়ে আছে, যারা হৃদি শেখের জায়গায় অন্তত আসতে চায়। তাদেরকে সুযোগ দিতে হবে। নয়তো তাদের মেধা মানুষের কাছে পৌঁছবে কিভাবে?

হৃদি শেখ । ছবি: নূর এ আলম

মাসিদ রণ: বলিউডের ‘ভুলভুলাইয়া ৩’ ছবির ‘মেরে ঢোলনা ৩.o’ গানের কোরিওগ্রাফি ভালো লাগেনি বলে ফেসবুক পোস্ট করেছিলেন...

হৃদি শেখ: হ্যাঁ। বলিউডের কাজের মান খুবই উন্নত, তাদের কাজ দেখে আমরা অনুপ্রাণীত হই। কিন্তু সব সময় যে তাদের কাজ ভালো হবে না নয়। সেখানেও আমাদের দেশের মতো সিন্ডিকেট রয়েছে। একটা চক্র সব বড় কাজগুলো বাগিয়ে নেয়। নতুন ট্যালেন্টকে বিকশিত হতে দিতে চায় না। উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি, নোরা ফাতেহির যে বিখ্যাত গানগুলো আপনারা দেখেনে, তার কোরওগ্রাফার হিসেবে যাদের নাম প্রকাশিত হয় আসলে কিন্তু তারা কোরিওগ্রাফিগুলো করেন না। যারা আসলেই কাজগুলো করেছেন তারা আমার পরিচিত, তারাই আমাকে কথাগুলো বলেছেন।

ওহ প্রসঙ্গ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম, সেটা বলতে চাই সেটা হলো- ‘মেরে ঢোলনা ৩.o’ গানটি শ্রেয়া ঘোষাল কি দারুণ গেয়েছেন, কম্পোজিশনও দুর্দান্ত। কিন্তু কোরিওগ্রাফি আপ টু দ্য মার্ক হয়নি। যা হয়েছে অনেকেই হয়তো পছন্দ করছেন, কিন্তু এই গানটির যেহেতু আলাদা লেগেসি রয়েছে সেই অনুযায়ি আরও মারাত্মক কিছু আশা করেছিলাম। তাছাড়া যে দুই জন অভিনেত্রী পারফর্ম করেছেন তাদের মধ্যে একজনের পারফরমেন্সও আশাব্যঞ্জক নয়। আশা করি পাঠক বুঝতে পারছেন আমি কার কথা বলছি।

হৃদি শেখ । ছবি: নূর এ আলম

মাসিদ রণ: অনেক তারকার সঙ্গে আপনি কোলাবোরেশন করেছেন। কার সঙ্গে কাজ করে সবচেয়ে ভালো লেগেছে?

হৃদি শেখ: সিয়াম আহমেদ আমার ভালো বন্ধু। তার সঙ্গে বেশ আগে ‘বন্ধুরে’ মিউজিক ভিডিওটি করেছিলাম। এখনো সেই কাজটির কথা অনেকেই বলেন। সিয়ামের ভালো কাজ করার ব্যাপারে ডেডিকেশন আমাকে মুগ্ধ করেছে। এ ছাড়া যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তাদের মধ্যে বিদ্যা সিনহা মিমকে খুব ভালো লেগেছে। তিনি দেশের প্রথম সারির তারকা, কিন্তু কাজের সময় খুব আন্তরিক। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে আামদের, তাই কাজ করতে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে।

হৃদি শেখ । ছবি: নূর এ আলম

মাসিদ রণ: এমন স্বপ্ন আছে যা পূরণ হয়নি?

হৃদি শেখ: ড্যান্স প্লাসে আমি শাহরুখ খান, হৃত্বিক রোশানের সঙ্গেও স্টেজ শেয়ার করেছি। এখন স্বপ্ন দেখি শাকিরার সঙ্গে কাজ করার। কাজ করতে না পারি, অন্তত দেখা হলে বলতে চাই, আমি আপনার নাচের অনেক বড় ভক্ত। আর অর্জনের কথা বলতে গেলে, একজন বাংলাদেশি হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার স্বপ্ন দেখি। আরেকটি স্বপ্ন অবশ্য কখনোই পূরণ হবে না, সেটি হলো মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গে পারফর্ম করা!