ফারুকী যতক্ষণ ইনসাফের ওপর থাকবে ততক্ষণই সে আমার নেতা: শিবলী
দেশ ও আন্তর্জাতিক সিনেমার অঙ্গণে সাড়া ফেলা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এখন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন। সম্প্রতি তিনি এই পদে শপথ গ্রহণের পর থেকেই নেটিজেনদের বড় এক অংশ তার সমালোচনা করছে। তাকে আওয়ামী সরকারের দোসর বলে অভিহীত করেছেন অনেকেই।
এমন প্রেক্ষাপটে ফারুকীকে নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী স্ট্যাটাস দিয়েছেন এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই নজরুল ইনস্টিটিউটের দায়িত্ব পাওয়া গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলী। বলে রাখা ভালো, জুলাই আন্দোলনের একেবারে শুরু থেকেই যে ক’জন সংস্কৃতিকর্মী ছাত্রদের পাশে থেকেছেন তাদের মধ্যে মোস্তফা সয়রার ফরুকী ও লতিফুল ইসলাম শিবলী অন্যতম।
এই গীতিকবি লিখেছেন, ‘কবি নজরুল ইনস্টিটিউট হল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে, সেই অর্থে আমার দপ্তরের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা হলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। দফতর প্রধান হিসেবে গতকাল আমি আমার দফতরের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। এটাকে ফারুকী হেটারসরা দোষ হিসেবে দেখছে, অসুবিধা নেই। আমার সাথে ফারুকির সম্পর্ক ভাই ও বন্ধুর মত। এই সম্পর্ক প্রায় ২৫ বছরের পুরাতন। ফারুকির স্ত্রী তিশা ও তার ভাই ইথেন আমার ছোট ভাই-বোনের মত। তাদের বাবা মা আমাকে সন্তানতুল্য আদর করতেন। সেই ফারুকি এখন কর্মসূত্রে আমার দফতরের মন্ত্রী। এই দুই সম্পর্কের কারণে আমার কাজের ক্ষেত্রটা অনেক সহজ হবে, এটাই স্বাভাবিক।’
ফারুকীকে শিবলী এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন সেই স্ট্যাটাসে, ‘ফারুকী দোষ-গুণে মেশানো একজন মানুষ। এই মন্ত্রণালয় চালানোর যোগ্যতা তার আছে। অতীতে তার ফ্যাসিবাদের সাথে ঘেঁষাঘেসির যেমন প্রমাণ আছে, তেমনি তাদের বিরোধিতা করারও প্রমাণ আছে। আমি খুব ভাল করেই জানি আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের দের দ্বারা সে কেমন নিগৃহীত হয়েছে। জুলাইয়ের তীব্র দিনগুলিতে আমরা যখন আসহায়ের মত দেশের সেলেব্রিটি বুদ্ধিজীবীদের সমর্থনের আশায় তাকিয়ে ছিলাম, তখন ২/১ জন ছাড়া আর কাউকে আমাদের পাশে পাইনি। সেই জুলাইয়ে ২/১ জনের মধ্যে ফারুকী ছিলেন একজন। ফারুকীর সেই সময়ের স্ট্যাটাসগুলো অনেক তরুণকে সাহস জুগিয়েছে।’
ফারুকীর প্রশংসা করে শিবলী লেখেন, ‘অনেকের মত সে চুপ থাকে নি। নিশ্চিত নিরাপত্তার জীবন ফেলে ফারুকি রিস্ক নিয়েছিল। জুলাই আন্দোলন ফেইল করলে আমাদের অনেকের মত ফারুকীর পরিণতিও ভয়াবহ হত। আমি ফারুকীর জুলাইয়ের ভূমিকার জন্য তার অতীত ভুলতে রাজি আছি । নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল।’
এরপর নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন শিবলী, ‘আর এখন থেকে ভবিষ্যতের ফারুকী তো আমাদের নাগালের মধ্যেই থাকবে। আমি ইনসাফ থেকে কখনই নড়ব না ইনশাআল্লাহ। ফারুকী যতক্ষণ ইনসাফের উপর থাকবে ততক্ষণই সে আমার নেতা। ইনসাফ থেকে সরে দাঁড়ালে সবার আগে আমিই তার বিরুদ্ধে দাঁড়াব। ইনসাফের প্রশ্নে আমি কারো পরোয়া করি না। মনে রাখবেন, আমি এই কথা যার জন্য বলছি পদাধীকার বলে তিনি এখন আমার বস। এবং তিনি আমার বন্ধু তালিকায় আছেন।‘
ফারুকীর ওপর আস্থা রেখে শিবলী লিখেছেন, ‘গতকালের ছবিতে যারা আমাদের মাথার উপর শেখ মুজিবের ছবি দেখেছেন, তাদের জানার জন্য বলছি যে– ফারুকী আজ তার অফিস তথা সংস্কৃতি মন্ত্রণালায় থেকে ফ্যাসিবাদের আইকন শেখ মুজিবের ছবি সরিয়ে ফেলেছেন। সম্ভবত সচিবালয়ে এই কাজ ফারুকীই প্রথম করলেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ফারুকীর মধ্যে আমি সেই স্পিরিট দেখেছি– সে আমাদের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবে ইনশাল্লাহ। আমরা একটু অপেক্ষা করি আর তার কর্মের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি সর্বদা আপনাদের ভালো পরামর্শ তার কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য আপনাদের সাথে আছি। আমাকে ভুল বোঝার দরকার নাই।’
এই স্ট্যাটাসে নিজের দায়িত্ব নিয়ে লতিফুল ইসলাম শিবলী লিখেছেন, ‘আমার কাছে নজরুল ইনস্টিটিউট কোন চাকরির জায়গা না। নজরুল আমার সাংস্কৃতিক বিপ্লবের হাতিয়ার। যে হাতিয়ার দিয়ে আমি ফ্যাসিবাদের ন্যারেটীভের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নেমেছি। এই লড়াইয়ে আমার মত ফারুকীও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ।’